Skip to content

শশীলজে এক বেলা

shoshilodge

এক দিন হাতে নিয়েই বেড়িয়ে আসতে পারেন ময়মনসিংহের জমিদারবাড়ি।

মো. জাভেদ হাকিম
রাত প্রায় দেড়টা—মাথায় চাপে বেড়ানোর ইচ্ছা। দুই বন্ধুকে ফোন দিই‍, ঘণ্টা তিনেক পর বের হবে। একজনের পিছুটান, আরেকজন প্রস্তুত। সময় বেঁধে দিই ভোর সাড়ে চারটা।

সকাল ছয়টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ি। ছুটি ময়মনসিংহের পথে, যেখানে খুশি সেখানে থামি, সুযোগ বুঝে দু-চারটা ছবি তুলি। ছুটির দিন হওয়াতে চিরচেনা যানজটের গাজীপুর সড়ক রয়েছে অনেকটাই ফাঁকা। ফোর লেনের সড়ক পেয়ে গাড়ি চলে দুরন্ত গতিতে।

ময়মনসিংহ শহরের কর্মব্যস্ত দিন শুরুর আগেই শশীলজের সামনে পৌঁছে যাই। এখানেই হ‌ুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক অয়োময়-এর শুটিং হয়েছিল। জমিদার শশীকান্ত আচার্যের প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো শশীলজ, ময়মনসিংহে ‘রাজবাড়ী’ নামেই বেশি পরিচিত। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ফুলেল সুবাসে মন জুড়িয়ে যায়। প্রথমেই নজর কাড়ে গ্রিক দেবী ভেনাসের মর্মর মূর্তিটি। অসাধারণ ভাস্কর্য!

shoshilodge2

জমিদারবাড়ির পুকুর ঘাট।

শশীলজের নিরাপত্তায় নিয়োজিত একজন আনসার সদস্য ঘুরে ঘুরে বাড়ির বিভিন্ন স্থাপনার তথ্য জানালেন। মোট নয় একর জায়গার ওপরে লালচে হলুদ রঙা ইট দিয়ে গাঁথা ১৬টি গম্বুজবিশিষ্ট দোতলা বাড়িটি। বাড়ির উঠানজুড়ে রয়েছে বাগান।

শশীলজের মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। তাঁর ৪১ বছরের রাজত্বে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ময়মনসিংহ শহর পেয়েছিল নান্দনিক সৌন্দর্য। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ভূমিকম্পে শশীলজ বিধ্বস্ত হলে মানসিকভাবে কষ্ট পান জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশীলজ নির্মাণ করেন পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। শশীলজ হয়ে ওঠে আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন।

পুকুর রয়েছে বিশাল। মার্বেল পাথর দিয়ে বাঁধানো ঘাটও আছে এই পুকুরে। বাড়ির পেছনে স্নানঘরের পাশেই রয়েছে একটি সুড়ঙ্গপথ। ধারণা করা হয়, ওই সুড়ঙ্গপথে মুক্তাগাছার বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এখানে বেশ কিছু দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন গাছগাছালি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নাগলিঙ্গম বা নেগুরা বৃক্ষ—যেটির গোটাজাতীয় ফল হাতির খাবার হিসেবে কাজে লাগত।

shoshilodge3শশীলজে টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (মহিলা) কার্যক্রম চলছে ১৯৫২ সাল থেকে। গত বছর সীমানাপ্রাচীর নির্ধারণ করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ শশীলজের সংস্কারের কাজ শুরু করে। শিগগিরই এটি সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে।

শশীলজের কিছুটা দূরেই ময়মনসিংহ জাদুঘর। মুক্তাগাছা ও গৌরীপুর জমিদারবাড়ির নানা রকম তৈজসপত্র দিয়ে জাদুঘরটি সজ্জিত। জাদুঘরে বড় আকারের হাতির মাথা, বুনো মহিষের সিং ও জমিদারদের ব্যবহার করা দুর্লভ অনেক কিছুই নজর কাড়ে।

শশীলজ এখনো দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে অনুমতি নিয়ে ভেতরটা ঘুরে দেখা যায়।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায় ময়মনসিংহ থেকে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সারা দিনই পাওয়া যায় ময়মনসিংহের বাস। এ ছাড়া ট্রেনে করেও যাওয়া যাবে ময়মনসিংহ। শহরের প্রাণকেন্দ্র জিরো পয়েন্টের পাশেই শশীলজের অবস্থান। স্থানীয় লোকজন জমিদারবাড়ি বা টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজ নামে চেনেন। সৌজন্যে: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *