নাবীল অনুসূর্য
রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রুজ শিপের মালিক প্রতিষ্ঠান। হ্যাঁ, নরওয়েভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসাই হলো বিলাসবহুল ক্রুজ শিপের ট্রিপ পরিচালনা।
সাগরে বিলাসী বিনোদনের ব্যবস্থা করতে কম্পানিটির আছে ২৩টি ক্রুজ। এদের মধ্যে দুটি বেশি বিখ্যাত। কারণ, এ দুটিই যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রুজ শিপ বা প্রমোদ তরী।
প্রথমটির অবশ্য খ্যাতি বেশি, নাম ‘ওয়েসিস অব দ্য সিস’, আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর। আর দ্বিতীয়টি ‘অ্যালিউর অব দ্য সিসে’র যাত্রা শুরু হয় পরের বছরের ১ ডিসেম্বর।
রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রুজ শিপের অর্ডার দেয় ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কাজ পায় ফিনল্যান্ডের ইউরোপ টুর্কু শিপইয়ার্ড। ২০০৮ সালের মে মাসে রীতিমতো প্রতিযোগিতার আয়োজন করে জাহাজটির নাম বাছাই করা হয়-‘ওয়েসিস অব দ্য সিস’। কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর। খরচ হয় প্রায় ৮০ কোটি ইউরো। জাহাজটি প্রথম বিলাসভ্রমণে বের হয় ৫ ডিসেম্বর। সে ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রুজ শিপ হিসেবে নাম লেখায় ওয়েসিস অব দ্য সিস।
এই প্রমোদ তরী এমনকি লন্ডনের সবচেয়ে উঁচু ভবন শার্ডের চেয়েও লম্বা। বোয়িং-৭৪৭-এর দুই পাশের পাখাসহ যতখানি হয়, চওড়ায় তার চেয়েও বড়। সংখ্যার হিসাবে, লম্বায় বা দৈর্ঘ্যে এক হাজার ১৮৭ ফুট, চওড়া ২০৮ ফুট। ওজন দুই লাখ ২৫ হাজার ২৮২ টন। জাহাজটি যাত্রী বহন করে একসঙ্গে পাঁচ হাজার ৪০০ জন। তবে করতে পারে আরো বেশি। সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ছয় হাজার ২৯৬। সঙ্গে জাহাজের দুই হাজার ৩৯৪ কর্মচারী তো থাকেই।
১৬ ডেকের জাহাজটিতে কেবিন আছে মোট দুই হাজার ৭০০। পুরো জাহাজ রাঙাতে রং লেগেছিল ছয় লাখ ৩০ হাজার গ্যালন। আর বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করতে হয়েছে তিন হাজার ৩০০ মাইল।
একদম ওপরের ডেকে আছে বিশাল বাগান। তাতে অন্তত ১২ হাজার গাছ আছে। জাহাজটির সুইমিং পুলগুলোতে প্রতিদিন পানিই লাগে দুই হাজার ৩০০ লিটার।
পৃথিবীর বৃহত্তম প্রমোদ তরীতে সংগত কারণেই আমোদ-প্রমোদের কোনো কমতি নেই। বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট আছে ২০টিরও বেশি। একটা এলিভেটিং বারসহ মোট ৩৭টি ছোট-বড় বার আছে। আরো আছে ৭৫০ সিটের মুক্তমঞ্চ। আছে বাস্কেটবল কোর্ট আর মিনি গল্ফ। হাই ডাইভিং ও রক-ক্লাইম্বিংয়ের ব্যবস্থাও পাবেন এখানে। সার্ফ মেশিনসহ বিনোদনের সম্ভাব্য সব উপাদান আছে তাতে।
ওয়েসিস অব দ্য সিসের বছরখানেক পরে রয়্যাল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল বাজারে ওয়েসিস ক্লাসের আরেকটি ক্রুজ শিপ নিয়ে আসে-অ্যালিউর অব দ্য সিস।
কারো কারো মতে, এটি দৈর্ঘ্যে ছাপিয়ে গেছে ওয়েসিসকেও। অবশ্য অনেকের আবার দাবি, ওয়েসিসের দৈর্ঘ্য বেশিও হতে পারে। কারণ পৃথিবীর বৃহত্তম এই দুই ক্রুজ শিপের দৈর্ঘ্যরে পার্থক্য এক-দুই ইঞ্চির বেশি নয়। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ