Skip to content

সুদর্শন ক্যালিয়ান্ড্রা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জোহা হলের পাশে ফুটেছে ক্যালিয়ান্ড্রা ফুল। ছবি : লেখক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জোহা হলের পাশে ফুটেছে ক্যালিয়ান্ড্রা ফুল। ছবি : লেখক

মোকারম হোসেন
ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানো শীতে রাজশাহী গিয়েছিলাম বেড়াতে। পদ্মার পাড়, বরেন্দ্র অঞ্চলের কাঁকনহাট ও পুঠিয়া রাজবাড়ি ঘুরে দেখার পর ভ্রমণসঙ্গী যুবায়ের ভাই বললেন, এবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষশোভা উপভোগ করা যাক। নিঃসন্দেহে উত্তম প্রস্তাব। সানন্দে সম্মত হই। ক্যাম্পাসের বৃক্ষশোভিত নানা স্থাপনা আর পথঘাট মাড়িয়ে একসময় পেঁৗছে যাই একেবারে উত্তর প্রান্তে; শহীদ জোহা হলের পাশে। সেখানে আছে একটি শহীদ স্মৃতিফলক। একাত্তরে হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই নির্মাণ করা হয়েছে এই স্মারক। আমরা যখন সিঁড়ি ভেঙে মূল বেদির দিকে এগিয়ে যেতে থাকি, তখনই কানে আসে অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির শব্দ। ওদের এ উৎসব দু’পাশের দুই সারি ক্যালিয়ান্ড্রার ফুল নিয়ে।

অসংখ্য পুরুষ আর স্ত্রী নীলটুনি পাখি জড়ো হয়েছে ফুলের মধু খেতে। ওরা শৈল্পিক ভঙ্গিতে এক ফুল থেকে আরেক ফুলে উড়ে গিয়ে লম্বাটে বাঁকানো ঠোঁট দিয়ে মধু খাচ্ছে। দেখে বেশ মজাই লাগল। সবচেয়ে আনন্দের কথা, ওরা একটি বিদেশি ফুলের সঙ্গে নিজেদের ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। জানামতে, ক্যালিয়ান্ড্রা ফুলের এ দুটি বীথিই বেশ দীর্ঘ। তা ছাড়া ঢাকায় রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ধানমণ্ডি, উত্তরাসহ অনেক স্থানেই চোখে পড়ে। ইদানীং আলঙ্কারিক বৃক্ষ হিসেবেও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।

যেসব ফুলের রূপ আছে কিন্তু সুবাস নেই, ক্যালিয়ান্ড্রা সে দলের। নাম দেখেই বোঝা যায়, ফুলটি আমাদের দেশি নয়; সুদূর ব্রাজিল তার জন্মস্থান। সেখান থেকে কখন কীভাবে আমাদের দেশে এসেছে, তা এখন আর জানা যায় না। ঢাকার পার্ক ও উদ্যানগুলোতে পরিকল্পিতভাবে অনেক গাছ রোপণ করা হয়েছে। রমনা পার্কের অরুণোদয় ফটকের কাছে একটি বড় গাছ আছে। এদের সাদা ও লাল রঙের ফুলের মধ্যে তুলনামূলক লাল রঙের ফুল বেশি দেখা যায়। গাছ দেখতে অনেকটা মৃতবৎ, সারাবছরই পাতার সংখ্যা কম, কাণ্ড ও ডালপালা গিঁটযুক্ত এবং মেটে রঙের। এই হতশ্রী অবস্থা থেকে নিজেকে আড়াল করতেই প্রায় সারাবছর ফুল ফোটে।

গাছ দেড় থেকে দুই মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। যৌগপত্র ২-পক্ষল, দুই থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা, ৮ থেকে ১০ জোড়া ছোট পত্রিকা থাকে, তিন থেকে ছয় মিলিমিটার লম্বা। পাতার গড়ন অনেকটা আমাদের কালকাসুন্দার মতো। তবে আকৃতিতে বেশ ছোট। সাদা ও গোলাপি রঙ মেশানো ফুলগুলো (ঈধষষরধহফৎধ নৎবারঢ়বং) প্রায় সারাবছরই ফোটে। তবে সংখ্যাধিক্যে শীতকালপ্রধান। দেখতে আলাদা মনে না হলেও একটি ফুল মূলত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক ফুলের সমষ্টি। ডালের আগায় প্রায় পাঁচ সেন্টিমিটার চওড়া ফুলগুলো অনেক দূর থেকেই নজর কাড়ে। ফুলের ছড়ানো পুংকেশরই তার আকর্ষী অংশ। ঈ. যধবসধঃড়পধঢ়যধষধঃধ প্রজাতির ফুল লাল, পাতা অভিন্ন, ২-পক্ষল, প্রত্যেক পক্ষে ৮ থেকে ১০ জোড়া পত্রিকা থাকে। শরৎ ও শীতকালে বেশি ফুল ফোটে। লাল ফুলের আরেকটি প্রজাতি হচ্ছে ঈ. বসধৎমরহধঃধ। পাতা যথারীতি ২-পক্ষল, যৌগপত্র খুব খাটো, প্রতি পক্ষে তিন পত্রিকা, নিচের পত্রিকা ছোট, ওপরের দুটি বড়। বেশি ফুল ফোটে গ্রীষ্ম ও বর্ষায়। লাল ফুলগুলোর পার্থক্য অতি সূক্ষ্ম। সহজে বোঝা যায় না। বংশবৃদ্ধি বীজ ও কলমে। সৌজন্যে : সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *