বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্যের মধ্যে বিভিন্ন রাজবাড়ী ও জমিদারবাড়ী অন্যতম। প্রাচীন প্রত্নতাত্তি্বক নিদর্শন হিসেবেও এগুলোর গুরুত্ব অনেক। দৃষ্টিকাড়া এসব স্থাপত্যের বেশিরভাগই অযত্ন অবহেলায় ভগ্নদশার শিকার। কালের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা যে কয়টি রাজবাড়ী রয়েছে সেগুলোর প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের দাবি সচেতন মানুষের। দেশের ইতিহাসের উজ্জ্বল সাক্ষী রাজবাড়ী ও জমিদারবাড়ী নিয়ে আজকের প্রতিবেদন।
দিনাজপুর নাগ দরজার রাজবাড়ীর ভগ্নদশা
মোঃ রিয়াজুল ইসলাম
এক সময় ছিল তখন পায়ে জুতা, মাথায় ছাতা এমনকি গায়ে জামা-কাপড় পরে সজ্জিত হয়ে কোনো প্রজার পক্ষে রাজবাড়ী ও গেটের সামনের পথ অতিক্রম করার মতো ধৃষ্টতা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেউ এ অপরাধ করলে তার প্রাপ্য ছিল পাইক পিয়াদার হাতে জুতাপেটা বা লাঠি গুঁতার পুরস্কার। এ ধরনের অনেক কথাই শোনা যায়। এটি মোগল আমলের মধ্যযুগীয় স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন। হিন্দু-মুসলিম ও ইংরেজ এ তিন যুগের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের বিচিত্র দৃষ্টি নন্দন এর সমাবেশ এ রাজবাড়ীটি। রাজবাড়ী বর্তমানে চরম ভগ্নদশায় নিপতিত। উপমহাদেশ বিভাগের পর রাজবংশ উচ্ছেদ হয়। এর ফলে পরিত্যক্ত হয় রাজবাড়ীও। রাজবাড়ী অনধিক ৪০০ বছরের পুরাতন এবং মূল বাড়িটি ৩০ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। রাজবাড়ীর মূল ভবনগুলো সংস্কার আর অবহেলায় ভবনের লোহা-বিমসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে প্রতিনিয়তই।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেটের ট্রাস্টি সদস্য ও প্রেসক্লাব সভাপতি চিত্ত ঘোষ জানান, রাজবাড়ীর মূল মন্দিরগুলোর সংস্কার কাজ ট্রাস্টের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ২৮ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে। মন্দিরের টায়ালস, টিন পরিবর্তনসহ বিভিন্ন সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাজবাড়ীর মূল ভবনসহ বিভিন্ন ভবনগুলো লোহা-বিমসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হওয়ায় আজ ধংসস্তূপে পরিণত। মূল রাজবাড়ীতে একটি এতিম খানা ও বিদ্যাশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। অবৈধভাবে এতিমখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে যা দেশের পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইনের পরিপন্থী। সরকারিভাবে পুরো রাজবাড়ীটি এখনো সেভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এটা করা হলে পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করবে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, রাজবাড়ীর প্রধান দরজাটির নাম নাগ দরজা। এটি কৃষ্ণ পাথরে নির্মিত। দরজাটির চৌকাঠের উচ্চতা ছিল ৭ ফুট। এ উপমহাদেশে আর কোথাও সর্প মূর্তি দিয়ে এ ধরনের অদ্ভুত ভাস্ককর্যময় দরজা আছে বলে জানা যায়নি। বর্তমানে এটি ঢাকা জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। চারদিক থেকে সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা রাজবাড়ীর অনেক প্রবেশদ্বার। এরমধ্যে ধর্মাদেউড়ী, সিংহ দেউড়ী, বেলতলীর দেউড়ী (নাট মন্দিরে যাওয়ার দ্বার), ঠাকুরবাড়ীর দেউড়ী, হাতিশালার দেউড়ী, হীরাবাগ দেউড়ী অন্যতম। রাজবাড়ীর প্রধানত দুটি অংশ- আয়নামহল ও রানীমহল। এ ছাড়াও আছে ঠাকুরবাড়ী ও হীরাবাগ এলাকা। আয়নামহল দ্বিতল ভবন। এই ভবনের দোতলায় রাজদরবার, জলসাঘর, মিছিলঘর, অতিথি ভবন, সভাকক্ষ ও নিচতলায় রাজকীয় পাঠাগার, কোষাগার ইত্যাদি। রাজা প্রাণনাথ ও রাজা রামনাথের আমলে আয়নামহল নির্মিত হয়। এই মহলের অধিকাংশ কক্ষ ভেঙে পড়েছে। রানীমহলের চারদিকের ভগ্নমান প্রাচীরগুলো জরাজীর্ণ কিছু অস্তিত্ব ছাড়া সাবেক ভবন আর নেই। ত্রিশের দশকে তা ভেঙে ওই স্থানের ওপর আধুনিক ডিজাইনের দ্বিতল রানীভবন নির্মিত হয়। মূল প্রাসাদসহ বৃহত্তর রাজবাড়ীর প্রায় ১০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
মূল বাড়ি থেকে একটি বিশেষ দূরত্বে গভীর পরিখার দ্বারা বেষ্টিত আউটার রাজবাড়ী এলাকার আয়তন ছিল ৩০০ বিঘার মধ্যে। এই অংশে ম্যানেজার ভবনসহ উচ্চ পদস্থ আমলা কর্মচারীদের বাড়ি, রাজ অতিথি ভবন, পোস্ট অফিস, দাতব্য চিকিৎসালয়, আখড়া প্রভৃতি ছাড়াও কামার, ডোম, মেথরসহ পাইক-পিয়াদা, কোচোয়ান, দারোয়ান প্রমুখদের কলোনি ছিল। এরপরেও ছিল রাজকীয় ফুলবাগান, সবজি বাগান এবং পদ্ম সাগর, শুকসাগর, আনন্দসাগর, মাতাসাগর ও রামসাগর জাতীয় বৃহৎ দিঘি। এই রাজবাড়ীতে ১১ জনের মতো রাজা রাজত্ব করেন। শুকদেব, রামদেব, জয়দেব, প্রাণনাথ, রামনাথ, বৈদ্যনাথ, রাধানাথ, গোবিন্দনাথ, তারকানাথ, গিরিজিনাথ ও জগদীশনাথ। শেষ জগদীশনাথের এক ছেলে ছিল জলধিনাথ। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ১৯৪১ সালে জলধিনাথ প্রাণ হারান। রাজগদিতে উপবেশন না করলেও এই রাজকুমারই ছিল রাজবংশের শেষ উত্তরাধিকারী। বর্তমানে রাজবাড়ীর ভিতরে রাজার আমল থেকেই কান্তজিই মন্দিরে পূজা পার্বণ চলে আসছে এবং আরেকটি অংশে এখন নিয়মিত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। সংস্কার অভাবে ভগ্নদশা এবং রাজবাড়ীর এলাকায় বসতবাড়ি গড়ে উঠায় সংকুচিত হয়ে আসছে এর পরিধি যা একদিন রাজবাড়িটি শুধু ইতিহাসেই থাকবে।
অযত্নে ক্ষতিগ্রস্ত গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ী
খায়রুল ইসলাম
ভাওয়াল রাজবাড়ী। একদা ভাওয়াল রাজবাড়ী আজকে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এই ভবনটি আজও গাজীপুরবাসী তো বটেই, এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের কাছে ভাওয়াল রাজপরিবারের এক অনন্য স্মারক নিদর্শন।
ভাওয়াল রাজপরিবারের স্মৃতিবিজড়িত রাজবাড়ী একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল রাজা-গাজীদের স্মৃতিচিহ্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভাওয়াল রাজবাড়ী।
সচেতন সবার দাবি দৃষ্টিনন্দন এ রাজবাড়ীটি অবিলম্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে হস্তান্তর এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করে একে আকর্ষণীয় একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা।
জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, ভাওয়াল রাজবাড়ী নির্মাণ শুরু করেন লোক নারায়ণ রায় আর সমাপ্তি টানেন রাজা কালী নারায়ণ রায়। এটি একটি বিশাল আকারের ও অক্ষত রাজ প্রাসাদ। প্রায় ১৫ একর জমির উপরে এর মূল প্রাসাদ বিদ্যমান। ভূমি পরিকল্পনায় এটি অনিয়মিত আকারে তৈরি। এতে ছোট বড় মিলে ৩৬৫টি কক্ষ রয়েছে। উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত এর দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট এবং ত্রিতল বিশিষ্ট পরিকল্পনায় নির্মিত। দক্ষিণ দিকে মূল প্রবেশ দ্বার। প্রবেশ দ্বারটি বর্গাকার এবং এর চার কোণে ৪টি গোলাকার স্তম্ভ স্থাপন করে উপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশ পথের কামরার এক দিকের দৈর্ঘ্য ২০ ফুট এবং প্রবেশ দ্বারের পরে একটি প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে, এর পর হল ঘর। হল ঘরের পূর্ব ও পশ্চিমে ৩টি করে বসার কক্ষ রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী শাল কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয়। সম্মুখ ভাগের এই অংশ পরিচিত বড় দালান হিসেবে। ইউরোপীয় অতিথিদের জন্য বরাদ্দ ছিল। এই বড় দালানের পেছনে ছিল ১০০ বর্গ ফুটের একটি খোলা প্রাঙ্গণ।
প্রাঙ্গণের তিন দিক পূর্ব-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে ছিল আবাসনের জন্য নির্মিত বারান্দাযুক্ত কক্ষ। বারান্দা ছিল কক্ষসমূহের দিকে উন্মুক্ত এবং বারান্দাগুলোতে করিন্থিয়াস স্তম্ভের ওপর অর্ধবৃত্তাকার খিলান স্থাপন করা হয়েছিল। উপরে ফাঁকা লম্বাটে নকশা, স্তম্ভে ফুল, লতা ও লম্বা টানা নকশা ছিল। উত্তর প্রাঙ্গণের পুরো অংশজুড়ে ছিল ‘নাটমন্দির’ যা উৎসবের কাজে ব্যবহৃত হত। রাজবাড়ীর মধ্যে পশ্চিমাংশের (রাজদিঘির সংলগ্ন) দ্বিতল ভবনাংশের নাম ‘রাজবিলাস’ নিচে রাজার বিশ্রামের কক্ষ ‘হাওয়া মহল’ নামে পরিচিত ছিল। মধ্যের একটি দক্ষিণ দিক খোলা খিলানযুক্ত উন্মুক্ত কক্ষের নাম ছিল ‘পদ্ম নাভি’। এই অংশের কিছু পশ্চাতে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত আবাসিক ভবন রয়েছে। এই অংশটিকে রানীমহল অথবা বলা হয় অন্দরমহল। রানীমহলও দ্বিতল বিশিষ্ট করে নির্মিত।
তবে এখানকার বিশেষ বৈচিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো অর্ধবৃত্তাকার ব্যালকনি। একে হাওয়াই বারান্দা হিসেবে নির্মাণ করা হয়। এই অংশটি এই রাজপ্রাসাদের পশ্চিম সীমানায় যেখানে নিচু প্রাচীর ও ২০০ ফুট প্রশস্ত দিঘি আজও রয়েছে। দিঘিটি প্রাসাদের সুরক্ষা ব্যবস্থারই একটি অংশ। পশ্চিম পাশে ছিল বিশাল ঘাট। ১৮৮৭ সালে ও ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে রাজবাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের পর রাজবিলাসসহ অন্যান্য ইমারত পুনর্নির্মিত হয়। রাজেন্দ নারায়ণ রায় তা সংস্কার করেন।
১৯৮৪ সালের ১ মার্চ মহুকুমা থেকে গাজীপুর জেলা হিসেবে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও জেলার প্রশাসনিক ভবন ভাওয়াল রাজবাড়ীতে রয়ে যায়। আলাদা প্রশাসনিক ভবন না থাকায় জেলা কালেক্টরেট ভবন হিসেবে ভাওয়াল জমিদারবাড়ী বা রাজবাড়ীটি প্রতি বছর সংস্কারের ফলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সেই শাশ্বত রূপ প্রতিনিয়তই বিকৃত হচ্ছে। ঘরের ছাদে ফাটল দেখা দেওয়ায় নতুন করে জলছাদ করা হয়েছে। বারান্দার অনেক রেলিং ভেঙে গেছে বা খোয়া গেছে। দোতলায় উঠার মেহগনি কাঠের সিঁড়িতে প্রাচীনত্বের ছাপ লেগেছে। ঘরের আসবাবপত্র এখন আর একটিও নেই। এ রাজবংশ ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার পর থেকেই ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্রের অনেকগুলোই লোপাট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট যা ছিল সেগুলো নিলাম করে বিক্রি করা হয়েছে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মহসীন বলেন, সবচেয়ে বড় রাজপ্রাসাদ ভাওয়াল রাজবাড়ীর মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে এর অভ্যন্তরে ছোট ছোট পরিবর্তন করা হয়েছে যেটা সংরক্ষণকালে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় স্থানান্তরের জন্য ইতিমধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জের দুটি জমিদার বাড়ী যেন ধ্বংসস্তূপ
মো. কাবুল উদ্দিন খান
মানিকগঞ্জে দৃষ্টিনন্দিত কারুকাজ করা অনেকগুলো প্রাসাদসমৃদ্ধ দুটি জমিদারবাড়ী রয়েছে, একটি সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি জমিদারবাড়ী ৫.৮৮ একর জায়গায় অবস্থিত। আরেকটি শিবালয় উপজেলার তেওতা এলাকায় ৭.৭৫ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
বালিয়াটি জমিদারবাড়ীটি সংস্কারের অভাবে দৃষ্টিনন্দিত কারুকার্য খচিত দুর্লভ নিদর্শন হারাতে বসেছে। সময়োপযোগী পদক্ষেপ না নেওয়ায় দিনে দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় কমে যাচ্ছে, ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। সংকোচিত হচ্ছে বিনোদনের পরিধি।
অন্যদিকে তেওতা জমিদার বাড়িটি ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভবনগুলো দীর্ঘদিন বেদখল থাকার কারণে এ বাড়িটি সংস্কার করা হয়নি। ফলে এখানে সারাক্ষণ মাদক সেবন, বিক্রি ও অসামাজিক কাজকর্ম চলে বিনাদ্বিধায়। মানিকগঞ্জে কোনো বিনোদনের জায়গা নেই এই দুই জমিদারবাড়ীকে সংস্কার করে পর্যটন কেন্দ্র করা হলে বিনোদন পিপাসুদের পিপাসা মিটবে অন্য দিকে রক্ষা পাবে প্রত্নতত্ত্ব, সরকারের আয় হবে রাজস্ব।
সূত্রে জানা যায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি এলাকায় খ্রিস্টীয় উনিশ শতকে ইমারতগুলো নির্মিত হয়েছে। বালিয়াটি প্রাসাদ চত্বরটি চারদিকে প্রাচীর ঘেরা ৫.৮৮ একর জায়গার ওপর অবস্থিত। এখানে ৭টি প্রাসাদতুল্য ভবন রয়েছে। যার মধ্যে ২০০টি কক্ষ আছে। এই প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় একটি দৃষ্টিনন্দন রংমহল রয়েছে। এই রংমহলে জমিদার পরিবারের ব্যবহৃত নিদর্শনাদী প্রদর্শিত হচ্ছে।
মানিকগঞ্জে বিনোদনের তেমন কোনো জায়গা না থাকায় জেলার সব শ্রেণির লোকজন বিনোদনের জন্য এই জমিদারবাড়ীতে ভিড় জমায়। ঈদ, পূজা, নববর্ষসহ বিভিন্ন জাতীয় দিনগুলোতে লোক সমাগম হয় বেশি। তাছাড়া প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে লোকজন বেড়াতে আসেন। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বালিয়াটি জমিদারবাড়ীটি ধ্বংস হতে বসেছে। অনেকগুলো সুবিশাল ভবন থাকলেও মাত্র ১টি ভবন ছাড়া সবগুলোই ব্যবহারের অনুপযোগী। ভবনগুলোর এমন দুরবস্থা যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
অন্দরমহলে ৫টি পাকা ঘাট সমৃদ্ধ একটি পুকুর থাকলেও সুধু খননের অভাবে এটি পরিত্যক্ত রয়েছে। বালিয়াটি প্রাসাদের গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর ১৯৬৮ সালে (সংশোধিত ১৯৭৬) প্রত্নসম্পদ আইনে ১৯৮৭ সালে এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে। কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। এটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি তাদের। প্রায় সবগুলো দরজা-জানালা ভাঙা, বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে সাপের ভয়। ময়লা, নোংরা আবর্জনায় ভরা পরিবেশ। আগত দর্শনার্থীদের নেই কোনো বসার জায়গা, নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, আগতদের গাড়ি পার্কিং ও বসে খাবারের মতো কোনো জায়গা নেই।
বালিয়াটি জমিদারবাড়ীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যক্তি নুরুল হক জানান, প্রাচীর ঘেরা অনেকগুলো ভবনের মধ্যে মাত্র একটি ভবন ছাড়া সবগুলোই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দিনে দিনে স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় রাতে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে।
তিনি আরও বলেন আগতদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, সময় কাটানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে বিড়ম্বনার শিকার হন। সামনের বিশাল পুকুরটি উপজেলার কাছ থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে। পুকুরটি পাওয়া গেলেই আমরা নৌকার ব্যবস্থা করে দিব। দীর্ঘদিন পরে এবার কিছু সংস্কার হয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এখান থেকে সরকারের আয় হবে লাখ লাখ টাকা আর রক্ষা পাবে আমাদের দুর্লভ স্থাপনার নিদর্শন। ফলে দেশ-বিদেশের অতিথিদের আগমনে মুখরিত থাকবে পুরো এলাকা। অপর দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলায় তেওতা জমিদারবাড়ীটি ৭.৭৫ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত।
বংশানুক্রমে জমিদার জয়শংকর ও হেমশংকর দুই ভাই ১৯৪৭ সালে ভারতে চলে যায়। পরবর্তীতে সরকার অধিগ্রহণ করলেও সংস্কার না করায় অযত্নে অবহেলার কারণে বেশির ভাগ ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি রুমের দরজা জানালা ভাঙা, ভালো দরজা-জানালাসহ দুর্লভ নিদর্শনগুলো ইতিমধ্যেই চুরি হয়ে গেছে। এই তেওতা জমিদারবাড়ীতে ৫টি বৃহৎ ভবন রয়েছে আর এই ভবনগুলোতে ৫৫টি রুম আছে। মাত্র ১টি রুমে তেওতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম চলছে। বাকি রুমগুলো দখলদাররা দাপটের সঙ্গে ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যে প্রাচীন দুর্লভ নিদর্শনগুলো বেহাত হয়ে যায়। এখনো কোটি কোটি টাকার অমূল্য সম্পদ রয়েছে এসব সংরক্ষণ করে পর্যটন শিল্প গড়ে তুললে অনেক টাকা রাজস্ব আয় হবে।
আসল চেহারায় ফিরছে মুক্তাগাছার রাজবাড়ী
সৈয়দ নোমান
অযত্ন আর অবহেলা সত্ত্বেও কালের সাক্ষী হিসেবে কোনোমতে টিকে ছিল মুক্তাগাছার রাজবাড়ী। জরাজীর্ণ এ অবস্থা থেকে এ রাজবাড়ীটিকে আসল চেহারায় ফিরিয়ে আনতে শুরু হয়েছে পূর্ণোদ্যমে সংস্কার কাজ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে বছর খানেক যাবৎ সাজানো-গোছানো হচ্ছে পর্যটক তীর্থ এ রাজবাড়ী। এ সংস্কার কাজ শেষ হলে পুরনো আদলে আগের চেহারায় ফিরবে মণ্ডার উপজেলা হিসেবে পরিচিত এ রাজবাড়ীর জমিদারি জমানার স্মৃতি।
ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরবর্তী উপজেলার নাম মুক্তাগাছা। এ মুক্তাগাছায় ছিলেন ষোল হিস্যার জমিদার। ১৬ জন জমিদার মুক্তাগাছা অঞ্চল শাসন করতেন। মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী ছিলেন এর মধ্যে অন্যতম। তারই দত্তক পুত্র মহারাজ শশীকান্ত আচার্য্য চৌধুরী। মুক্তাগাছার দর্শনীয় স্থানগুলোর এ রাজবাড়ীটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
প্রায় ১০০ একর জমির ওপর রাজ পরিবারের ৩টি বাড়ির অবস্থান। এক নম্বর বাড়িটি ছিল মহারাজ সূর্যকান্তের। সম্মুখভাগের একতলা ভবনটি বেশ উঁচু ও উপরিভাগে নানা কারুকার্যখচিত রয়েছে। লোহার পাত ও কাঠের পাটাতনের ওপর এর ছাদ নির্মিত। এর চারপাশে ব্যবহৃত লোহার পাতেও রয়েছে নানা নকশাখচিত। এ রাজবাড়ীর ঠিক মাঝখানে রয়েছে শ্বেতপাথরের স্বয়ংক্রিয় ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চ, পাশেই নান্দনিক কারুকার্যখচিত রাজ রাজেশ্বরী মন্দির।
পেছনে আছে রাজ কোষাগার, টিন ও কাঠের সুরম্য দ্বিতল রাজপ্রাসাদ। রাজবাড়ীর সম্মুখভাগের বিশাল লোহার ফটক পেরোতেই সুউচ্চ করিডর। এর একপাশে ছিল রাজ দরবার ও দ্বিতল কাচারিঘর। আরেক পাশে লাইব্রেরি।
করিডোরের দুই পাশে ছিল হাতির ৬টি মাথার ওপর শিকার করা বাঘের নমুনা। রাজবাড়ী লাগোয়া বিশাল পুকুর। মন্দির ও যুগল মন্দিরসহ সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর এ বাড়িটি ঘুরে দেখলে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। জানা গেছে, সম্প্রতি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে মুক্তাগাছার ঐতিহ্য এ রাজবাড়ীটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এ রাজবাড়ীর মূল ভবনের মেরামত ও সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে লাগানো হয়েছে রং। বাদ বাকি কাজও চলছে জোরেশোরে। মুক্তাগাছা রাজবাড়ীর রঙ্গমঞ্চের পাশেই রাজেশ্বরী মন্দির। দরজায় জোড়া সিংহ ও জোড়া ময়ূরসহ সিমেন্টের ওপর নানা কারুকার্য খচিত রয়েছে। এর সম্মুখভাগের সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে। দামি টাইলসে সাজানো হচ্ছে মেঝে। রং ও কারুকার্যের সমন্বয়ে অতীতের আসল চেহারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, মুক্তাগাছার এ রাজবাড়ীটি দেখভাল করতে রয়েছে চারজন কর্মচারী। নান্দনিক স্থাপনাশৈলীর অনন্য নিদর্শন এ ঐতিহাসিক বাড়িটির ধ্বংসের প্রান্তসীমা থেকে রক্ষা করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মযজ্ঞ। ইতিমধ্যেই কোটি টাকার সংস্কার কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপের কাজও চলছে পুরোদমে। জমিদারদের জমিদারি বিলীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বহু বিষয়সম্পত্তি ও কারুকার্যের বাসভবন, মন্দির, নাটমহল, সান বাঁধানো ঘাটসহ মূল্যবান স্থাপনাগুলো হয়ে পড়ে জীর্ণ মলিন। ক্ষয়ে ক্ষয়ে হয়েছে কঙ্কাল। ভবনের ইট, সুরকি, আস্তর ধসে পড়েছে। দেয়াল ছাড়াই শুধু খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছে তাদের অতীত অস্তিত্বের।
কারুকার্য খচিত অট্টালিকাগুলোর মূল্যবান কাঠ, লোহা, পাথরসহ বিভিন্ন উপকরণ সুদূর চীন থেকে আনা হয়। আর তা গড়ার কারিগররাও ছিল সে দেশেরই। তাদের ফেলে যাওয়া কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ভুয়া ও জাল কাগজপত্র প্রস্তুত করে প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে গেছে। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নেওয়া হয়েছে জমিদারবাড়ীসহ রেখে যাওয়া অট্টালিকা, মন্দির ও তৎসংলগ্ন ভূমি।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের উদ্যোগেই পুরাতন আদলের নির্মাণশৈলী ঠিক রেখে সংস্কার করা হচ্ছে এ জমিদারবাড়ীটি। সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক জমিদারবাড়ী দর্শনে এসে বিমোহিত না হয়ে পারবেন না। সঠিক ব্যবস্থাপনা, সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হলে মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ী হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র । এলাকাবাসীরও দাবি একে পর্যটন জোন হিসেবে ঘোষণা করে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক।
ঐতিহ্য হারাচ্ছে নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী
মো. নাসিম উদ্দীন নাসিম
দিঘাপতিয়া রাজপ্রাসাদটি প্রাচীন স্থাপত্যকলার দৃষ্টিনন্দন এক নিদর্শন। প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সৌন্দর্যমণ্ডিত এই রাজবাড়ীটি শহরতলির দিঘাপতিয়া ইউনিয়নে আজও কালের সাক্ষী হয়ে উত্তরা গণভবন নাম নিয়ে দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। এই রাজবাড়ীতে এক সময়ে শোনা যেত নূপুরের ঝংকার আর সেই সঙ্গে মধুর কণ্ঠের সুর মূর্ছনা। ছিল পাইক-পিয়াদার কর্মচাঞ্চল্য, রাজ-রাজন্যবর্গের গুরুগম্ভীর অবস্থান। ছিল বিত্ত-বৈভবের ঝলক। এখন আর সেসব নেই। শুধুই কালের সাক্ষী হয়ে সেই দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীটি উত্তরা গণভবন নাম নিয়ে আজও স্মৃতি বহন করে চলেছে।
দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর সামনে গেলে সবাইকে থমকে যেতে হয় দৃষ্টিনন্দন সুদৃশ্য বিশাল এক সিংহ দুয়ার বা ফটক দেখে। সেই টকের ওপরে রয়েছে এক প্রকাণ্ড ঘড়ি যা দুই দিক থেকেই দৃশ্যমান। সাত দিনে একবার চাবি দিলেও ওই ঘড়িটি আজও সঠিকভাবে সময় নির্ণয় করে চলেছে। রাজবাড়ীতে প্রবেশের এটাই একমাত্র পথ। এ ছাড়া চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর এবং তারপর পরিখা। সারাটা রাজবাড়ীজুড়ে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানান বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজি।
দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা দয়ারাম রায়। দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা নাটোর রাজ্যের দেওয়ান দয়ারাম রায় ১৭০৬ রাজা রামজীবনের কাছ থেকে উপহার হিসেবে বাস করার জন্য যে জমি পেয়েছিলেন ১৭৩৪ সালে তার ওপরেই স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন এই দিঘাপতিয়া রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেন।
তিনি নাটোরের মূল শহর থেকে প্রায় দুই মাইল উত্তরে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে দিঘাপতিয়া ইউনিয়নে এই রাজপ্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পরে রাজা প্রমদা নাথ রায় ১৮৯৭ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত ১১ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রকর্ম শিল্পী আর দেশি মিস্ত্রিদের সহায়তায় সাড়ে ৪১ একর জমির ওপর এই রাজবাড়ীটি পুনর্নির্মাণ করেন। প্রাচীরে বাহিরের ফটকের সামনে রয়েছে আরও ২.৮৯ একর জমি।
দিঘাপতিয়া রাজের রাজা প্রমদা নাথ রায় চারদিকে সীমানা প্রাচীর দিয়ে পরিবেষ্টিত রাজ প্রাসাদের ভেতরে বিশেষ কারুকার্য খচিত মূল ভবনসহ ছোট-বড় মোট ১২টি ভবন নির্মাণ করেন। তিনি মোগল ও পাশ্চাত্য রীতির অনুসরণে কারুকার্যময় নান্দনিক ওই প্রাসদটিকে এক বিরল রাজ ভবন হিসেবে গড়ে তোলেন।
রাজবাড়ীতে মোট ১২টি ভবন রয়েছে আর এগুলো হচ্ছে প্রধান প্রাসাদ ভবন, কুমার প্যালেস, প্রধান কাচারিভবন, ৩টি কর্তারানী বাড়ি, প্রধান ফটক রান্নাঘর, মটরগ্যারেজ, ড্রাইভার কোয়ার্টার, স্টাফ কোয়ার্টার, ট্রেজারি বিল্ডিং ও সেন্ট্রি বক্স। মূল ভবনসহ অন্যান্য ভবনের দরজা-জানালা সব মূল্যবান কাঠে নির্মিত।
প্যালেসের দক্ষিণে রয়েছে পাথর এবং মার্বেল পাথরে কারুকাজ করা ফুলের বাগান। বাগানটি ইতালি গার্ডেন নামে পরিচিত। এই বাগানে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের দুর্লভ সব ফুলের গাছ। বাগানে ইতালি থেকে আনা শ্বেত পাথরের ৪টি নারী ভাস্কর্য এখনো পর্যটকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আকর্ষণীয় টাইপের ফোয়ারা এবং মাঝে মাঝে কারুকাজ করা লোহা ও কাঠ নির্মিত বেঞ্চ ও ডিম্বাকার সাইজের একটি মার্বেল পাথরের নির্মিত প্লাটফরম।
এ ছাড়াও ভেতরে রয়েছে আগত অতিথিদের চলাফেরার জন্য ৪ ফুট চওড়া রাস্তা। সমগ্র বাগানে বিরল প্রজাতির ফুল আর নামি-দামি গাছের সমাহার। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর মূল প্রাসাদটি একতলা। এতে রয়েছে প্রশস্ত একটি হলঘর। বেশ উঁচু হলঘরের শীর্ষে রয়েছে একটি প্রকাণ্ড গম্বুজ। এ গম্বুজের নিচ দিয়ে হলঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও হলরুমে কারুকার্য খচিত একটি বড় সোফা রয়েছে যাতে একসঙ্গে চারজন চারমুখী হয়ে বসা যায়। এই সোফায় বসলে দেয়ালে আটকানো বড় আয়নায় প্রত্যেকে প্রত্যেককে দেখতে পেতেন। উত্তরা গণভবনে উচ্চপর্যায়ের কোনো সভা হলে এ রুমেই হয়। উপরে রয়েছে ঝাড়বাতি। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীটি একসময় বিস্তীর্ণ এলাকার ক্ষমতার কেন্দ বিন্দু ছিল।
ঘাপতিয়া রাজবাড়ীর সেইসব রাজা-রানীর এখন আর কেউ নেই। আগের সেই গৌরবও আর নেই। গণভবন হলেও রাজবাড়ীটি এখন শুধুই মুকুটহীনভাবে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা হিসেবে পড়ে রয়েছে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন