Skip to content

শিক্ষার্থীরা নাম দিয়েছে ‘সুইজারল্যান্ড’

ছোট আকৃতির মেঠো পাখি। এর অন্য নাম বালুচাটা বা ধুলচাটা।

ছোট আকৃতির মেঠো পাখি। এর অন্য নাম বালুচাটা বা ধুলচাটা।

ফরিদী নুমান
ঢাকার খুব কাছে থেকে পাখির সন্ধানে আমরা মাঝে মাঝেই জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটিতে যাই। আমরা বলতে আমি, মাসুম সায়ীদ ভাই আর জাবি’র প্রাণিবিদ্যার নাজমুল হুদা রনি। রনি থাকলে দুটো বাড়তি কাজ হয়। প্রথমত: ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ সে, দ্বিতীয়ত: প্রাণীবিদ্যা’র ছাত্র হওয়ায় অনেক অচেনা পাখির নগদ বিবরণ ওর কাছ থেকে পাওয়া যায়।
সে যাক আমরা রনিদের সুইজারল্যান্ড পার হয়ে ওপারের টিলাময় ঘাসবনের ভিতর দিয়ে চলতে লাগলাম। এলাকাটা মোটমুটি নিরিবিলি। একসময় এখানে সরকারি ডেইরি ফার্ম ছিলো। এখন এটা জাবি ক্যাম্পাসের অন্তর্গত। মাঠের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি গরু চরে বেড়াচ্ছে। কয়েকটি শালিক গরুর পিঠে, মাথায় এমনকি কানের মধ্যে ঠুকিয়ে ঠুকিয়ে পোকা খাচ্ছে। ঘাসের মধ্যে ছোট্ট একটা পাখি দেখিয়ে রনি বললো, পাখিটা স্থানীয় পরিযায়ী। চড়ুইভরত। দেখতে অনেকটা চড়ুই পাখির মতোই। একটা নয়, কয়েকটা। আমি আর মাসুম ভাই সাথে সাথে ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে চোখ লাগালাম। ক্রলিং করে যতদূর সম্ভব পাখিটার কাছে গিয়ে ছবি তুললাম। যতক্ষণ পারলাম তুললাম। সত্যিই পাখিটা আমাদেরকে মুগ্ধ করলো।
মেটেচাঁদি চড়ুইভরত ছোট আকৃতির মেঠো পাখি। এর অন্য নাম বালুচাটা বা ধুলচাটা। সাধারণত নিরিবিলি বালুময় নদী তীর ও বিরান মাঠে ধীরপায়ে লাফিয়ে ও হেঁটে বেড়ায় এই পাখিরা। শুকনো ও ধুলাময় মাটিতে ঠোকর দিয়ে খাবার খায়। কর্ষিত জমি, শুকনো মুক্ত অঞ্চল, শিলাময় এলাকা এ পাখির প্রিয় আবাস। সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। শীতকালে বড় বড় দলে ঘুরে বেড়ায়। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মেটেচাঁদি চড়ুইভরতের মূল আবাসস্থল। এর ইংরেজি নাম : Ashy-Crowned Sparrow-Lark.
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির পিঠ বালি-বাদামি, ডানার পালক কালচে, মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছন ধূসর। পুরুষ পাখির পেট ও বুক থেকে গলা পর্যন্ত গাড় কালো রঙের পালক থাকে। স্ত্রী পাখির এটি থাকে না। স্ত্রী পাখি অনেকটা স্ত্রী চড়ুইয়ের মত দেখতে। স্ত্রী পাখির পিঠ ও দেহতল লম্বা লম্বা দাগসহ পুরো বালি-বাদামি। মুখ ফিকে পাটকেলে। দৈর্ঘ্য ১৩ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬ গ্রাম। এরা শস্য বীজ, পিঁপড়া, গুবরে পোকা কিংবা ছোট ছোট পোকামাকড় খায়।
সারা বছরই এই পাখির প্রজনন মৌসুম। তবে স্থানভেদে প্রজননের নির্দিষ্ট মৌসুম দেখা যায়। প্রাকৃতিক খোদলে ঘাস, পালক বিছিয়ে বাসা বানায়। দু-তিনটি বাদামী ছিটযুক্ত ডিম পাড়ে। স্ত্রী পুরুষ দুজনেই ডিমে তা দেয়। ১৩ থেকে ১৪ দিন পরে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *