Skip to content

শ্বেত পাথরের পাতাল গুহা

কয়েক লাখ বছর ধরে তৈরি হয়েছে স্লোভেনিয়ার পোস্তইনা গুহা। আর এই গুহা তৈরির কাজটা করেছে একটা নদী। বিস্তারিত জানাচ্ছেন  আনিকা জীনাত

Postojna_Caves

পাতাল এই গুহার ভেতরে ঢুকলে মনে হবে যেন পৃথিবীর গোপন কোনো এক রহস্য লুকিয়ে আছে এখানে। চারদিকে শ্বেত পাথরের উঁচু-নিচু দেয়াল। গুহার ওপরের দিকে তাকালে মনে হয় যেন খাঁজকাটা লম্বা লম্বা সরু দণ্ড মাটিতে পড়ার অপেক্ষায় ঝুলছে। সেসবের কোনোটি দেখতে ঝাড়বাতির মতো, কোনোটি লম্বা ছুরির ফলার মতো আবার কোনোটি বিশালাকৃতির থামের মতো। আর এ সব কিছুরই দেখা মিলবে স্লোভেনিয়ার পোস্তইনা গুহায়। ইউরোপের সবচেয়ে বড় গুহাও এটি। যদিও এখন পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটারের পথ আবিষ্কৃত হয়েছে এটার। তবে গুহার ভেতরে অন্যান্য পথের খোঁজ পাওয়া গেলে এর আয়তন আরো বাড়তে পারে।

এই গুহা সৃষ্টি হয়েছে কয়েক লাখ বছর ধরে। বছরের পর বছর ধরে পাথরের গা বেয়ে বৃষ্টির পানি ও পিউকা নদীর পানি পড়ার কারণে এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ দ্রবীভূত হওয়ায় গঠিত হয়েছে বিস্ময়কর এই পাতাল গুহা। ২০ লাখ বছর ধরে পিউকা নদীটির স্তর পরিবর্তিত হওয়ার কারণে গুহাটির গায়ে বিভিন্ন ধরনের নকশার সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এখানকার প্রায় ৫৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি লম্বা থাম তৈরি হতেই সময় লেগেছে ১৪ হাজার বছর। নদীর পানি ও বৃষ্টির পানি সংস্পর্শে থাকায় গুহার আবহাওয়াটাও বেশ আরামদায়ক। এটার স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Postojna_Caves2

১৭ শতকে এই পোস্তইনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেলেও পুরো গুহায় কী কী আছে তা জানা যায় ১৮ শতকের প্রথম দিকে এসে। গুহা বলে এর ভেতরে গিয়ে নির্জনতা বা নিরিবিলি পরিবেশ আশা করাটা বোকামিই হবে বলা চলে। কেননা প্রতিদিন এখানে ঘুরতে আসে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। পর্যটকদের জন্য গুহাটি খুলে দেওয়া হয় ১৮১৯ সালে।

গুহার সৌন্দর্য ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে ১৮৮৪ সাল থেকেই এখানে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দেয়া হয়েছে। পর্যটকদের গুহা ভ্রমণটা শুরু হয় ট্রেনে চেপে। ট্রেনে উঠলে একেবারে গুহার ভেতরে চলে যাওয়া যায় ১০ মিনিটের মধ্যে। ট্রেনযাত্রা শেষে হেঁটে হেঁটেই দেখা যায় গুহার ভেতরের প্রাকৃতিক দৃশ্য। কিছু দূর হেঁটে গেলেই দেখা মিলবে পাথর বিছানো পিভকা নদীর। ২৪ কিলোমিটারের এই গুহার মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দর্শনার্থীরা দেখতে পারে। তার পরও এই ভগ্নাংশ দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে যায় গুহা সফর। পুরো গুহায় এত বিস্ময়কর জিনিস রয়েছে যে তা এক দিনে দেখেও কারো মন ভরে না।

গুহার কোনো কোনো জায়গা যেন একেকটি আস্ত হলরুম। এর মধ্যে একটিকে তো কনসার্ট হলই বানানো হয়েছে। এর ভেতরে একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষ দাঁড়াতে পারবে। এই গুহার পাথর খণ্ডগুলোর গায়ে টোকা দিলে যে অদ্ভুত শব্দ হয়, তা পিলে চমকানোর জন্য যথেষ্ট।

Postojna_Caves3

এই গুহায় শুধু দশনার্থীরাই আসে তা নয়, এখানে প্রায় ১০০ প্রজাতির পশু-পাখিও বসবাস করে। এদের থাকার সুবিধার জন্য গুহার বেশির ভাগ অংশই অন্ধকার করে রাখা হয়।

তবে প্রাকৃতিক রূপে ভরপুর এই পোস্তইনা গুহার একটা কালো ইতিহাস আছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি এই গুহার মুখে প্রায় এক হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল মজুদ করে রাখে। ১৯৪৪ সালে জার্মানিবিরোধীরা এই তেলের মজুদ ধ্বংস করে দেয়। সাত দিন ধরে আগুন জ্বলে গুহার মুখে। আগুনে পোড়া সেই কালো দাগ এখনো দেখা যায় গুহার মুখে। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *