Skip to content

সাসটেইনেবল টুরিজম

মো. সাইফুল্লাহ
ঘোরাঘুরি যাঁদের নেশা, তাঁদের কথায় প্রায়ই একটা দীর্ঘশ্বাস খুঁজে পাওয়া যায়। কক্সবাজার, বান্দরবান, জাফলং, সুন্দরবনের মতো জায়গাগুলোতে পা রেখেই অনেকে বলেন, ‘নাহ, আগের মতো আর নেই।’ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে, দুর্গম এলাকাতেও আধুনিক হোটেল–মোটেলে হচ্ছে; থাকার সুব্যবস্থা। সবকিছু ‘আগের মতো’ যে থাকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কতটুকু বদলাবে? পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঠিক কতখানি বদলে গেলে প্রকৃতি–পরিবেশ–স্থানীয় সংস্কৃতি বাধাগ্রস্ত হবে না? দেশি–বিদেশি পর্যটকেরা কি এ নিয়ে ভাবেন? স্থানীয় লোকজনই বা নিজেদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে কতটা সচেষ্ট? সারা বিশ্বে এসব ভাবনা পরিচিত ‘সাসটেইনেবল টুরিজম’ নামে।

সহজ করে বললে, পর্যটনের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ভবিষ্যতেও একে টিকিয়ে রাখাই হলো ‘সাসটেইনেবল টুরিজম’।

Coxs-Bazar

পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন সভা–সেমিনার হচ্ছে, সেই সুবাদে ‘ইকো টুরিজম’ ব্যাপারটা মোটামুটি প্রচলিত। কিন্তু পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সৌন্দর্য বা ‘অকৃত্রিমতা’ সামনের দিনগুলোতেও অটুট রাখার কথা অনেকেই ভাবেন না। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী আখতারুজ জামান খান মনে করেন, দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
‘আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দ্রুত টাকা উপার্জনের কথা ভাবে। সুন্দর পরিবেশকে পুঁজি করে ব্যবসা করতে গিয়ে প্রকৃতির ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে কি না, সেটা অনেকের মাথায় থাকে না।

বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সৌন্দর্য অক্ষুণ্ন রাখাটা খুব কঠিন।’ বলছিলেন তিনি। পর্যটনের সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্রের আশপাশের স্থানীয় লোকজনের জীবনযাত্রাও একটা বিরাট ভূমিকা রাখে, সে কথাও বললেন তিনি।

মারমেইড ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ জানালেন, এ ব্যাপারগুলো তাঁদের কাছে সব সময় প্রাধান্য পায়। বলেন, ‘নারকেলবাগানের ভেতর আমাদের রিসোর্ট। কিন্তু আমরা খেয়াল রেখেছি, ঘরগুলোর উচ্চতা যেন নারকেলগাছের চেয়ে বেশি হয়ে না যায়। নারকেলবাগান বাগানের মতোই থাকবে। আমাদের কর্মীদের মধ্যে শতকরা ৭০ থেকে ৮০ জন স্থানীয়। যেসব লোক এই এলাকায় একসময় বনের গাছ কেটে উপার্জন করত, আমরা তাদের বাবুর্চি বা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছি। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, আবার পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।’ পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়নের সঙ্গে স্থানীয় লোকের সম্পৃক্ততাও যে জরুরি, সেটা বোঝাতে গিয়ে সোহাগ উদাহরণ দিলেন, ‘এখানকার জেলেদের কাছ থেকেই আমরা তাজা মাছ কিনে আনছি। আশপাশের দশ কিলোমিটারের মধ্যে যাদের সবজির বাগান আছে, তারা আমাদের টাটকা সবজি সরবরাহ করছে।’ এর গুরুত্ব নিয়ে কথা বলছিলেন আখতারুজ জামান খানও। বলছিলেন, ‘পর্যটকেরা যেন স্থানীয় লোকদের “অপছন্দ বা হুমকির কারণ” হয়ে না যায়।’

পর্যটনকেন্দ্রগুলোর নীরব ক্ষতিগুলো হয়তো আমাদের চোখে পড়ছে না। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর, এমন কিছু যেন আমরা না করি। এই বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন গাইড টুরস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান মনসুর। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের কটকা বা কচিখালির মতো সংবেদনশীল জায়গাগুলোতে যদি বড় বড় লঞ্চ নিয়ে ২০০ থেকে ৪০০ পর্যটক নিয়মিত যায়, একসময় বাধ্য হয়েই হয়তো সেখানকার জীবজন্তুরা ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে শুরু করবে। ফলে একসময় পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাবে। কক্সবাজার, শ্রীমঙ্গল, কুয়াকাটার মতো জায়গাগুলোতে যেমন আবর্জনা একটা বড় হুমকি। পর্যটকেরা যদি এসব স্থান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হবে।’ এসব ভাবনা মাথায় রেখে বেড়ানোর ক্ষেত্রে পর্যটকদের একটা ছোট্ট পরামর্শ দিলেন তিনি, ‘ফেলে আসব পায়ের ছাপ, আর নিয়ে আসব স্মৃতি।’ পরিবেশের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে বাধাগ্রস্ত না করলে তবেই তো পর্যটনশিল্পে সাফল্য আসবে। সূত্র : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *