Skip to content

সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী মহাস্থানগড়, উচ্ছ্বসিত বগুড়া শহর

mohastangar

বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদ বগুড়ার মহাস্থানগড় সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেল। আজ সার্ক কালচারাল সেন্টারের ঢাকায় সফররত পরিচালক ওয়াসান্থে কোতুবেলার নেতৃত্বে সংস্থার একটি দল এ ঘোষণা চূড়ান্ত করে।

আগামী বছরের ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে আজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী মহাস্থানগড়ের নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে মহাস্থান গড় সুমহান ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর ফলে সারা বিশ্ব আমাদের এই প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবে। আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এর ফলে যেমন প্রসার পাবে, আবার এর মাধ্যমে পর্যটনের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক সাড়া মিলবে।’

২০১৫ সাল থেকে সার্ক কালচারাল সেন্টার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কোনো একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলকে সার্কের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে আসছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর ইংরেজি নামের আদ্যক্ষরের ভিত্তিতে দেশগুলোর স্থান বেছে নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য আফগানিস্তানের বামিয়ানকে গত বছর সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
মহাস্থানগড়কে যে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে, তা গত বছরই জানানো হয়েছিল বলে জানান বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন। ২০১৭ থেকে এক বছরের জন্য মহাস্থানগড় সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে থাকবে।

খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে মহাস্থানগড়ে মানববসতির চিহ্ন পাওয়া যায় বলে জানান এ অঞ্চলের প্রাচীন ঐতিহ্যের গবেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। মহাস্থানগড়কে সার্কের রাজধানী হিসেবে বেছে নেওয়ার ঘোষণাকে সঠিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সুফি মোস্তাফিজ বলেন, ‘কেবল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। এই সাংস্কৃতিক রাজধানীকে পর্যটন ও আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কাজে লাগাতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পর্যটন বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে।’

সংস্কৃতিমন্ত্রী জানান, সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হওয়ার পর মহাস্থানগড়ে সারা বছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। শুধু সেখানেই নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান চলবে। এসব অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক সম্ভারকে।

১৮৭৯ সালে প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম। পুণ্ড্ররাজ্যের রাজধানী বর্তমানের রাজশাহী, দিনাজপুর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সুফি মোস্তাফিজ বলেন, পুণ্ড্র সিলেট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে মনে করা হয়। তবে এর যথার্থ প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

বগুড়ায় আনন্দ মিছিল: সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করায় বগুড়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আনন্দের বন্যা বইছে। ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরে আনন্দ মিছিল বের করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এতে সাংস্কৃতিক ও নাট্যকর্মী এবং সংগঠকেরা ছাড়াও নানা পেশাজীবীরা অংশ নেন।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিন সন্ধ্যায় তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মহাস্থানগড়কে ঘিরে রয়েছে পুণ্ড্র সভ্যতার কয়েক শ বছরের ইতিহাস। সার্কের রাজধানী ঘোষণার ফলে মহাস্থানগড় বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দ্বার উন্মোচিত হলো। এর ফলে বগুড়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও আঞ্চলিক লোক ঐতিহ্য বিশ্বজুড়ে তুলে ধরা সহজ হবে। বিশ্বের নানা দেশ থেকে পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে। এতে শুধু বগুড়ার সংস্কৃতি বিকশিত হবে না, হোটেল-মোটেল ব্যবসা ও খাবারের হোটেল ব্যবসা, নকশিকাঁথা, হস্তশিল্পের বিকাশ ঘটবে। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু দই বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পাবে। এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি চাঙা হবে।

কবি ও লেখক তোফাজ্জল হোসেন (শোয়েব শাহরিয়ার ) বলেন, ইতিহাসের দলিল অনুযায়ী মহাস্থানগড়ে প্রাচীন ১৬টি সভ্যতার বিবর্তন ঘটেছে। ভারতবর্ষের সবচেয়ে পুরোনো এই সভ্যতা এত দিন সুপ্ত ছিল। সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণার মাধ্যমে এটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল এবং পুণ্ড্র নগরের প্রাচীন ইতিহাসের দ্বার উন্মোচিত হলো।

সার্ক কালচারাল সিটি ঘোষণায় আবেগাপ্লুত বগুড়া ইয়্যুথ কয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তৌফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘আশির দশকে ইয়্যুথ কয়্যারের মাধ্যমে বগুড়ার আঞ্চলিক গান দেশজুড়ে জনপ্রিয় করে তুলেছিলাম। এখন সার্কের রাজধানী হওয়ায় বিশ্বজুড়ে বগুড়ার সংস্কৃতি ও কৃষ্টি তুলে ধরা সহজ হবে।’

বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান বলেন, মহাস্থানগড়কে সার্কের রাজধানী ঘোষণা করায় শুধু সংস্কৃতিকর্মীরা নয়, বগুড়ার সর্বস্তরের মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সংস্কৃতিমন্ত্রীর প্রতি বগুড়াবাসী কৃতজ্ঞ। এর ফলে মহাস্থানকে ঘিরে ঘুমিয়ে থাকা কয়েক শ বছরের সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকশিত হবে। বগুড়ার সংস্কৃতির বিশ্বজুড়ে পরিচিতি ঘটবে।

আমরা কজন শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি আবদুস সামাদ বলেন, মহাস্থানকে সার্কের রাজধানী ঘোষণায় বগুড়ার সংস্কৃতিতে প্রাণ ফিরে পেল। স্থানীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বজুড়ে তুলে ধরার নতুন দিক উন্মোচিত হলো।

সাহিত্যিক বজলুল করিম বাহার বলেন, মহাস্থানগড়ের লুপ্ত সভ্যতা এত দিন ঘুমিয়ে ছিল। সার্ক কালচারাল সিটি ঘোষণায় নতুন সভ্যতা জেগে উঠবে। বগুড়ার আন্তর্জাতিক পরিচিত বাড়বে। বিদেশি পর্যটকের ভিড় বাড়বে। ভিনদেশের সঙ্গে বগুড়ার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কৃষ্টি-কালচারের বিনিময় ঘটবে। সূত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *