Skip to content

স্বরূপকাঠির অন্য রূপ

Sarupkathi3

মাইলের পর মাইল চোখে পড়বে নার্সারিতে ফুটে থাকা বিভিন্ন রঙের ফুল।

বাহলুল ইবনে রহমান
বর্ষাকালে স্বরূপকাঠির খালে খালে পেয়ারা ভরা ছোট ছোট নৌকা। ভাসমান সেই পেয়ারা ঘাটের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ অনেকে। শীত মৌসুমে স্বরূপকাঠি নিজেকে মেলে ধরে অন্য রূপে। যত দূর চোখ যায়, শুধু ফুল আর ফুল। নানা রঙের রঙিন কার্পেট যেন বিছিয়ে রাখা হয়েছে নদীর তীর ঘেঁষে। লাল নীল, হলুদ, গোলাপি, বেগুনি—আরও কত যে রং আর কত নামের যে ফুল!

সন্ধ্যা নদীর তীর ঘেঁষে গ্রামের পর গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে আছে নার্সারিগুলো। বরিশালের সন্ধ্যাতীরের অপরূপ এই স্বরূপকাঠি থেকে ঘুরে আসতে পারেন এখনই। ভাবছেন, নার্সারি আবার দেখার কী আছে! দুটি রাত আর মাঝে একটি দিনের পরিকল্পনা করুন। আজীবন মনে রাখার মতো এক অভিজ্ঞতা হবে। যে দুটো রাতের কথা বলছি, তার দুটোই কিন্তু কাটবে নদীর ওপর। মানে ‘জার্নি বাই লঞ্চ’।

ঢেউয়ের তালে যাত্রা শুরু
ঢাকার সদরঘাট থেকে পিরোজপুর জেলার হুলারহাট, ভান্ডারিয়াগামী বিশাল লঞ্চগুলো যখন ছেড়ে যায়, তখন সন্ধ্যা পাটে নামে। বুড়িগঙ্গার তীর ছেড়ে যাওয়া এই লঞ্চের গন্তব্য স্বরূপকাঠি। রাতের খাবারে লঞ্চেই পাওয়া যায় নানা রকম খাবার৷ মুরগি ভুনা, মাছ আর ডাল চচ্চড়ির সঙ্গে চাইলে কেবিনে থাকা টেলিভিশন দেখে সময় কাটানো যায়। আকাশে চাঁদ থাকলে তো কথাই নেই। চাঁদের আলো সত্যিই বাঁধ ভেঙে দেয়। সেটা আবার অনুভব করলাম মাঝরাতে জ্যোৎস্না দেখতে দেখতে৷

কাঠি আর কাঠি, ফুল আর ফুল
পাখিডাকা ভোরে লঞ্চ থামল স্বরূপকাঠির লঞ্চঘাটে। পাশেই ছারছিনা। এখান থেকেই শুরু রঙিন ফুলের চারার বিছানা। ছারছিনার পাশের গ্রাম অলংকারকাঠি। রাস্তার দুই ধারেই নার্সারি। এর পাশ দিয়েই বয়ে চলা নদী। আর আরেক পাশে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধুই নার্সারি। আছে হরেক রকম ফুলের চারা। সঙ্গে আছে ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছের চারা। এক মোরগঝুঁটি ফুলই যে সাত-আট রঙের হয় আর পাশাপাশি এরা যে অদ্ভুত সুন্দর, তা এই নার্সারিগুলোতে না এলে বুঝতেই পারতাম না।

যশোরে যেমন ফুলের চাষ হয়, সারা দেশে ছড়িয়ে যায় সেই ফুল, ঠিক তেমনি সারা দেশে বিভিন্ন ফুল-ফলের চারার একটা বড় অংশই যায় স্বরূপকাঠির এই নার্সারিগুলো থেকে৷ গোলাপ, ডালিয়া, জিনিয়া, জারবেরা, কসমসসহ নানা রকম জানা-অজানা রংবেরঙের বাগানে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে সময় কেটে যায় অনেকটা। অলংকারকাঠির অলংকার এসব নার্সারিতে দিনভর ঘুরলেও ক্লান্ত হবেন না৷ ফুলের চারা চাইলে কিনে আনতে পারবেন একদম কম দামে। এরপর যেতে পারেন মাহমুদকাঠি, সমুদয়কাঠি, আরামকাঠি, কামারকাঠি, জগন্নাথকাঠি গ্রামে। এসব গ্রামেও আছে অসংখ্য নার্সারি। ভাবছেন, সব নাম কাঠিসহ কেন? স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই অঞ্চলের লোকজনের আদি পেশা ছিল কাঠের ব্যবসা। আর অধিকাংশ লোক কাঠ কাটার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাই গাছ কাটি থেকে ‘কাঠি’র জন্ম। আর বিভিন্ন নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই কাঠিগুলোই রয়ে গেছে নাম হিসেবে। তবে স্বরূপকাঠি নামটি এসেছে তত্কালীন জমিদার স্বরূপ দত্তের নামানুসারে। গ্রামগুলোতে ঘোরার জন্য বাহন হিসেবে বেছে নিতে পারেন রিকশা বা নৌকা। চারদিকে নারকেল, সুপারিগাছ ঘেরা গ্রামগুলোতে রিকশায় ঘুরতে বেশ লাগবে। কারণ, রাস্তাঘাট প্রায় পুরোটাই পাকা। পুরো এলাকাটিকে জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে সন্ধ্যা নদীর অসংখ্য শাখা-প্রশাখা। স্থানীয় ভাষায় যা বড় খাল ও ছোট খাল হিসেবে পরিচিত। তাই নৌকায়ও ঘুরতে পারেন।

Sarupkathi

সূর্য ডুবছে সন্ধ্যা নদীর তীরে

মাটির দুনিয়া
ফুল, ফলে ঘেরা নার্সারি দেখে চলে যেতে পারেন মৃৎশিল্পের জগতে। কাঁচা মাটি দিয়ে কীভাবে তৈরি হয় নানা ধরনের বাসন-কোসন, দেখে আসতে পারবেন নিজ চোখে৷ এ জন্য যেতে হবে গোনমান গ্রামে। মাটির তৈরি ব্যাংক, ফুলদানি, খেলনা—অনেক কিছু পাওয়া যাবে এখানে। একদিকে কাদা মাটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চমত্কার সব জিনিস, অন্যদিকে এসব জিনিস রোদে শুকিয়ে চুলায় দেওয়া হচ্ছে পোড়াতে। আরেকদিকে চলছে রং করার কাজ। মাটির তৈরি এসব জিনিসও ছড়িয়ে যায় সারা দেশে। এখান থেকে বেশ সস্তায় কিনে আনতে পারেন শিশু বা প্রিয়জনের জন্য উপহার।

মিষ্টি, ইলিশ আর নারকেল
এত ঘোরাঘুরির মাঝে স্বরূপকাঠি বাজারের সাহা বা ঘোষের দোকানের মিষ্টি খেতে ভুলবেন না। বিশেষ করে রসমালাই। এখানকার রসমালাই ঢাকার রসমালাইয়ের মতো নয়, বেশ বড় আকারের এই রসমালাই একবার খেলে জিবে স্বাদ লেগে থাকবে বহুদিন। সন্ধ্যা নদীর মোহনায় প্রায়ই ধরা পড়ে ইলিশ, জেলেদের কাছ থেকে তাজা ইলিশ কিনতে পারবেন কপাল ভালো হলে। আর তাজা সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায় বেশ কম দামে। বর্ষাকালে এই অঞ্চল আলোচিত থাকে পেয়ারা আর আমড়ার জন্য। বিশেষ করে আটঘর কুড়িআনার পেয়ারার ফ্লোটিং মার্কেট তো বেশ পরিচিত এখন। শীতে এই স্বরূপকাঠিকেই প্রকৃতি সাজায় এক ভিন্ন রূপে। এখানকার ডাব বা নারকেল খেয়ে যেতে ভুলবেন না। এত মিষ্টি ডাব বা নারকেল শেষ কবে খেয়েছেন, সেটা মনে করার চেস্টা আসবে নিজ থেকেই।

সন্ধ্যাতীরে সাঁঝের বেলায়
এখানে এলে বিকেলটা তুলে রাখবেন সন্ধ্যা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সূর্য যখন অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়, নদীর বুকে যখন তার আলোকছটা৷ হঠাৎ ভেঁপু বাজিয়ে আসবে লঞ্চ। মিষ্টি স্মৃতি নিয়ে উঠে পড়ুন লঞ্চে। পরদিন কাকডাকা ভোরে পৌঁছে যাবেন ঢাকায়। নিয়ে যাবেন সুন্দর কিছু স্মৃতি, যার পুরোটাই আপনার। আর ফুল, ফল, মিষ্টি যা আনবেন, তা তো থাকছেই।

কীভাবে যাবেন
ঢাকার সদরঘাট থেকে সরাসরি লঞ্চে যাওয়া যায় স্বরূপকাঠি। চাইলে বরিশাল পর্যন্ত লঞ্চে গিয়ে বাসে বা মাইক্রোবাসে স্বরূপকাঠি যেতে পারেন। সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। বাস ছাড়ে সকালে আর লঞ্চ সন্ধ্যায়। বরিশাল পর্যন্ত বিমানেও যেতে পারেন। এরপর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে যেতে পারবেন স্বরূপকাঠিতে। লঞ্চে গেলে আরাম করে যাওয়া যায়, তবে আগে থেকে কেবিন বুকিং দিয়ে রাখলে ভালো। রাত লঞ্চে কাটাতে হয় বলে রাতে থাকার ঝামেলা নেই। তবে কেউ থাকতে চাইলে ভালো বোর্ডিং আছে বা উপজেলার গেস্টহাউসে থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আগে অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে। সৌজন্যে : প্রথম আলো

Sarupkathi2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *