Skip to content

স্বচ্ছ জলে ভাসুন…

তুরাগ নদের মিরপুর বেড়িবাঁধ অংশে এ রকম ময়ূরপঙ্খী ছাড়াও ছোট ছোট নৌকায় ঘোরা যাবে।

:: সুহাদা আফরিন ::
একটু বৃষ্টি হলেই জলজটে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। তারপরও ফুরসত পেলেই মনের আনন্দে জলে ভাসার সাধ অনেকের। কিন্তু সেই সাধ মেটে কেবল বিভিন্ন লেকের পানিতে প্যাডেল বোটে চড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা হয় স্বচ্ছ পানির চেয়ে গন্ধে ভেসে বেড়ানো। হোক, তবুও জলে তো ভাসা চাই। এখন বর্ষা মৌসুম। চারদিক থই থই জল। জলজট ও যানজটের এই শহরেও স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়ানোর ঠিকানা আছে।

তুরাগ নদীর মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বনভোজনে আসেন। বাদ্য বাজিয়ে, নৌকায় বা পাড়ে রান্না হয়। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো অনেকেই এ আনন্দে শরিক হন। গত শুক্রবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেছে, দিয়াবাড়ি ঘাটে যেন মেলা বসেছে। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। মিরপুরের শাহ আলী মাজারে এসেছেন অনেকে। আবার বনভোজনের দলও আছে। এই ঘাট থেকে একটু এগিয়ে নবাবের বাগ ঘাটে মহাসমারোহে রান্না হচ্ছে।

বনভোজনে আসা ইমরান হোসেন বললেন, তাঁরা ধামরাই থেকে এসেছেন বনভোজনের জন্য। স্থানীয় লোকজন একত্রিত হয়ে প্রতিবছর এখানে এসে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে ঘোরেন তাঁরা।

দূরদূরান্ত থেকে বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে অনেকেই তুরাগ নদে বনভোজনের জন্য আসেন।

বিকেলের হেলে পড়া সূর্যের আলো নদীর বুকে চিক চিক করছে। পাড়ে দাঁড়াতেই ঠান্ডা হাওয়া। ঘণ্টা হিসেবে নৌকা ভাড়া পাওয়া যায় এখানে। শ্রী কৃষ্ণ মণ্ডল হাতে বাওয়া নৌকার মাঝি। বিকেল হলেই তিনি লোকজনের জন্য অপেক্ষা করেন। এই মাঝি বলেন, ‘তাপ কমার পরই মানুষজন আইতে থাকে। সন্ধ্যার পরে আর চালাই না।’ হাতে বাওয়া নৌকায় ঘণ্টা হিসেবে নৌকা ভাড়া করা যাবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। ইঞ্জিনচালিত নৌকাও আছে। তবে এর ভাড়া বেশি। দরদাম করে ঠিক করে নিতে হবে। এ ঘাটেও দেখা গেল বনভোজনের দল।

রাজধানীর জুরাইন থেকে রোখসানা বেগম সপরিবারে এসেছেন। সারা দিনের জন্য ভাড়া করা নৌকাতেই রান্না ও খাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় তো অনেক ঘুরেছি। কিন্তু এখন তো বর্ষা ছাড়া সুযোগ হয় না।’

এ পাড়ে বেরাইদ, ওই পাড়ে ইছাপুর। বেরাইদ ঘাটে গিয়ে ঘোরা যাবে বালু নদে।

আশপাশটা শহর হয়ে ওঠার অপেক্ষায়। চারদিক এখনো ফাঁকা। ভাটারা হয়ে বেশ খানিক পথ যাওয়ার পরে একটু ঠান্ডা হাওয়ার পরশ লাগবে। সামনেই বালু নদ। নৌভ্রমণের জন্য জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়। বেরাইদ গ্রামে এ নদীর ঘাট। ওপারে ইছাপুর। নিত্য যাতায়াতকারী লোকজন তো আছেই। ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যাও কম হয়। শুক্র-শনিবারে ভিড়টা বেশি হয়। এখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা পাওয়া যায়। ঘণ্টা হিসেবে পুরো নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরতে চাইলে দরদাম করে নিতে হবে। তবে সন্ধ্যার পরে নৌকা চলে না। যানবাহনের প্যাঁ-পুঁ শব্দ নেই। চোখ ও মনের শান্তি মিলবে এখানে।

দুপুরের রোদ কিছুটা পড়তেই একদল কিশোর বুড়িগঙ্গার বছিলা অংশে ঘুরতে বেরিয়েছে।

বর্ষা এলেই বুড়িগঙ্গা যেন ভরা যৌবন ফিরে পায়। টলটলে পানির টানে অনেকেই বুড়িগঙ্গার বুকে ভাসতে চলে যায় মোহাম্মদপুরের বছিলায়। বছিলার প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পেছনেই মাঝিরা অপেক্ষায় থাকেন। দরদাম করে এক চক্কর ঘুরে আসা যায়। খুব কাছে বলে অনেকেই আসেন বছিলায় ঘুরতে। নগরজীবনের ছোঁয়া মাত্র গায়ে লেগেছে। বুড়িগঙ্গা হলেও এখানে গন্ধ নেই। আছে স্বচ্ছ পানি। চাইলেই সেই পানিতেই মনের আনন্দে ভেসে বেড়ানো যায়। সৌজন্যে: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *