Skip to content

শিশুর কিডনি রোগ

গ্রন্থনা : সীমা আখতার
শিশুদেরও কিডনি রোগ হতে পারে। এমনকি মাতৃগর্ভেই কিডনিজনিত জটিলতায় সে আক্রান্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে জন্মের পরপর সে আক্রান্ত হয়। শিশুদের কিডনির অনেক অসুখই যথাসময়ে নির্ণয় করা গেলে তা নিরাময় করা যায়। একটু সতর্ক থাকলে এড়ানো যায় অনেক অসুখও। পরামর্শ দিয়েছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজি, ঢাকা-এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. অলিউল ইসলাম মারুফ

Child3

রক্ত পরিশোধন, শরীরে পানি-লবণের ভারসাম্যতা, লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজের ভারসাম্যতাসহ অনেক কাজ করে কিডনি। কিন্তু বহু কারণে কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। এর অন্যতম কারণ অসুখবিসুখ ও কিডনির জন্মগত ত্রুটি। এর কিছু অসুখ শুরু হয় একেবারে শিশু বয়স থেকে। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, জীবনযাপন পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য দিনে দিনে শিশু কিডনি রোগীর সংখ্যা আমাদের দেশেও বাড়ছে।

যে কিডনি রোগ শিশুদের বেশি হয়
কিডনির যেকোনো রোগই শিশু বয়সে হতে পারে। তবে জন্মের সময় থেকেই যে কিডনি রোগগুলো শিশুর থাকতে পারে তার মধ্যে আছে-

পোস্টেরিওর ইউরেথ্রাল ভালব অবস্ট্রাকশন : এতে ছেলেশিশুরা আক্রান্ত হয়। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে বা মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ই রোগটি নির্ণয় করা যায়। সার্জারির মাধ্যমে অবস্ট্রাকশন ঠিক করা হলে সাধারণত ভবিষ্যতে আর সমস্যা হয় না।

ফিটাল হাইড্রোনেফ্রসিস : কিডনিতে পানি জমে ফুলে যায়। এক বা দুই কিডনিই আক্রান্ত হয়। কিডনিতে তৈরি প্রস্রাব মূত্রনালি দিয়ে বের হতে বাধা পায়। এটিও গর্ভাবস্থায়ই নির্ণয় করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হলেও অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমেই চিকিৎসা করা যায়।

পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ : এটি পিকেডি নামে অধিক পরিচিত। সাধারণত দুটি কিডনিই আক্রান্ত হয়। কিডনিতে কিছু সিস্ট হয়, যার ভেতরে পানির মতো তরল থাকে। একাধিক সিস্ট থাকে। মাতৃগর্ভেও রোগ নির্ণয় করা যায়। শিশু জন্মের পর তার বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ, রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত ও কিডনিতে পাথর হতে পারে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। এতে কাজ না হলে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বা ডায়ালিসিসও লাগতে পারে।

মাল্টিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ : এটি এমকেডি নামে পরিচিত। সাধারণত যখন কিডনি যথাযথভাবে তৈরি হতে পারে না, তখন বড় একটি সিস্ট দেখা দেয়, যা ধীরে ধীরে ওই কিডনিটির কার্যকারিতা বন্ধ করে দেয়। সাধারণত একটি কিডনি আক্রান্ত হয়। তাই অন্য কিডনিটি ভালো থাকলে সারা জীবন কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই অসুখটি থাকতে পারে। বড় ধরনের জটিলতা হলে সার্জারির মাধ্যমে আক্রান্ত কিডনি সরিয়ে ফেলতে হয়।

কনজেনিটাল সমস্যা : জন্মগতভাবেই মূত্রতন্ত্রের মূত্রনালিতে অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। অনেক সময় ঠিকমতো মূত্রনালি তৈরি হয় না। বহু ক্ষেত্রে একটি ইউরেথ্রার পরিবর্তে দুটি ইউরেথ্রা তৈরি হয়। সাধারণত ওষুধের মাধ্যমেই চিকিৎসা করা হয়। আবার দুটি কিডনি একসঙ্গে জোড়া লেগেও তৈরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত কিডনির কাজ বাধাগ্রস্ত হয় না। কেবল জটিলতা দেখা গেলেই সার্জারি করার প্রয়োজন হয়।

আরো কিছু সমস্যা : কিডনির জটিলতা থেকে শিশুর আরো কিছু শারীরিক অসুখ দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে আছে উচ্চ রক্তচাপ। সাধারণত জন্মগত ত্রুটি থেকেই এই উচ্চ রক্তচাপ হয়। কিডনির যথাযথ চিকিৎসা করলে রক্তচাপ কমে আসে। অনেক শিশুর কিডনিতে পাথর হতে দেখা যায়। যদি আকারে এগুলো বড় হয় তবে তলপেটে ও পিঠের নিচের দিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। পাথর সরানোর জন্য সার্জারি ছাড়াও কিছু থেরাপি চিকিৎসা আছে। অনেক শিশু আবার শরীরের অন্য অসুখের কারণে নেফ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়। যেমন, লাপাস, অটো ইমিউন ডিজিজে আক্রান্ত শিশুর কিডনিতে প্রদাহ হয়ে নেফ্রাইটিস করতে পারে।

এ ছাড়া বড়দের মতো প্রস্রাবে ইনফেকশনের সমস্যায় শিশুরা সচরাচর আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে মেয়েশিশুরা এতে বেশি ভোগে।

Web-Design-&-Developmen

কিডনি রোগের লক্ষণ
চোখের চারপাশ ফুলে যাওয়া, শরীরে পানি আসা
ঘন ঘন জ্বরে আক্রান্ত হওয়া
বারবার প্রস্রাব পাওয়া
পরিধেয় কাপড়ে প্রস্রাব করে দেওয়া
রাতে বিছানায় প্রস্রাব করা
প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া ও ব্যথা অনুভব করা
প্রস্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিক কমে যাওয়া এবং শরীর ফুলে যাওয়া
রক্তশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়া
বয়স অনুপাতে শরীর বৃদ্ধি না হওয়া
পাতলা পায়খানা, বমি ও উচ্চমাত্রার জ্বরের সঙ্গে হঠাৎ প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া
প্রস্রাবে রক্ত ও পুঁজের উপস্থিতি থাকা
কোমরের দুই পাশে বা তলপেটে ব্যথা হওয়া
প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া ও প্রস্রাবের থলিতে প্রস্রাব আটকে থাকা
শারীরিক দুর্বলতা, খাদ্যে অরুচি, বমি বমি ভাব ও শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া।

রোগ নির্ণয়
প্রাথমিকভাবে কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। প্রথমদিকে ইউরিন অ্যানালাইসিস ও রক্তের কিছু পরীক্ষা করে দেখা হয় কিডনি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারছে কি না। এ ছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিএটি স্ক্যান, রেনাল নিউক্লিয়ার স্ক্যান, ভয়েডিং সিস্টোইউরেথ্রগ্রাম ইত্যাদি পরীক্ষাও করা হয়।

যা করতে পারেন
মাতৃগর্ভে থাকার সময় মায়ের যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয় তা দিয়েই প্রাথমিকভাবে শিশুর কিডনির জন্মগত রোগ আছে কি না তা দেখা যায়। তাই আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার সময় চিকিৎসককে শিশুর কিডনি পরীক্ষার কথাও জানান।
শিশুর জন্মের পরেই লক্ষ করুন, ছেলে শিশুর পুরুষাঙ্গ স্বাভাবিক আছে কি না, শিশুর মূত্রনালির বহির্মুখটি সঠিক স্থলে আছে কি না, ছেলেশিশুদের ক্ষেত্রে তার অণ্ডকোষ দুটি স্বাভাবিক অবস্থানে আছে কি না ইত্যাদি। না থাকলে বা কোনো সন্দেহ হলে অবশ্যই ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষা করান।
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখামাত্র ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
শিশুদের শরীরে খোসপাঁচড়া ও গলাব্যথা হলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া। কারণ এ দুটি রোগ থেকে কিডনি অকার্যকর হতে পারে, যা প্রথমিক পর্যায়ে নিরাময় ও জটিলতা প্রতিরোধ সম্ভব।
ডায়রিয়ার দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নেওয়া। কারণ এটি দ্রুত কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ।
অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
শিশু যাতে পর্যাপ্ত পানি পান করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করুন। যেমন, স্কুলে টিফিনের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ পানি দেওয়া। কোথাও বেড়াতে গেলে সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি রাখা ইত্যাদি।
শিশুদের কৃত্রিম জুস ও প্রিজারভেটিভ মিশ্রিত এবং টিনজাত খাবার না খেতে দেওয়া। যেসব খাবারে রাসায়নিক মিশ্রিত বা ভেজাল থাকতে পারে বলে সন্দেহ হয় তা খেতে না দেওয়া। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *