আকাশি-নীল চেক শার্টের ওপর গাঢ় নীল স্যুট। কাঁধে একটা ব্যাগপ্যাক নিয়ে ক্রিস কেয়ার্নস এসে বসেছিলেন লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন আদালতে। বারবার জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছিলেন। খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন সাবেক নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার! রায় পড়ে শোনানোর সময় দাঁড়াতে বলা হলো তাঁকে। খুব নার্ভাস দেখাচ্ছিল একসময়ের মাঠ দাপানো অলরাউন্ডারকে। তবে একটু পর যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল কেয়ার্নসের, যখন শুনলেন বিচারক বলছেন, ‘দোষী নয়!’
অভিযোগ ছিল আসলে দুটি। শপথ নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও বিচারকে প্রভাবিত করা। এই রায়ে দুই অভিযোগ থেকেই মুক্তি পেলেন সাবেক নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার। প্রায় নয় সপ্তাহের শুনানি শেষে লন্ডনের আদালতের রায়টা কেয়ার্নসের জন্য ছিল বিশাল স্বস্তি। বিচার প্রভাবিত করার অভিযোগ ছিল কেয়ার্নসের আইনজীবী অ্যান্ড্রু ফিচ-হল্যান্ডের বিরুদ্ধেও। কেয়ার্নসের সঙ্গে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন তিনিও।
২০১০ সালে আইপিএলের সাবেক চেয়ারম্যান ললিত মোদির একটি টুইটকে কেন্দ্র করে ঘটনাটির শুরু। কেয়ার্নসের বিরুদ্ধে ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিলেন মোদি। কিন্তু ওই অভিযোগ তোলার কারণে মোদির বিরুদ্ধে লন্ডনের আদালতে মানহানির মামলা করে জিতে যান সাবেক নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার। ক্ষতিপূরণ পান ৯০ হাজার পাউন্ড। পরে অবশ্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের তদন্তে বেরিয়ে আসে আদালতে ‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ দিয়েছিলেন কেয়ার্নস। এরপরই শপথ নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও বিচার প্রভাবিত করার অভিযোগে নতুন করে তদন্ত শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
চলমান এ মামলায় কেয়ার্নসের সাবেক কয়েকজন সতীর্থ ছাড়াও সাক্ষ্য দিয়েছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক রিকি পন্টিং। সাক্ষ্য দিতে এসে লু ভিনসেন্ট সবিস্তারে জানান কীভাবে তাঁকে ফিক্সিংয়ে জড়িয়েছিলেন কেয়ার্নস। ভিনসেন্টের সাবেক স্ত্রী রাইলি দাবি করেছেন, তাঁর সামনেই ভিনসেন্টকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন কেয়ার্নস। ম্যাককালামও দাবি করেন, তাঁকেও ফিক্সিংয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কেয়ার্নস।
তবে ভিনসেন্টের ম্যাচ পাতানোয় জড়িত থাকার ইতিহাস, তাঁর স্ত্রী যে ঘটনার কথা বলেছেন সেই সময়ে মাদকের প্রভাবে থাকা এবং ম্যাককালামের ম্যাচ পাতানোর বিষয় আকসুর কাছে যথাসময়ে রিপোর্ট না করাটা মাথায় রেখে কোনো সাক্ষ্যকেই অকাট্য ভাবতে পারেননি আদালত। কাল বিচারক তাঁর রায়েও বলেছেন, কেয়ার্নসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি বাদীপক্ষ।
আদালত থেকে বেরিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কেয়ার্নস বলেছেন, ‘পাঁচটি বছর গেছে নারকীয়, বিশেষ করে সর্বশেষ দুটি বছর। অবশেষে মামলা জিতেছি। এখন আমি একজন সুখী মানুষ। আমার সুনাম ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু এসব করেও আমাকে থামানো যায়নি।’
একসময়ের সতীর্থ ম্যাককালাম, যিনি আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁকে এখন কিছু বলবেন কি না—এমন প্রশ্নে কেয়ার্নসের জবাব, ‘কেন?’ ক্রিকইনফো, নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড। সৌজন্যে : প্রথম আলো