Skip to content

স্বচ্ছ জলে সবুজ বনে

Bisanacandi

মোছাব্বের হোসেন
ভরা বর্ষায় কোথায় যাওয়া যায়—শুনেই সিলেটের বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেরে আলম আমন্ত্রণ জানালেন সিলেটে যাওয়ার। জানালেন আবহাওয়াও চমৎকার। ২৮ জুলাই রাতে সিলেটের বাসে উঠলাম স্ত্রী আইরিন আসাদকে নিয়ে। সকালে গিয়ে পৌঁছালাম। থাকার ঠিকানা সিলেট সার্কিট হাউসে। জানালা দিয়ে সুরমা নদীতে চোখ রাখতেই দেখি ঝিরঝিরি বৃষ্টি। মনটা কিছুটা দমে গেলেও আশা ছাড়লাম না। কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি থেমে গেলে মেঘলা আকাশ সঙ্গে নিয়েই যাত্রা শুরু করলাম বিছনাকান্দি আর পাংতুমাই ঝরনার দিকে। সঙ্গী হলেন আরাফাত হোসেন।

সিলেট শহর থেকে অটোরিকশায় বিছনাকান্দি যাওয়ার রাস্তাটা এতটাই খারাপ যে কিছুক্ষণ পরপর বিরক্তি লাগছিল। দেড় ঘণ্টার পথ পেরোনোর পরে ট্রলার ভাড়া করার সময় দেখলাম, মাথার ওপর সূর্য! আকাশও বেশ ঝকঝকে। পিয়াইন এলাকা থেকে নৌকা যাত্রা শুরু করল পাংতুমাই ঝরনার দিকে। ভরা বর্ষায় চারদিকে থইথই পানি। পাংতুমাই যাওয়ার পথে পথে রাখাল আর গরু-মহিষের পাল দেখা যায়। কোথাও কোথাও রাজহাঁসের পালও। ক্রমেই পাহাড়ের দিকে এগোতে থাকল নৌকা। দূর থেকে দেখতে কালো পাহাড় আস্তে আস্তে সবুজ হতে থাকল। ঘণ্টা খানেকের পথ শেষে দূর থেকে দেখা যেতে থাকল পাংতুমাই ঝরনা। এই ঝরনা ভারতের সীমান্তে হলেও কাছ থেকেই স্পষ্ট দেখা যায়। আরাফাত বললেন, ‘এর কাছে ঘেঁষা যাবে না। দূর থেকেই দেখতে হবে।’ কাছে গিয়ে দেখি, ছোট ছোট নৌকায় করে ঝরনার অনেকটা কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। নৌকা নিয়ে ঝরনার কাছে যেতেই মনটা কিছুটা বিষণ্ন হলো, এই ভেবে যে ঝরনাটা আমাদের সীমান্তে হলে সহজেই যাওয়া যেত!

Bisanacandi2 বিছনাকান্দির দিকে নৌকা ঘুরিয়ে নিলাম। ৪০ মিনিট পর পৌঁছালাম বিছনাকান্দিতে। গোয়াইনঘাট উপজেলার রস্তুমপুর ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা এ জায়গা এখন পর্যটকদের অনেক জনপ্রিয়। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোট-বড় পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতোধারা সৃষ্টি করেছে এক মনোরম পরিবেশ। ঘাটে নৌকা রেখে দল বেঁধে নামলাম বিছনাকান্দির টলটলে স্বচ্ছ পানিতে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার এই পানি বয়ে চলছে বিছানার মতো সাজানো পাথরের ওপর দিয়ে। শীতল এই পানিতে যে যার মতো নেমে গোসল করছেন। দূরে ভারতের একটা ঝরনাও দেখা যাচ্ছে। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে বড় বড় সবুজ গাছে ঘেরা পাহাড়। প্রাকৃতিকভাবেই বড় বড় পাথর রয়েছে এখানে। সেসবের ওপর দিয়ে, কখনো পাশ কাটিয়ে বয়ে যাচ্ছে জলধারা। এখানে বসে বা দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন অনেকে। শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে নিয়ে আবার শুরু হলো সিলেটের দিকে যাত্রা।

Bisanacandi3পরদিন সকাল। আকাশ বেশ ঝকঝকে। আরাফাত বললেন, এমন ঝকঝকে আকাশ সহজে পাওয়া যায় না। গন্তব্য এবার রাতারগুল। সিলেট থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার পথ পেরোলেই রাতারগুল গ্রাম। সেখান দিয়েই আমরা ঢুকব জলার বন রাতারগুলে। গ্রামের লোকেরা রাতারগুলের নাম দিয়েছে সুন্দরবন! ভরা বর্ষাতেই রাতারগুলের মূল সৌন্দর্য। কেননা শীতের সময় এই বনে পানি থাকে না। রাতারগুল গ্রাম দিয়ে ঢোকার বাড়তি সুবিধা হলো এখানে কম খরচে নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। ৪০০ টাকায় তিন ঘণ্টার জন্য একটা মাঝারি আকারের নৌকা ভাড়া নিলাম আমরা। ভরা পানিতে নৌকাচালক মইনুল নৌকা চালাতে চালাতে গান জুড়ে দিলেন। ১০ মিনিটের মধ্যেই আমরা প্রবেশ করলাম বনে। শত শত গাছ জেগে আছে পানির ওপর। বেশির ভাগ অংশ ডুবে গেলেও টলটলা পানিতে গাছের নিচের অনেকটাই দেখা যাচ্ছে। সবুজ পানি, গাছের পাতাও গাঢ় সবুজ। সব মিলিয়ে সবুজে একাকার রাতারগুল। পানিতে ছায়ার প্রতিচ্ছবি যেন সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। রাতারগুলে করচ, হিজল, বনজামসহ আরও বেশ কয়েক প্রজাতির গাছ দেখা যায়।

সবুজ এই বনের এক পাশে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠে পুরো বনের সৌন্দর্য চোখে পড়ে। এখন ভরা মৌসুমে লোকজনের আনাগোনাও বেশি। নৌকায় করে বেড়াতে এসে গাছে উঠেও অনেকে মজা করছে। ফাঁদ পেতে টেংরা মাছ ধরতে দেখা গেল স্থানীয় এক বাসিন্দাকে। আরাফাত জানালেন, এই বনে পাওয়া যায় মুতরাগাছ। এই গাছ থেকেই তৈরি হয় শীতলপাটি। ঘুরতে ঘুরতে কখন যে তিন ঘণ্টা কেটে গেল টেরই পেলাম না!

Ratargulকীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে সিলেট শহর। সড়ক, রেল ও আকাশপথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেটে যেতে পারেন। এরপর সিলেট শহর থেকে অটোরিকশা বা গাড়ি ভাড়া করে পিয়াইন গিয়ে নৌকায় করে পাংতুমাই ও বিছনাকান্দি যেতে পারেন। নৌকার আকারভেদে খরচ পড়বে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। সিলেট শহর থেকে রাতারগুল যেতে পারেন অটোরিকশা বা গাড়ি ভাড়া করে। সৌজন্যে: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *