তিনি কোনো পেশাদার সাপুরে নয়। এটা তার একধরণের নেশা। লোকজনের ঘরবাড়ি থেকে সাপ ধরে তিনি ওদের ছেড়ে দিয়ে আসেন কোনো নিরাপদ স্থানে। আর এতেই তার আনন্দ।
বলছিলাম এমএস বালাসুব্রামনিয়ামের কথা। তিনি পেশায় একজন ট্যাক্সিচালক।কিন্তু সাপ ধরাটা তার প্যাশন। অত্যন্ত বিনয়ী এই চালক আজ থেকে ৩০ বছর আগে সাপ ধরা শুরু করেছিলেন। তার বাড়ি ভারতের মহিসুর শহরে। সাপ ধরতে গিয়ে এরই মধ্যে চার চারবার সাপের কাপড় খেয়েছেন এই সর্প প্রেমিক। চিকিৎসকরা বলছেন, তার শরীরে আর সাপের বিষনাশক ঔষুধ প্রয়োগ করা যাবে না। এতে তার দেহে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, এমনকি তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এর অর্থ বালাসুব্রামনিয়ামকে আর একবার সাপে কাটলে তিনি মারা যাবেন-কেননা তার কোনো চিকিৎসা করে সম্ভব নয়। কিন্তু জীবনের এতবড় ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তিনি সাপ ধরার কাজ ছাড়েননি-নেশা তো সহজে ছাড়বার নয়।
জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই কাজ বেছে নিয়েছেন এই সাপুড়ে। তিনি বলেন,‘সাপ মানুষের মত বিষাক্ত নয়। ওরা আমার বন্ধু। তাই আমি সাপের কামড়ে ভয় পাইনা।’ তিনি আরো বলেন,‘মহিসুরের সব জায়গাতেই সাপ দেখতে পাওয়া যায়। আসলে আমরা হচ্ছি দখলদার- ওদের বাসস্থান কেড়ে নিয়েছি। এখন ওদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাইতো আমি নিরিবিলি ওদের নিরাপদ স্থানে রেখে আসার কাজ নিয়েছি।’
বালাসুব্রামনিয়ামের ধারণা, মহিসুরে ২৫ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এদের অনেকগুলোই নির্বিষ এবং এরা কারো কোনো ক্ষতি করেনা। যেমন বোয়া, বৃক্ষসাপ এবং ইঁদুর খেকো সাপ। তবে শহরটি এদের জন্য ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠছে। তিনি গত ৩০ বছরে যত সাপ ধরেছেন তার অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে গোখরা। এছাড়া অন্যান্য বিষাক্ত সাপও ধরেছেন তিনি।এই সরীসৃপটি সাধারণত: জনবসতির কাছাকাছিই থাকতে চায়। ঝোপঝাড় বা বালির মধ্যে লুকিয়ে থাকে। কোনো ধরনের আঘাত আসলেই কেবল তারা ছোবল মারে।
বালাসুব্রামানিয়াম শহরের বিভিন্ন ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্ম প্রতিষ্ঠান থেকে দৈনিক গড়ে ১০টি সাপ ধরে থাকেন। অকুতোভয় এই সাপুরে অনেক সময় বিষধর গোখড়াদের মাথায় চুমুও খেয়ে থাকেন।এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করতে চান এগুলো তার কোনো ক্ষতি করবে না। ইদানিং তার ছেলেও সাপ ধরা শুরু করেছে। যদিও তিনি তাকে এ কাছে নিরুৎসাহিত করছেন। তিনি আরো বলেন,‘আমি তেমন ছুটিছাটা নেইনা। ব্যস্ততম দিনে আমি সাপ ধরার জন্য ২০ বারের মত ডাক পাই। তখন আমাকে ৮০ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে হয়। কোনো কোনো দিন আবার একটা মাত্র কল পাই। বেশিরভাগ দিনই ১০টির মত কল পাই। তবে সাপ ধরার কল পাইনি এরকম একদিনও হয়নি।’
লোকজনের ঘর-বাড়ি থেকে সাপ ধরলেও তিনি এ বাবদ কোনো পারিশ্রমিক নেননা। তবে তিনি সাহায্য নেন। ১০ থেকে ১০০ রুপি, যে যা দেয় আরকি। এ বিষয়ে তার যুক্তি হল, ‘আমি সাপ ধরা বাবদ লোকজনের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেই না। আমার ভয় হয়, টাকাপয়সা চাইতে শুরু করলে ওরা হয়ত আমাকে ডেকে নেয়ার বদলে সাপগুলোকে নিজেরাই পিটিয়ে মেরে ফেলবে।’