Skip to content

শনিবারের পর নেপালে ৫৯ বার ভূমিকম্প

Nepal_Earthquake2নেপালে গত শনিবার দুপুরে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত আরো ৫৯ বার ভূকম্পন (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ ধরনের আফটারশক আরো কয়েক দিন ধরেই আঘাত হানতে পারে দেশটিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইউএসজিএসের সূত্রে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, শনিবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর দেশটিতে আরো দুটি বড় ভূকম্পন হয়েছে। এর মধ্যে শনিবারে ৬ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ও রোববারে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরো একটি বড় ভূমিকম্প রয়েছে। তবে বাকি ভূমিকম্পগুলোর কোনোটির মাত্রাই রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৫-এর ওপরে ছিল না।

রয়টার্সের তথ্যমতে, নেপালে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে চার হাজারে ঠেকেছে। বহু লোক হতাহত হওয়া ছাড়াও দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে জমেছে বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসাবশেষের স্তূপ।

নেপালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন জায়গায় উদ্ধার তৎপরতার অগ্রগতি ছিল লক্ষণীয়। তবে এখনো লামজুং ও পোখরার সীমান্তবর্তী উৎপত্তিস্থলের আশপাশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। তাই দূরবর্তী ওই এলাকাগুলোর কী অবস্থা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। রয়টার্সের প্রতিবেদনে ওই সব এলাকায় আরো অনেক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনেও বলা হয়, ওই পার্বত্য গ্রামগুলোতে ক্ষতির মাত্রা রাজধানী কাঠমান্ডুকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

লামজুংয়ের পাশেই নেপালের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর একটি গোর্খা জেলা। ওই জেলার সরকারি এক কর্মকর্তা উদাব প্রসাদ রয়টার্সকে জানান, জেলার গ্রামগুলোর ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রাণহানিও হয়েছে বিস্তর। কিন্তু এখনো সেখানে কোনো সাহায্য পৌঁছায়নি। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে সহায়তার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।Nepal_Earthquake

নেপালের প্রত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বসবাস প্রায় দুই লাখ তিব্বতির। এদের অধিকাংশই দেশটিতে বসবাস করছেন অবৈধভাবে। ১৯৫৯ সালে তিব্বত চীনের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর দেশটি থেকে পালিয়ে আসা নাগরিকদের খুবই কম সংখ্যকেরই রয়েছে নেপালের নাগরিকত্ব। রাষ্ট্রহীন এসব মানুষ কোনো ধরেনর পরিচয়পত্র কিংবা পরিসংখ্যান ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে এতদিন বাস করতেন। ভূমিকম্পের ফলে ওই তিব্বতি গ্রামগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নেপালের তিব্বতীয় আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করে দোলমা ডেভেলপমেন্ট ফান্ড নামে একটি বেসরকারি সংগঠন। সংগঠনটি বিভিন্ন গ্রামের শিক্ষার্থীর বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে। সেই দোলমার চেয়ারম্যান টিম গোচার আটকা পড়েছেন প্রত্যন্ত ওই এলাকায়। রোববার তাঁর স্ত্রীর কাছে নিজের এবং সেখানকার অবস্থার বর্ণনা দিয়ে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি। সেখানে লেখা, ‘স্কুলের বাচ্চাগুলো সব হারিয়ে গেছে। এলাকার গাছপালা, বাড়িঘর সব ধসে পড়েছে। রাতে আমরা গাড়িতে ঘুমিয়েছি। সবার মধ্যে ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন আতঙ্ক।’

টিম গোচার আরো জানান, তিব্বতি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে ঠিক কত মানুষ আটকা পড়ে আছেন, তার হিসাব দেওয়া মুশকিল। এখনো ওই এলাকাগুলোতে কোনো উদ্ধার অভিযান শুরু হয়নি।

ভূমিকম্পের পর নেপালের ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এরই মধ্যে সতর্ক করেছে ইউনিসেফ। শিশুদের জন্য এ মুহূর্তে নিরাপদ পানি আর খাবার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

ভূমিকম্পের পর থেকে কাঠমান্ডুসহ নেপালের বিভিন্ন শহরে বৃষ্টির কারণে বারবার উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে। আর ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে ত্রাণ তৎপরতা।

ধারাবাহিক ভূমিকম্পের কারণে বারবার কাঠমান্ডু বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছে না বিদেশি সহায়তাগুলো।

এদিকে, ভূমিকম্পের কারণে দুদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকার পর গতকাল সোমবার ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে নেপালে আবারো বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে দেশটিতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানীয় জলের সংকট। এ ছাড়া ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালালি তেলের সংকটও রয়েছে বিধ্বস্ত দেশটিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *