
স্টেফান ক্র্যোপলিন
আজকের সাহারা মরুভূমি এককালে সবুজ, উর্বর এক জনবসতি ছিল। আফ্রিকার দক্ষিণ অংশ থেকে আদি মানব এখান দিয়েই ইউরোপে রওয়ানা হয়েছিল। জার্মানির এক গবেষক ৪ দশক ধরে সেই অঞ্চলে কাজ করছেন।
সাহারা মরুভূমির মাঝে এই এলাকা আয়তন প্রায় সুইজারল্যান্ডের মতো বড়। বাতাসের ধাক্কায় স্যান্ডস্টোন বা বেলেপাথরে ক্ষয়ের ফলে সেখানে অপূর্ব এক নিসর্গ সৃষ্টি হয়েছে। সরু খাদ, ছোট নদী ও অসংখ্য জলাধারে ভরা আশ্চর্য প্রকৃতি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মরুভূমির মাঝে এমন এক জায়গায় হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ও প্রাণী আশ্রয় নিয়েছে। এই এলাকাকে ঘিরে ভূ-বিজ্ঞানী স্টেফান ক্র্যোপলিন-এর উৎসাহ-ঊদ্দীপনার শেষ নেই। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই অঞ্চল ও সেখানকার জলবায়ুর ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে বসেই এই বিজ্ঞানী অভিযানগুলির প্রস্তুতি নেন। অভিযানে যেসব নমুনা সংগ্রহ করেন, সেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে বিশ্লেষণ করেন। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে আদি মানুষ কীভাবে সাহারা অঞ্চল হয়ে ইউরোপে এসেছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন তিনি।
এ ক্ষেত্রে জলবায়ুর এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। স্টেফান ক্র্যোপলিন গবেষণার কাজে ৬০টিরও বেশি অভিযান পরিচালনা করেছেন। এর মধ্যে ঔনিয়াগা এলাকার হ্রদগুলি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। চার থেকে ১২ হাজার বছর আগে সাহারা অঞ্চল ছিল সবুজ ও উর্বর৷ সেখানে আরও বড় একটি হ্রদ ছিল। বর্তমানে তারই কিছু অংশ বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে রয়েছে।
হ্রদের তলদেশে মাটির মধ্যে সেই যুগের জলবায়ুর খতিয়ান লুকিয়ে রয়েছে। তাই গবেষকদের দল সেখান থেকে অসংখ্য নমুনা সংগ্রহ করেছে। ড্রিলিং কোরের মধ্যে ধাপে ধাপে অতীত যুগের চিত্র ধরা পড়ে। ভূ-বিজ্ঞানী স্টেফান ক্র্যোপলিন বলেন, ‘এই ড্রিলিং কোর নিঃসন্দেহে গোটা সাহারা অঞ্চলের জলবায়ুর ইতিহাসের সেরা সংগ্রহ। আমি বলবো, গত ১১,০০০ বছরে গোটা আফ্রিকার সেরা সংগ্রহ। এমনকি গোটা বিশ্বে এর তুলনা মেলা ভার।’
অতীত যুগের জলবায়ু সম্পর্কে আরও জ্ঞান অর্জন করতে স্টেফান ক্র্যোপলিন এনেডি মালভূমিতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর চিহ্নের খোঁজ করছেন। হাজার হাজার বছর আগে পাথরের উপর আঁকা ছবি এই এলাকায় মানুষের বসতির সাক্ষ্য বহন করে। সাহারা অঞ্চল তখন আর্দ্র, সবুজ ও জৈব বৈচিত্র্যে ভরপুর ছিল।
সাহারা সম্পর্কে স্টেফান ক্র্যোপলিনের উৎসাহ-উদ্দীপনার শেষ নেই। নভেম্বর মাসে তিনি আবার সেখানে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আবার স্থানীয় মানুষ ও উটের দলের সঙ্গে পাড়ি দেবার কথা ভাবলে রোমাঞ্চ হয়। পরিমিত জীবনযাপন সত্ত্বেও সেই নিসর্গে প্রতিটি প্রান্তের কোনো নতুনত্ব থাকতে পারে। সেটাই আমাকে টানে।’
স্টেফান ক্র্যোপলিন নিজের সম্পর্কে বলেন, ‘কোলন আমার প্রিয় শহর, কিন্তু আফ্রিকা আমার স্বভূমি।’ সৌজন্যে: ডয়চে ভেলে