Skip to content

শ্রীবরদীর রাজার পাহাড়

Rajar-Pahar

ভারত থেকে নেমে আসা ছোট নদী ঢেউফা। এ নদীর শান্ত-শীতল জলের স্রোতধারা একটানা বয়ে চলেছে। নদীর বুকে জেগে ওঠেছে বালুর চর। সূর্যের কিরণে চকচক করছে বালি। পাশেই বিশাল উচুঁ টিলা রাজার পাহাড়। নদী আর সৌন্দর্য্যে অপরূপ লীলাভূমি রাজার পাহাড় যেন ঐশ্বরিক স্বপ্নপুরি। এটির কুল ঘেঁষে নানা কারুকার্যে সাজানো আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাস।

এ জনগোষ্ঠীর বসবাসে বাবেলাকোনা, হারিয়াকোনা, দিঘলাকোনা, চান্দাপাড়াসহ ১০/১২টি গ্রাম যেন সৌন্দর্যের যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। ঢেউফা নদীর দু’পাশে সবুজ বৃক্ষ আচ্ছাদিত অসংখ্য উচুঁ নিচু পাহাড়। গভীর মমতা আর ভালোবাসায় গড়া নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির বর্ণিল জীবনধারা। অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য পর্যটক আনাগোনা প্রায় চোখে পড়ে। শীত মৌসুমে প্রতিদিনই শত শত মানুষ দেখতে আসে এ গারো পাহাড়টি।

সৌন্দর্য্যময়ী এ স্থানটি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়। পাহাড়ের পাশ ঘেঁষা মেঘালয়ের পাদদেশে অবারিত সবুজের মহাসমারোহ। গারো পাহাড় কত যে মনোমুগ্ধকর না দেখলে হয়ত বিশ্বাস হবে না। যারা একবার দেখেছেন তারাই অনুভব করতে পেরেছেন। কিংবদন্তি রয়েছে, প্রাচীনকালে এক রাজার বাসস্থান ছিল রাজার পাহাড়ে। তার নামেই এ পাহাড়ের নাম হয় রাজার পাহাড়। কিন্তু এ পাহাড়ের আগের সৌন্দর্য্য এখন আর নেই। তবে এর বৈশিষ্ট্য প্রতিবেশি পাহাড়গুলোর তুলনায় ব্যতিক্রম। গারো পাহাড়ে যতগুলো পাহাড় রয়েছে তার মধ্যে এটির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। এ পাহাড়ের চূড়ায় শতাধিক হেক্টর জমির সমতল বিরান ভূমি। এখান থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্য যেন আরো কাছে মনে হয়। এর চূড়া সবুজ আর নীলের সংমিশ্রনে যেন মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। আঁকাশ ছোঁয়া বিশাল পাহাড়ের যেন নৈসর্গিক দৃশ্য। এটি মনকে করে আবেগ তাড়িত।

রাজার পাহাড় ঘেঁষা আদিবাসী জনপদ চান্দাপাড়া, বাবেলাকোনা ও হারিয়াকোনা। এখানে অসংখ্য উচুঁ নিচু টিলায় ঘেরা যেন অন্যবদ্য গ্রামগুলো। প্রাচীনকাল থেকে এসব গ্রামে গড়ে ওঠেছে জনবসতি। ঝোঁপ জঙ্গলে আবৃত্ত যেন সবই কালের আবর্তে পরিবর্তিত।

প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত গ্রামগুলো দিন দিন হয়ে উঠছে পরিচিত। এসব গ্রামে গারো, হাজং, কোচ অধ্যুষিত উপজাতিদের সংস্কৃতি ভিন্ন মাত্রায় বৈচিত্র্যপূর্ণ্য জীবনধারা। এ যেন জঙ্গল আর জন্তু জানোয়ারের নৈসর্গিক মিতালি। জনপদটির চলমান জীবন সংগ্রামের বিরল দৃশ্য। উপজাতিদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও চর্চার কেন্দ্রগুলোও যেন আলাদা আকর্ষণ। এসব হচ্ছে বাবেলাকেনা কালচারাল একাডেমি, ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অফিস (টিডবিন্টও), জাদুঘর, লাইব্রেরি, গবেষণা বিভাগ, মিলনায়তন এর অন্যতম নিদর্শন। এখান থেকে উপজাতিদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়। মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হচ্ছে এখানকার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বর্ষাকালে ঢেউফা নদী জোয়ারের পানিতে কানায় কানায় ভরে ওঠে। কিন্তু দিনের শেষে ভাটা পড়ে। শুকিয়ে যায় এ নদীর পানি। তবে খরস্রোতা এ নদীর পানির গতি কখনোই কমে না। সারা বছরই হেঁটে পার হওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে এ নদীর দুইপাশে দুটি ব্রিজ নির্মিত হওয়ায় এখন আর নদীতে নামতে হয় না। এর বুক জুড়ে বিশাল বালুচর যা নির্মাণ কাজে ব্যবহারে জন্য শহরে নিয়ে যাচ্ছে। এটি আদিবাসী গ্রামগুলো ঘেঁষা বিকল্প সমুদ্র সৈকত। ভারত থেকে নেমে আসা সোমেশ্বরী নদীটির এখানে নামকরণ হয়েছে ঢেউফ। এ নদীর পানিতে হাঁটতে গেলে মনে হবে যেন কক্সবাজার বা অন্য কোনো সমুদ্রের বুক। এ ছাড়াও নৃতাত্ত্বিক জনঘোষ্ঠীর কারুকার্য মণ্ডিত ধর্মীয় গীর্জা, মন্দিরসহ অসংখ্য প্রাকৃতিক নিদর্শনের সমাহার। তাদের চালচলন, কথাবার্তা ও জীবন প্রণালী দর্শনার্থীদের অকৃষ্ট করে। ওদেরে সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্নতা। এ জনগোষ্ঠীর জীবন যেন প্রবাহিত হয় ভিন্ন ধারায়। এখানে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিট অফিস, বিজিবি ক্যাম্প এবং রাবার বাগান।

এখানে আসা পর্যটকদের মতে, গারো পাহাড়কে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হলে একদিকে যেমন বাড়বে সরকারের রাজস্ব। অন্যদিকে পর্যটন শিল্পে যোগ হবে আরেকটি পর্যটন নগরি। সেই সুবাদে উন্নয়নে লাগবে নতুন ছোঁয়া।

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসে বা যেকোনো যানবাহনে আসা যায় শেরপুর শহরে। এখান থেকে মাত্র ৩৪ কিলোমিটার দূরে শ্রীবরদীর কর্ণঝোরা বাজার। জেলা শহর থেকে বাস, টেম্পুসহ যেকোনো যান বাহনে আসা যায় মনোমুগ্ধকর নয়ানিভিরাম স্থান রাজার পাহাড় থেকে বাবেলাকোনায়। পাশেই রয়েছে অবসর কেন্দ্র। রাত হলে সেখানে থাকার জন্য রয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টিত আবাসিক। কম খরচে কম সময়ে এই গারো পাহাড় আপনাকে দেবে অনাবিল আনন্দ। সৌজন্যে : নয়া দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *