Skip to content

সিলেট সীমান্তের তিন ভ্রমণকন্যা

DTC-Travel-ad

মুস্তাফিজ মামুন
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তে অসাধারণ তিনটি ভ্রমণের জায়গা—পান্তুমাই, লক্ষণছড়া আর বিছনাকান্দি। সিলেট জেলার নবীনতম এ ভ্রমণ-গন্তব্য তিনটি গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তঘেঁষা। জায়গা তিনটি বর্তমানে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পাথর বিছানো প্রান্তরের উপরে বয়ে চলা মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝরনাধারাই এ জায়গা তিনটির মূল আকর্ষণ। ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন জায়গা তিনটি থেকে।

Sylhet

পান্তুমাই

পান্তুমাই ঝরনার রূপ দেখতে হলে গোয়াইনঘাটের হাদারপাড় হয়ে নৌকায় আসতে হবে। পাহাড়ি নদী পিয়াইনের আসল সৌন্দর্য দেখা যাবে এ ভ্রমণে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রাম পান্তুমাই। এর পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা পিয়াইন নদী। শীতে পাহাড়ি এ নদী শুকিয়ে গেলেও বর্ষায় জলে ভরা থাকে। পিয়াইনের এই জলধারার উত্পত্তি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশচুম্বী পাহাড়গুলোর ঝরনা থেকেই। পান্তুমাই গ্রাম থেকে আমরা এসব পাহাড়ের একটি ঝরনাই দেখতে পাই খুব কাছ থেকে। আমাদের দেশে এটি পান্তুমাই নামে পরিচিত হলেও এর ভারতীয় নাম ফাটাছড়া বড়হিল। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইস্ট খাসিয়া হিল জেলার পাইনেচুলা থানায় পাহাড়ি এ ঝরনাটির অবস্থান।

শীতে এ ঝরনায় পানি থাকে না বললেই চলে। বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী দুই মাস এ ঝরনা প্রাণ ফিরে পায়। পান্তুমাই গ্রাম থেকে পাহাড়ি এ ঝরনার মায়াবী রূপ দেখে যেকোনো পর্যটকেরই মন খারাপ হতে পারে। এত কাছে এসেও তাকে আরও কাছে থেকে না দেখতে পারার আফসোস নিয়েই তাই ফিরতে হবে সবাইকে। তবে পিয়াইনের স্বচ্ছ পানিতে অপরূপ এ ঝরনার প্রতিবিম্ব ছুঁয়েই সে আফসোসের কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব।

Sylhet2লক্ষণছড়া

পান্তুমাই থেকে পিয়াইন নদী ধরে হাদারপাড়ের উদ্দেশে ফিরতি পথে দেখা যাবে আরেকটি পাহাড়ি ঝিরি। এর নাম লক্ষণছড়া। এ ঝিরিটিও ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় থেকে এসে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের এ ঝিরিটি দেখতে হলে পিয়াইন নদী ধরে চলতে চলতে পূর্ব রুস্তমপুর প্রামে নামতে হবে। সেখান থেকে লক্ষণছড়া প্রায় বিশ মিনিটের হাঁটা পথ। তবে ভরা বর্ষায় এলাকার নিচু জমি ডুবে গেলে একেবারে লক্ষণছড়ার খুব কাছাকাছি ছোট ইঞ্জিন নৌকায় যাওয়া যায়। এখানে রুস্তমপুর গ্রামে ১২৬৬ নং সীমানা পিলারের পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে লক্ষণছড়া। পিলারের কাছে দাঁড়িয়ে একটু দূরে সবুজের মাঝে একটি বাঁকানো সেতু দেখা যায় ঝিরির উপরে। সেতুটি ভারতের মধ্যে। লক্ষণছড়ার পানিও বেশ শীতল। দুই দেশের বাসিন্দারা নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে এ ছড়ার পানিই ব্যবহার করেন। লক্ষণ ছড়ায় কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। পিয়াইন নদীর পাড়ে রুস্তমপুর গ্রামের মেঠো পথ ধরে লক্ষণছড়ায় হেঁটে যেতে ভালো লাগবে। ভারতের আকাশছোঁয়া পাহাড়ের পাদদেশে এ গ্রামটি ছবির মতো সাজানো।

বিছনাকান্দি

সিলেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ-গন্তব্য এটি। অতীতের জাফলংয়ের সাথে বিছনাকান্দির অনেকটাই মিল আছে। অস্বাভাবিকভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে জাফলং ধ্বংস হলেও বিছনাকান্দি এখনো ঠিকঠাকই আছে। সিলেট শহর থেকে সিএনজি চালিত অটো রিকশায় চড়ে আসতে হবে হাদারপাড় পোস্ট অফিস ঘাট। সেখান থেকে পিয়াইন নদী ধরে চলতে চলতে এক সময় চোখে পড়বে মেঘালয়ের আকাশছোঁয়া পাহাড়। বর্ষায় পিয়াইন থাকে পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ। তবে শীতে শুকিয়ে পানি তলায় ঠেকে। তখন পিয়াইন হেঁটেই পার হওয়া যায়। তবে বর্ষায় ভরা পিয়াইন নদীতে চলতে চলতে এর দুই পাশের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হবেন যে কেউ। এর চারপাশটাই যেন ছবির মতো। পিয়াইনে চলতে চলতে দূরে দেখা যাবে আকাশে হেলানো উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। চারপাশের চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে এক সময় এই পাহাড়ের কোলে এসে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ পাথর কেয়ারি। বর্ষায় পাথর কেয়ারি পানিতে ডুবু ডুবু। এখান থেকে একটু সামনেই সীমান্তঘেঁষা পাথর-জলের বিছনাকান্দি।

Sylhet3

প্রয়োজনীয় তথ্য

বিছনাকান্দির বিছানা বাংলাদেশ আর ভারত মিলিয়ে। স্বাভাবিকভাবে সীমানা চিহ্নিত করা নেই এখানে। জায়গাটিতে তাই সাবধানে বেড়ানো উচিত। বাংলাদেশ অংশ ছেড়ে ভারত অংশে চলে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। সাঁতার জানা না থাকলে এ ভ্রমণে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নেওয়া উচিত। তাছাড়া ভ্রমণে গিয়ে কোনো বর্জ্য জায়গাটিতে ফেলে আসবেন না। গোয়াইনঘাটের হাদারপাড় থেকে নৌকা নিয়ে প্রথমে দেখতে পারেন পান্তুমাই, তারপরে লক্ষণছড়া এবং শেষে বিছনাকান্দি।

কীভাবে যাবেন

বিছনাকান্দি যেতে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহরে। সড়ক, রেল ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট আসতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে আসা যায়। ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রিন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া, এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮০০-১১০০ টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের পরিবহনের নন এসি বাস সিলেটে যায়। ভাড়া ৪০০-৪৫০ টাকা। এনা পরিবহনের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে টঙ্গী ঘোড়াশাল হয়ে সিলেট যায়।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৫০-১০১৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫-১১৯১ টাকা।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন যায় সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে।

Sylhet4

সিলেট শহর থেকে অটো রিকশায় প্রথমে আসতে হবে হাদারপাড়। হাদার পাড়ে যাওয়ার সহজ পথটি হলো শহর থেকে মালনিছড়ার পথে ওসমানী বিমানবন্দরের পেছনের ভোলাগঞ্জের সড়ক ধরে। তবে এ সড়কটি বর্তমানে বেহাল। পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তায় প্রচুর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ পথে সেডান কার কিংবা মাউক্রোবাস নিয়ে যাওয়া দুষ্কর। এ পথে সবচেয়ে সহজ ও সুবিধা হলো অটোরিকশা। সিলেট শহর থেকে হাদারপাড়ের যাওয়া আসার অটো রিকশা ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা। একটি অটোরিকশায় সর্বোচ্চ ৫ জন যাওয়া যায়। হাদারপাড় বাজারের পোস্ট অফিস ঘাট থেকে জায়গা তিনটি ভ্রমণের পর্যটক নৌকা পাওয়া যায়। ১০-২০ জন চলার উপযোগী একটি নৌকার ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা। নৌকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে ০১৭১২৯৭২৫৯৮।

কোথায় থাকবেন

বিছনাকান্দি ও আশপাশে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সিলেট শহর থেকে খুব সকালে গিয়ে সারাদিন বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে হবে সিলেট শহরেই। এ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। শহরের শাহজালাল উপশহরে হোটেল রোজ ভিউ (০৮২১-৭২১৪৩৯), দরগা গেইটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক (০৮২১-৭২৭৯৪৫), ভিআইপি রোডে হোটেল হিলটাউন (০৮২১-৭১৬০৭৭), বন্দরবাজারে হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল (০৮২১-৭২১১৪৩), নাইওরপুলে হোটেল ফরচুন গার্ডেন (০৮২১-৭১৫৫৯০), জেল সড়কে হোটেল ডালাস (০৮২১-৭২০৯৪৫), লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন (০৮২১-৮১৪৫০৭), আম্বরখানায় হোটেল পলাশ, (০৮২১-৭১৮৩০৯), দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেইট (০৮২১-৭১৭০৬৬), হোটেল উর্মি (০৮২১-৭১৪৫৬৩), জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট (০৮২১-৭১৪৮৫০), তালতলায় গুলশান সেন্টার (০৮২১-৭১০০১৮) ইত্যাদি ছাড়াও সিলেট শহরের সব জায়গায় বেশ কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ১০০০-১০,০০০ টাকায় বিভিন্ন মানের কক্ষ আছে। সৌজন্যে : ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *