Skip to content

সুন্দরতম গ্রাম লোহ, সামনে চোখ ধাঁধানো মানাসলু

:: রিয়াসাদ সানভী ::

অন্য রকম এক সকাল নামরুংয়ে। ট্রেকে প্রথমবারের মতো প্রায় হাত ছোঁয়া দূরত্বে বরফ চূড়া। প্রথম সূর্যের ছটা লেগেছে তার গায়ে। যদিও পাথুরে শরীরে শুভ্রতা অতটা নেই। হাড় কাঁপানো শীত। নিচে ফ্লিচের জ্যাকেট উপরে উইন্ড ব্রোকার চাপিয়ে নিলাম। কিন্তু খুলতে হলো আধঘণ্টার মধ্যেই। নামরুং ছাড়িয়ে কিছুদূর যেতেই শুরু হলো চড়াই।

দূরপাহাড়ে লোহ গ্রামপ্রথমবারের মতো টের পেলাম আমরা এখন হাই অল্টিচিউডে আছি। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হচ্ছে। চড়াইয়ের মাথায় বৌদ্ধ গোম্ফা থেকে ভেসে আসছে গম্ভীর প্রার্থনার সুর। আমরা লিহিতে প্রবেশ করলাম। তিব্বতিয়ান রীতিতে প্রার্থনা পতাকা উড়ছে। প্রেয়ার হুইলও ঘুরিয়ে দিলাম। গরম চায়ের পর আবার পথে। তিন হাজার মিটারের উপরে প্রাকৃতিক ভূ-বৈচিত্র্যের চিহ্ন এখন স্পষ্ট। বৃক্ষ বিরল হয়ে আসছে। চারপাশে বিরান রুক্ষতা।

ঘণ্টাখানেক হাঁটার পরই দিগন্ত আড়াল করে বরফের প্রহরীর দাঁড়িয়ে থাকার আভাস পাওয়া গেলো। সঙ্গে থাকা আমাদের গাইড জানালেন এর নাম নাইকে। আরও কিছুক্ষণ হাঁটার পরই অবশেষে দেখা দিলেন তিনি। চোখের সামনে বিশ্বের অষ্টম উচ্চতম শিখর মানাসলু। আমাদের উত্তেজনা শিখর ছোঁবে। ঝটপট ক্যামেরার শাটার পড়ছে। আজকের গন্তব্য মানাসলুর ঠিক নিচের গ্রাম সামারগাও।

বহুদূরে ধোঁয়াটে মেঘের দিকে ইঙ্গিত করে মুহিত ভাই সামারগাওয়ের অবস্থান বুঝিয়ে দিলেন। দিগন্তের পটভূমিজুড়ে এখন মানসলু ও চারপাশে তার সহচরদের আনাগোনা। এর অবস্থান এক কথায় রাজসিক। আকাশের দিকে মুখে করে সটান দাঁড়িয়ে শীর্ষবিন্দু। পৃথিবীর ১৪টি আট হাজার মিটারি পর্বতের অনেকগুলোকে কেন্দ্র করে পরিক্রমা পথ আছে। যেমন অন্নপূর্ণা সার্কিট কিংবা ধওলাগিরি সার্কিট।

মানাসলুকেও কেন্দ্র করে চারপাশ ঘিরে ট্রেক করা যায়। আমাদের অভিযানের একটি লক্ষ্যও কিন্তু মানাসলু সার্কিট ট্রেক করা। অন্নপূর্ণার মতো এতটা জনপ্রিয় না হলেও মানাসলু সার্কিট ট্রেকের বৈচিত্র্য কিন্তু ব্যাপক। বিশেষ করে এর শুরু মাত্র ৬২৫ মিটার উচ্চতা থেকে। ফলে সর্বোচ্চ উচ্চতা ৫ হাজার ১০৬ মিটারের লারকে পাস পর্যন্ত গিয়েই হিমালয়ের মানুষ, প্রাণী, আবহাওয়ার উচ্চতার স্তর অনুযায়ী পরিবর্তনের বিষয়গুলো খুব ভালো অনুভব করতে পারবেন।

লোহ বেশ বড় জনপদ। এখানে অনেক লজ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে মানাসলুর অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায়। লজের আঙিনায় খেতে খেতেই অপার্থিব এ দৃশ্য উপভোগ করা যায় এখান থেকে। আমরাই বা এ সুযোগ ছাড়ি কেন। লজের ছাদে ক্যামেরা নিয়ে ছুটে গেলাম। নিচের পুরো উপত্যাকা ছবির মতো দৃশ্যপটে হাজির হয়েছে। পুরো মানাসলু সার্কিটে একে সুন্দরতম একটি গ্রামের সার্টিফিকেট অনায়াসে দেওয়া যায়। দারুণ স্বাদের লাঞ্চ এ সুন্দরকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মহিষের মাংস, মাশরুমের সবজি, ডাল সব কিছুই ছিল একশোতে একশো। লোহ পরিপূর্ণতায় ভরিয়ে দিলো। ট্রেকার দল।

কিন্তু এই অনুভূতি নিয়ে পরবর্তী গন্তব্য শায়েলা অবধি যেতে চাইলে কিন্তু ভুল করবেন। এরপর মোটামুটি পুরো পথটিই চড়াই। এই উচ্চতায় চড়াই ভাঙা সোজা কাজ না। তাও আবার ভরা পেটে। আস্তে আস্তে এগোতে লাগলাম। লিহির এক জায়গা থেকে রাস্তা ভাগ হয়ে চলে গেছে হিমাল চুলি বেস ক্যাম্পের দিকে। শেষ চড়াইয়ের আগে আবার বেশ খানিকটা নিচের দিকে নেমে যেতে হয়।

তারপর একটানে শায়লার দিকে উপরে উঠে যাওয়া শুধু। একটা বনের মধ্যে দিয়ে গেছে পথটুকু। দৈত্যাকৃতির গাছগুলোর গায়ের বিচিত্র বর্ণের মস ফার্ন সৃষ্টি করেছে অদ্ভুত দৃশ্যপটের। হলিউডের ফ্যান্টাসি সিনেমার সেট অনেকটা এরকম হয়। আমরা অবাক বিস্ময়ে সেসব দেখতে দেখতে আর হাঁপাতে হাঁপাতে শেষমেশ উঠে এলাম শায়লা। শায়লার চারিদিকে সব জায়ান্ট পর্বত।

সোজা উত্তর দিকে সামদো, খায়াং, সাউলা পর্বত।

সবগুলোই ছয় হাজার মিটারি। মুহিত ভাই জানালেন এরপর তেমন চড়াই নেই। শায়লায় বেশিক্ষণ দাঁড়ানো হলো না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সামারগাওতে পৌঁছানো লক্ষ্য। এখানে এসেই খেয়াল করেছিলাম বেশ ঠাণ্ডা লাগছে। রোদ পড়ে এসেছে।

আর এখানকার নিয়ম অনুযায়ী মেঘেরাও চারপাশ থেকে এসে হাজির। আমরা আরও প্রায় ঘণ্ট দেড়েক হেঁটে অবশেষে পৌঁছে গেলাম সামারগাও। সৌজন্যে : বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *