Skip to content

সাগরকন্যা কুয়াকাটা

কামরুল হাসান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পটুয়াখালীর সাগরকন্যা বলে খ্যাত কুয়াকাটা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত। কুয়াকাটা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। সে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য- যা দেখার জন্য প্রতিদিন এখানে ভিড় জমায় দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক। বাংলাদেশ থেকে প্রাকৃতিক এই দুর্লভ সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগটা আপনি অনায়াসেই পেতে পারেন কুয়াকাটাতে। স্থানীয় মানুষ আর ভ্রমণপিয়াসীরা কুয়াকাটায় এসে আদর করে ডাকেন সাগরকন্যা বলে। জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের সর্বশেষ দক্ষিণে অসাধারণ এ সমুদ্রসৈকতটির অবস্থান। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার, প্রস্থ সাড়ে ৩ কিলোমিটার। দর্শনার্থী ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এ সৈকতে আছে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও ঘোড়া। বর্ষাকালে সাগর থাকে উত্তাল, ফলে সাগরের সৌন্দর্য হয়ে যায় অন্য রকম। কুয়াকাটায় শুধু সমুদ্রসৈকতই নয়, এখানে দেখার মতো আছে আরো অনেক জায়গা।

Kuakata

কিভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটার দূরত্ব ৩২০ কিলোমিটার। ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলীর বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি আসতে পারেন কুয়াকাটায়। ভাড়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। সময় লাগবে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। এ ছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায় বিআরটিসি বাস। ঢাকা আসার বাস সন্ধ্যা ৬টায় কুয়াকাটা থেকে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে নদীপথেও কুয়াকাটা যাওয়া যায়। নদীপথে যাত্রা আরামদায়ক। নদীপথে যেতে চাইলে সে ক্ষেত্রে সদরঘাট থেকে নির্ধারিত রুটে লঞ্চযোগে প্রথমে পটুয়াখালী কিংবা কলাপাড়া আসতে হবে। পটুয়াখালী থেকে আপনার তিনটি ফেরি পার হতে হবে। তারপর ভাড়া করা মাইক্রোবাস অথবা পটুয়াখালী-কুয়াকাটা রুটের বাসে চড়ে সোজা পৌঁছে যাবেন কুয়াকাটা। ঢাকা থেকে লঞ্চ বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। লঞ্চে কেবিন ভাড়া ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা।

কুয়াকাটা ইকোপার্ক : সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে গড়ে তোলা হয়েছে পরিকল্পিত ইকোপার্ক। ৭০০ একর জায়গাজুড়ে এ পার্কটি অবস্থিত। এ পার্কের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও শোভাবর্ধনকারী ৪২ হাজার বৃক্ষ রয়েছে। পার্কের লেকে প্যাডল বোট নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, বেঞ্চে বসে আড্ডা ও লেকের পাড়ের শেডে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকনের অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে এখানে। ইকোপার্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে লেক আর ঝাউবাগান। প্রায় এক হাজার ফুট দীর্ঘ লেকটি সবাইকে আকৃষ্ট করে। লেকের এক পাশ থেকে অপর পাশে যাওয়ার জন্য একটি সেতু রয়েছে। মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কুয়াকাটা ইকোপার্ক।

কুয়াকাটা বৌদ্ধবিহার : এ মন্দিরের ভেতরে তিন ফুট বেদির ওপরে অষ্টধাতু নির্মিত ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধমূর্তি, যার ওজন সাড়ে ৩৭ মণ। প্রাচীন নির্মাণশৈলী আর স্থাপৈত্য সৌন্দর্য বজায় রেখে এ মন্দির নির্মিত হয়েছে। এ মন্দিরটি অষ্টধাতুর মন্দির নামে পরিচিত। এই বৌদ্ধবিহারটি জিরো পয়েন্টের পূর্ব পাশে অবস্থিত। বৌদ্ধবিহারের পাশেই রয়েছে ২০০ বছরের প্রাচীন কুয়া। কুয়াটিকে কিছুটা আধুনিকতার রূপ দেয়া হয়েছে। কুয়া থেকে সরাসরি পাকা সিঁড়ি উঠে গেছে বৌদ্ধ মন্দিরের দরজা পর্যন্ত। বেশির ভাগ সময় এ বিহারের দরজা খোলা থাকে পর্যটকদের দেখার জন্য। মূর্তির দিকে তাকালে চোখ কিছুতেই নামাতে পারবেন না। এই বিহারটি উপরিভাগ চূড়ার মতো নকশা করা। বিহারটিতে প্রবেশে কোনো টাকা লাগে না। বিহারের পাশেই রয়েছে রাখাইন মার্কেট। এখানে রাখাইনদের হাতে তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর থেকে পুঁতির মালা পর্যন্ত সবই পাওয়া যায়। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে পাঁচ মিনিটের পথ বৌদ্ধবিহার।

মিশ্রিপাড়ার রাখাইন বুদ্ধমূর্তি : দেশের সর্ববৃহৎ পাথরের নির্মিত বুদ্ধমূর্তি কুয়াকাটা মিশ্রিপাড়ায় অবস্থিত। কুয়াকাটা থেকে আট কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর কোণে মিশ্রিপাড়া গ্রাম। প্রায় ৭০ মণ ওজনের বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর উচ্চতা প্রায় ৩৬ ফুট। এখানকার মন্দিরটিও সীমা বৌদ্ধমন্দিরের স্টাইলে নির্মিত। মন্দিরটি ২০০ বছরের পুরনো। মন্দিরের গা ঘেঁষেই রয়েছে রাখাইনদের একটি পাড়া। সেখানে ঘুরে দেখতে পারেন রাখাইনদের তৈরি কাপড় বুনানের দৃশ্য এবং তাদের জীবনযাত্রা। এখানে প্রতি বছর রাস পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমায় উৎসব হয়ে থাকে।

রাঙ্গাবালীর সোনারচর : সাগরে জেগে ওঠা এ দ্বীপের আয়তন প্রায় ১০ বর্গমাইল। রুপালি বালুর ওপর অসংখ্য লাল কাঁকড়ার দৌড়াদৌড়ি সারা দিন। শ্বাসমূলের বন আছে দ্বীপে। ভোরের সূর্য লাল আলো ছড়িয়ে দেয় বেলাভূমিতে, তখন মনে হয় কেউ অসংখ্য আলো জ্বেলে দিয়েছে সাগরের বুকে। দ্বীপের শরীরজুড়ে অনেক খাল ছড়িয়ে আছে। দ্বীপটির পূর্ব প্রান্তে আছে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ যেতে হয়। এই চর থেকে খেয়া নৌকায় সোনারচর যাওয়া যায়। এ ছাড়া পটুয়াখালী থেকে রাঙ্গাবালী হয়ে লঞ্চে সোনারচরে যাওয়া যায়। ঘণ্টা তিনেক সময় লাগবে। সূত্র : নয়া দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *