Skip to content

সুন্দরবনে বিপন্ন প্রাণী বাটাগুর কাছিম

গৌরাঙ্গ নন্দী
বাংলাদেশে ২৯ প্রকারের কাছিম পাওয়া যায়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি রয়েছে মহাবিপন্ন তালিকায়। এরই একটি কাঠা বা বাটাগুর বাসকা। আশার কথা, শুধু সুন্দরবনেই এখন এই প্রজাতির কাছিম পাওয়া যায়।

Turtel

বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কাছিমটি শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা বিশ্বেই মহাবিপন্ন। স্থানীয় ভাষায় একে বোদো কাইট্টা বা কাঠা বলে। ‘বাটাগুর বাসকা’ এর বৈজ্ঞানিক নাম। এর ইংরেজি নাম ‘নর্দান রিভার তেরাপিন’। ম্যানগ্রোভ বা বাদাবন এই প্রজাতির কাছিমের অতি প্রিয় বাসস্থান। এরা সুন্দরবনের কেওড়া ফল খাবার হিসেবে খায় এবং এর বীজ বনের নানা জায়গায় ছড়িয়ে দেয়। এভাবে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র (ইকোলজি) টিকিয়ে রাখতে কাছিম বিশেষ ভূমিকা রাখে।

দুনিয়ার অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলেও আগে এই প্রজাতির কচ্ছপ দেখা যেত। ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল থেকে এরই মধ্যে এই প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বলা হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ে কাজ করা সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) মহাবিপন্ন তালিকায় এই বাটাগুরের নাম রয়েছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুসারে রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল ১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বাটাগুরের দেহ অপেক্ষাকৃত বড়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৮ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। নারী বাটাগুরের মুখ সাদাটে রঙের হয়, বিপরীতে পুরুষ বাটাগুরের মুখ হয় কালচে রঙের। পুরুষ বাটাগুর উপকূলীয় এলাকা ছেড়ে উজানের দিকেও যায়। প্রজনন ঋতুতে এরা নদী থেকে উপরে চলে আসে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে এরা ডিম পাড়ে। নদীচর এদের ডিম পাড়ার উপযুক্ত জায়গা। নারী কাছিম সাধারণত একসঙ্গে ৫০ থেকে ৬০টি ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বেরোতে সময় লাগে ৬০ থেকে ৬৬ দিন। এরা নোনা ও মিঠা-উভয় ধরনের পানিতে সমানভাবে অবস্থান করতে পারে। এ কারণে ঈষৎ নোনাযুক্ত পানি (ব্রাকিশ ওয়াটার) এদের অতি প্রিয় জায়গা। আগে ধারণা করা হতো, এরা মুক্তভাবে প্রজনন ও বিকশিত হতে পারে। কিন্তু না, গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে এই বাটাগুর প্রজাতির কাছিম ডিম দিয়েছে এবং বাচ্চাও ফুটেছে।

Advertisement

কাছিমের প্রধান খাবার পানিতে দ্রবীভূত পচা উদ্ভিদ ও প্রাণী। এ কারণে প্রাকৃতিকভাবে এরা পানি বিশুদ্ধকারী প্রাণী। এই প্রাণীটিকে রক্ষায় বাংলাদেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিক আইনেও নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। সাধারণভাবে এটি ধরা, বিপণন বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও এগুলো মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছে।

বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করেন এমন একটি সংগঠন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বেডস) প্রধান নির্বাহী মাকসুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাটাগুর বাসকা প্রজাতিকে স্থানীয় ভাষায় কাঠা বলা হয়। নারী বাটাগুরের মুখ সাদাটে রঙের হয়ে থাকে। এ কারণে এগুলো সাদা কাঠা নামেও পরিচিত। একসময় স্থানীয় বাসিন্দারা বড়শি দিয়েও এই সাদা কাঠা শিকার করেছে। সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামবাসীর কাছে এটি একটি আদরণীয় খাবার। তবে এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। একসময় এই অঞ্চলে বাড়িতে মাটির বড় পাত্রে বা পুকুরেও এই প্রজাতির কাছিম পোষা হতো।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *