সত্যিকারের মেঘ এসে নিত্য ভিজিয়ে দেয়, ঝাপসা করে দেয় চারদিক! জায়গাটার নাম সাজেক। অবস্থান রাঙামাটি জেলায়। কিন্তু যেতে হয় খাগড়াছড়ি হয়ে। সাজেক যাওয়ার পথটাও দেশের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা বানিয়েছে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে দীঘিনালা, তারপর বাঘাইহাট হয়ে সাজেক। পুরো রাস্তাটাই অপূর্ব, আশপাশের দৃশ্য বড় মনোরম। বেশির ভাগ সময় রাস্তাটাকে রোলার কোস্টারই মনে হয়।
সবুজে মোড়ানো প্রকৃতির মাঝে আঁকাবাঁকা সর্পিল পথ বেয়ে দুঃসাহসিক এই ভ্রমণ যেখানে ফুরাবে, সেটাই সাজেকের মূল কেন্দ্র। নাম রুইলুইপাড়া। ছবির মতো পথঘাট। পথের দুপাশে লাল-সবুজ রঙের বাড়ি। কাছে-দূরের সব পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘ জমে থাকে। রুইলুইপাড়া থেকে আরেকটু দূরে কংলাকপাড়া। টেনেটুনে ২০টি ঘর। হেঁটে যেতে আধঘণ্টা। সেখানে থেকে সাজেক ভ্যালির বড় অংশটা দেখা যায়। সাজেকের আনন্দ বারান্দা বা খোলা জায়গায় বসে বা শুয়ে মেঘের আনাগোনা দেখা। হঠাৎ হঠাৎ এক টুকরো মেঘ অথবা বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। এভাবেই বদলে যায় দৃশ্যপট। হঠাৎ হঠাৎ সব এমনই ফকফকা যে সীমান্তের ওপারে পাহাড়ের ঘরবাড়ি, ঝরনা, মন্দির পর্যন্ত দেখা যায়। কিছুক্ষণ বাদেই হয়তো মেঘ এসে ঢেকে দেয় চারদিক। রুইলুইপাড়ায় রোজ সকাল আর বিকেলের দিকে আদিবাসী ঘর থেকে ভেসে আসে সুমধুর গান। তাদের নিজস্ব ভাষা ও সুরের।
যোগাযোগ: ০১৬ ১২ ৩৬০ ৩৪৮
পাহাড়ের উপরে মেঘের এমন ছড়াছড়ি শুধু সাজেকেই দেখা যায়।
সাইটসিয়িং: সাজেক ভ্যালি, রুইলুই পাড়া, কংলাক পাড়া, হেলিপ্যাড, সাজেক রিসোর্ট, রিছাং ঝরনা, আলুটিলা গুহা, হার্টিকালচার পার্ক, ঝুলন্ত ব্রিজ।
স্টান্ডার্ড প্যাকেজ: জনপ্রতি ৪,৯৫০/= টাকা। শিশু: ৫ বছরের নিচে ৩,৭৫০/= টাকা, ২ বছরের নিচে ফ্রি। এই খরচে থাকছে: ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি নন এসি বাসে যাওয়া-আসার টিকেট। দুই দিন সাইটসিয়িং। সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার, ইভিনিং স্ন্যকস। সাজেকের রুইলুইপাড়ায় এক রাত বেড টু বেড রুমে থাকা। প্রথম দিন সকালে ও দ্বিতীয় দিন বিকেলে খাগড়াছড়িতে হোটেলে শেয়ারড রুমে রিফ্রেশমেন্ট। সকল এন্ট্রি ফি। গাড়ি পার্কিং ও ড্রাইভারের খরচ।
ডিলাক্স প্যাকেজ : জনপ্রতি ৬,৪৫০/= টাকা। শিশু: ৫ বছরের নিচে ৫,২৫০/= টাকা, ২ বছরের নিচে ফ্রি। এই খরচে থাকছে: এসি বাসের ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়া-আসার টিকেট। দুই দিন সাইটসিয়িং। সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার, ইভিনিং স্ন্যাকস। সাজেকের রুইলুইপাড়ায় এক রাত বেড টু বেড রুমে থাকা। প্রথম দিন সকালে ও দ্বিতীয় দিন বিকেলে খাগড়াছড়িতে হোটেলে শেয়ারড রুমে রিফ্রেশমেন্ট। সকল এন্ট্রি ফি। গাড়ি পার্কিং ও ড্রাইভারের খরচ।
শুক্রবারের জন্য স্টান্ডার্ড প্যাকেজে জনপ্রতি ৫০০ টাকা ও ডিলাক্স প্যাকেজে জনপ্রতি ৭৫০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে।
খরচে যা থাকছে না: চিকিৎসা ও ব্যক্তিগত খরচ। সড়ক পথসহ মেনুর বাইরে অতিরিক্ত কোনো খাবার। কোমল পানীয়। হোটেল বা রিসোর্টে অতিরিক্ত কোনো রুম নিলে তার ভাড়া। অনাকাঙ্খিত কোনো খরচ। যা উল্লেখ নাই এমন সব খরচ।
শিশুদের নীতিমালা: পাঁচ বছরের নিচের শিশু হোটেলে বাবা-মায়ের সাথে সিট শেয়ার করবে। দুই বছরের নিচের শিশু খাবার এবং গাড়ি ও হোটেলসহ সবকিছু বামা-মায়ের সাথে শেয়ার করবে।
আলুটিলা গুহা। রোমাঞ্চকর এই গুহা ভ্রমণ করব দ্বিতীয় দিন।
ভ্রমণসূচি
প্রথম রাত
রাত ১০.০০ মিনিটে ঢাকার ফকিরাপুল থেকে বাসে খাগড়াছড়ি রওয়ানা।
প্রথম দিন
খুব সেকালে খাগড়াছড়ি পৌঁছা।
০৭:০০ খাগড়াছড়ি শহরে গ্রুপ রুমে ফ্রেস হওয়া ও সকালের নাস্তা। (মেনু: পরাটা, ভাজি, ডিম, চা।)
১০:০০ রিজার্ভড চান্দের গাড়িতে সাজেকের উদ্দেশে রওয়ানা।
১২:৩০ সাজেকে রিসোর্টে রুম বরাদ্দ, রিফ্রেশ।
০১:৩০ দুপুরের খাবার গ্রহণ। (মেনু: সাদা ভাত, সবজি, বাম্বু চিকেন, ডাল।)
০৩:০০ কংলাক পাহাড়, রুইলুই পাড়া, হেলিপ্যাড, সাজেক রিসোর্ট ও তার আশপাশ বেড়ানো।
০৭:৩০ বার-বি-কিউ ডিনার। স্থান: সাজেক ভ্যালি।
সাজেকে রাত যাপন।
রিছাং ঝরনাও রয়েছে দ্বিতীয় দিনের ভ্রমণ পরিকল্পনায়।
দ্বিতীয় দিন
০৫:০০ সূর্যোদয় উপভোগ ও মেঘে ঢাকা পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়া।
০৮:৩০ সকালের নাস্তা। (মেনু: ডিম খিচুরি, চা। স্থান: সাজেক ভ্যালি)
০৯:৩০ খাগড়াছড়ির উদ্দেশে যাত্রা।
০1:০০ দুপুরের খাবার। (সাদা ভাত, সবজি, শুটকি, হাঁসের মাংস, ডাল। স্থান: খাগড়াছড়ি শহর)
০2:0০ রিছাং ঝরনা, হার্টিকালচার পার্ক ও ঝুলন্ত ব্রিজ ভ্রমণ।
০৭:০০ হোটেলে গ্রুপভিত্তিক রুমে ফ্রেস হওয়া।
০৮:০০ রাতের খাবার। (চিকেন বিরিয়ানি। স্থান: খাগড়াছড়ি শহর)
০৯:০০ বাসে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা।
০ দিন
খুব ভোরে ঢাকার ফকিরাপুল পৌঁছা ও ট্যুরের সমাপ্তি।
সাজেক রিসোর্টের সামনে ঢাকা ট্যুরিস্টের প্রধান নির্বাহী মোস্তাফিজুর রহমান। তাঁর আন্তরিক আতিথেয়তা থাকবে সাজেকের প্রতিটি ট্যুরে।
সাথে যা যা নিতে পারেন
মোবাইলের চার্জার ও পাওয়ার ব্যংক।
নিজের ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় জিনিস।
হেডলাইট অথবা টর্চলাইট।
রোদ প্রোটেকশনের জন্য ছাতা, সানক্যাপ, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন।
প্রয়োজনীয় ওষুধ। ফার্স্ট এইড ব্যান্ডেজ।
ভ্রমণকে উপভোগ করুন, অবশ্যই মনে রাখবেন
ভ্রমণে কষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য সহনশীল ও সহযোগিতার মানসিকতা থাকতে হবে।
অবশ্যই গ্রুপ লিডারের নির্দেশ ও শিডিউল মানতে হবে। কোনোভাবেও গ্রুপ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না।
নিরাপত্তা বিঘিœত হয় কিংবা পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কিছু কোনোভাবেই করা যাবে না (এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ)।
অতিরিক্ত দু:সাহসিকতা দেখানো যাবে না।
এটি একটি পারিবারিক ট্যুর। পরুষ-মহিলা/ছেলে-মেয়ে যে কেউ এই ট্যুরে যেতে পারবে।
সাজেকে পানি স্বল্পতা রয়েছে। হোটেল-রিসোর্টগুলো টিনশেড ও বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি।
ব্যক্তিগত জিনিস বহনের জন্য কোনোভাবেও ট্রলি নেয়া যাবে না।
যেকোনো সময়ে ট্যুরের যেকোনো বিষয় পরিবর্তন হতে পারে।