Skip to content

সিলেটের স্বর্গ বিছানাকান্দি

বিছানাকান্দি শব্দের অর্থ পাথরের আঁটি বা গুচ্ছবদ্ধ পাথর। পাথরের এই রাজ্যে হিমালয় থেকে নেমে আসা হিম-শিতল পানি ও সিলেটের ঐতিহ্য সবুজ পাহাড়ি গাছের সারি। সবমিলিয়ে প্রাকৃতিক রূপ-বৈচিত্র্যের রূপকথার স্বর্গীয় রাজ্য।

কেন যাবেন

বিছানাকান্দি সিলেটের পর্যটন স্বর্গ। বাংলাদেশের সীমান্তঘেরা পাথরের বিছানা আর মেঘালয় পাহাড় ছুঁয়ে নেমে আসা ঠাণ্ডা পানির প্রবল স্রোত সঙ্গে পাহাড়ি সবুজের সমারোহ। আকাশের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড়ের সারি আর তার সঙ্গে পা ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া হিম হিম ঠাণ্ডা পানির স্রোত পা স্পর্শ করতেই মনে প্রশান্তি চলে আসবে। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোটবড় পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা বিছানাকান্দিতে সৃষ্টি করেছে এক মনোরম পরিবেশ, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান। সবকিছু মিলবে বিছানাকান্দিতে। যেমন- জাফলংয়ের মতো স্বচ্ছ পানি, পাথর আর পাহাড়ের মিলন, মাধবকুণ্ডের মতো ঝর্ণা, কক্সবাজারের মতো পানির ঢেউ, শীতল মিষ্টি পানি; এ যেন অনন্য। হিমালয়ের হিম-শিতল ঝর্ণার পানি থরে থরে সাজানো পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলে। ঠিক যেন একটি পাথুরে নদী।

Bichanakandi

যাতায়াত ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে সিলেটে আপনি ট্রেনে বা বাসে করে যেতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও ট্রেনে বা বাসে করে সরাসরি সিলেট যেতে হবে। সিলেট শহরের যে কোনো প্রান্ত থেকে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে যেতে হবে হাদার বাজার, ভাড়া বড়জোর ৫০০ টাকা। সিলেটের আম্বরখানা থেকেও যাওয়া যায় আলাদাভাবে। সেখানে প্রতি সিএনজিতে চারজন করে নেওয়া হয় হাদার বাজার পর্যন্ত। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার মতো। হাদার বাজার নেমে নৌকা ঠিক করতে হবে বিছানাকান্দি পর্যন্ত। ভাড়া পড়বে ৪০০-৫০০ টাকা আপ ডাউন। এ ছাড়া ইঞ্জিনচালিত রিজার্ভ নৌকাতে করেও যেতে পারবেন সহজেই। এ জন্য ভাড়া গুনতে হবে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০ মিনিট।

ব্যক্তিগতভাবে যাতায়াত

সিলেট শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি গ্রাম। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক ধরে সালুটিকর বাজারের ডান দিকে গাড়ি নিয়ে গোয়াইনঘাট লিঙ্ক রোড হয়ে দেড় ঘণ্টা গেলেই আপনি পৌঁছে যাবেন স্বপ্নের বিছানাকান্দি।

কোথায় থাকবেন

সিলেট শহরে এখন অনেক উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। বিছানাকান্দিতে দিনে গিয়ে দিনে ফেরা যায় সিলেট শহর থেকে। তাই সিলেট শহরেই থাকতে পারেন। শহরের নাইওরপুল এলাকায় অনেক অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ভাড়া ৩০০ থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত, নিরাপত্তাও ভালো আছে হোটেলগুলোতে। দরগাগেটে আরও কয়েকটি ভালো হোটেল রয়েছে। এ ছাড়া নলজুড়ি উপজেলা সরকারি ডাকবাংলোতেও রাত কাটাতে পারেন। এ জন্য পূর্ব অনুমতি থাকতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রুমপ্রতি ভাড়া ৫০০ টাকা। আর সাধারণের জন্য ১৫০০ টাকা।

Bichanakandi3

দর্শনীয় স্থান

বিছানাকান্দির এখানে-ওখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পাথর আর পাথর। দেখলে মনে হয়, কেউ হয়তো বিছিয়ে রেখেছে পাথরের বিছানা। এই পাথরের গা ছুঁয়ে জলরাশি ছুটে চলেছে পিয়াইন নদীতে। অনেক কষ্ট করে বিছানাকান্দিতে পৌঁছানোর পর এর স্বর্গীয় সৌন্দর্য দেখে নিমিষে পথের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। দূরের চেরাপুঞ্জি আর কাছের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার পানি ও পাথুরে বিছানাতে পা ফেলে পর্যটকরা বিস্মিত হয়ে যান। বিছানাকান্দির ওপারে ভারত অংশে উঁচু-নিচু পাহাড়ের সারি। সবুজ পোশাকের পাহাড়গুলো যেন দাঁড়িয়ে থাকে একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে। তখন মনে একটা কথাই বাজবে আমাদের দেশ অনেক সুন্দর। বিছানাকান্দি থেকে ঘুরে আসার পর দর্শনার্থীদের ছোটবেলার কবিতা মনে পড়বে- ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।’ কবিতার সঙ্গে ছবির অনেক মিল। কিন্তু এখানে সারাবছরই হাঁটুজল থাকে। আর বৃষ্টি হলে তো বিছানাকান্দির রূপ-বৈচিত্র্যই পাল্টে যায়। বৃষ্টির সময় বিছানাকান্দি অপরূপ সৌন্দর্যে সাজে।

তবে বিছানাকান্দি যাওয়ার সময় একটু কষ্ট করতে হয়। খারাপ রাস্তা আর বৃষ্টির জন্য বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। সিলেটের গ্রামগুলো দেখলে মনে হবে সবুজ বৃষ্টিতে ধুয়ে রেখেছে। চিকন রাস্তাগুলো সাপের মতোই আঁকাবাঁকা হয়ে গ্রামের মাঝ দিয়ে গেছে। তবে যত কষ্টই হোক না কেন, যেতে পারবেন। একটু কষ্ট না করলে অপরূপ সুন্দর উপভোগ করাই বৃথা। এত সুন্দর বিছানাকান্দি! খুশিতে সাত-পাঁচ না ভেবে নেমে পড়লে বিপদে পড়তে পারেন। স্রোতের শক্তি কল্পনা করতেও পারবেন না। ধপাস করে পাথরে আছাড় খেতে পারেন। তাই সাবধান। তবে শীতল জলের পরশে ক্লান্তি ভুলে যাবেন। স্রোত যেদিন বেশি থাকে সেদিন পানিতে নামা অবশ্যই বিপজ্জনক। যদিও অপরূপ পাথুরে নদীতে নামার ইচ্ছা দমিয়ে রাখা মুশকিল। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *