Skip to content

সৌন্দর্যের আমিয়খুম

মো. জাভেদ-বিন-এ-হাকিম
খুম খুম খুম আমিয় খুম। এটি একটি আদিবাসী শব্দ। দেশকে যারা ভালবাসেন, দেশের উন্নয়ন নিয়ে যারা চিন্তা করেন, বিদেশ ভ্রমণের চাইতে মাতৃভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুসন্ধানে ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্য আমিয়খুম অনন্য নিদর্শন। পরিচিতজনের মাধ্যমে আমিয়খুমের সৌন্দর্যের বর্ণনা প্রায় ছয় মাস পূর্বে যখন জানতে পারি, সেই থেকেই শুরু আমিয়খুম যাওয়ার প্রস্তুতি। বান্দরবান বলতে অনেকেই মনে করেন দু-চারবার সেখানে গেলেই সব স্পট ঘুরে শেষ করা সম্ভব। ধারনাটাই সম্পূর্ণ ভুল, বান্দরবান এমন একটি জেলা যার পরতে পরতে ধারন করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে যেতে হবে কম করে হলেও শতবার।

amio-khum-falls

সেজন্য আমাদের এবারের অভিযান ছিল বান্দরবানের দূর্গম অঞ্চলের প্রকৃতি ও মানুষ। যত বেশি দূর্গম অঞ্চলে যাওয়া যাবে ততই মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকা যাবে। আরো বেশি পাহাড়ি মানুষের যাপিত জীবন সম্পর্কে নতুন ধারনা নেয়া যাবে। তাই পাঁচ বন্ধু এবার তিন রাত, দুইদিন পার করে গিয়েছিলাম অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের রানী আমিয়খুম। এর মধ্যে যাওয়া এবং ফেরার দিন দুইরাত কাটিয়েছিলাম আদিবাসী ত্রিপুরার যিন্নাপাড়ায়। রাতে পাড়ার বাসিন্দা বিলাসের ঘরে ছিলাম। সেখানটার নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা সবাই স্কুল-কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চলনে-বলনে আধুনিক অথচ পাড়ায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। খোলা আকাশের নিচে ঝোপ-ঝাড়ে প্রকৃতির ডাকের সমাধা করতে হয়। বিষয়টা অত্যন্ত বিচিত্রই বৈকি। শহর থেকে যাওয়া ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য বেশ বিব্রতকরও বটে।

বিলাসের ঘর থেকে খুব সকালে রওনা হলাম মূল গন্তব্যে। বাঁশের লাঠি সম্বল করে হেঁটে যাচ্ছি একের পর এক পাহাড় ডিঙ্গিয়ে। পথে কিছুটা বিশ্রাম নিলাম। বছর পাঁচেক যাবৎ গড়ে উঠা অতিরাম পাড়া। সেখান থেকে তাজিংডং পাহাড় দেখা যায়।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অতিরাম পাড়া পিছনে ফেলে আবার হাটছি। বিশাল-বিশাল পাহাড়, জঙ্গল, ঝিরি মাড়িয়ে হেটেই চলছি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা হাটার পর পাহাড়ের উপর হতে আমিয়খুম ঝর্নার পানির ছন্দের আওয়াজ ভেসে এল। এবার খাড়া এক পাহাড় হতে নিচে নামছি। প্রায় ত্রিশ মিনিট হাটার পরই পেয়ে গেলাম আমিয়খুম। এটা খুবই সুন্দর। এর দুইপাশে দিগন্ত ছোঁয়া খাড়া পাহাড়। সে পাহাড়ে বড় বড় গাঁছ, নিচে বিশাল বিশাল হরেক আকৃতির পাথর তার মাঝে বয়ে চলছে অবিরাম ধারায় আমিয়খুম জলপ্রপাত। হৃদয় ছোঁয়া প্রপাতের ছন্দময় শব্দ ভ্রমণের সব ক্লান্তি দূর করে দেয়। অনেকক্ষণ ছিলাম এখানে। তারপর ফিরলাম বিকালে।

যাতায়াত : ঢাকা থেকে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে বাসে চাঁদের গাড়িতে থানচি। থানচি থেকে ট্রলারে রেমাক্রি। রেমাক্রি থেকে পায়ে হেটে যিন্নাপাড়া, অতিরাম পাড়া হয়ে যাওয়া যাবে আমিয়খুম। সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *