Skip to content

স্বর্গরাজ্য মেঘের দেশে

Shimla

মো. ইমরুল কায়েস শিশির
দূরের পানে মেলে আঁখি
কেবল আমি চেয়ে থাকি,
পরাণ আমার কেঁদে বেড়ায়
দুরন্ত বাতাসে।
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সেই দূরের স্বর্গকে নজরবন্দি করতে দিল্লি সফর শেষ করে সকালের নাশতা খুব সকালেই সেরে নিয়ে রওনা হলাম হিমাচলের উদ্দেশে। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ। রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে শিমলার দূরত্ব প্রায় ৩০৬ কিলোমিটার। সময় লেগে যাবে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা। যাঁরা প্রথম পর্বের সঙ্গী হয়েছেন, তাঁরাসহ সবাইকে নিয়ে চলুন দ্রুত রওনা হওয়া যাক স্বর্গরাজ্য মেঘের দেশে।

লম্বা দূরত্ব আর পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে গাড়ির গতি কম রাখতে হয় বলে সকালে রওনা হলেও শিমলা শহরে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তবে দিল্লির শহরের বাইরে এসেই দিল্লি থেকে চণ্ডীগড় পর্যন্ত রাস্তাটি দেখার মতো। পথেই দেখা হয়ে যাবে হরিয়ানা, পাঞ্জার আর চণ্ডীগড়। হরিয়ানায় পেয়ে যাবেন পানিপথ শহর। চাইলে আধঘণ্টার বিরতিও নিয়ে নিতে পারেন সেখানে। তার পর আসবে কারনাল, আমবালা, সবশেষে সেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শান্ত শহর চণ্ডীগড়। সমগ্র শহরটিকে যেন তাঁরা সাজিয়ে রেখেছেন ছবির মতো করে। নেই কোনো যানজট, নেই মানুষের ভিড়। শহরের যেকোনো জায়গায় হাতের কাছেই পাওয়া যাবে খাওয়া-দাওয়ার সুবন্দোবস্ত। যেহেতু চণ্ডীগড় পৌঁছাতে দুপুর হয়ে যাবে, তাই এখানেই সেরে নিন দুপুরের খাওয়া-দাওয়া আর দেখে নিন এখানকার মানুষের আতিথেয়তা। কারণ, কোনো স্থানে বেড়াতে গেলে সেখানকার প্রকৃতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ সেখানে বসবাসরত মানুষের আচার-আচরণ, কৃষ্টি-সংস্কৃতি। তবে আপনি চণ্ডীগড়ের মানুষের আতিথেয়তায় হারিয়ে যাবেন না। কারণ, আপনাকে আরো বেশ খানিকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। যেহেতু চণ্ডীগড় পেরোলেই শুরু হয়ে যাবে সেই পাহাড়ি রাস্তা, তাই দ্রুত চণ্ডীগড় ঘোরা শেষ করে চলুন শিমলার উদ্দেশে।

Shimla2

চণ্ডীগড়ের গাঁ ঘেষেই শুরু হয়েছে পাহাড়ের পথচলা। তাই আপনাকে হতে হবে সাবধানী। গাড়ির চালককে কোনোভাবে বিরক্ত করা যাবে না। এখানে দুর্ঘটনা মানে সতর্কতা নয়, সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া। তাই আনন্দের মধ্যেও একটা বড় ধৈর্য পরীক্ষা আপনাকে দিতেই হবে। পাহাড়ের উচ্চতা, হাতের কাছে মেঘ, সবুজের খেলা আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে গড়ে ওঠা শহরগুলো দেখতে দেখতে এগিয়ে চলুন সামনের দিকে। ছবির মতো সব এগিয়ে আসবে আপনার সামনে। মনে হবে কোনো থ্রিডি থিয়েটারে বসে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন অ্যাডভেঞ্চার মুভির ফাঁকে ফাঁকে।

যাই হোক, আপনি সন্ধ্যা নাগাদ শিমলা পৌঁছে সেই স্বপ্নের শহরকে একবার নয়ন ভরে দেখে নিন, আর হারিয়ে যেতে থাকুন জোনাকি পোকার রাজ্যে। কারণ, শিমলার বাতিগুলো সন্ধ্যায় হাজার হাজার জোনাকির মতো জ্বলতে থাকে, পর্যটকদের অবাক করতে থাকে তার দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে। এ দৃশ্য বর্ণনা করার মতো নয়। দেখতে দেখতে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে সংশয় হয়, সত্য কি এ স্বর্গরাজ্য, না মর্ত্যলোকের কোনো এক জায়গা।

রাতের শিমলার এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হোটেলে গিয়ে সারা দিনের ক্লান্তি দূর করুন। কারণ, পরদিনই আপনাকে ছুটতে হবে শিমলার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে, যার মধ্যে অন্যতম গ্রিন ভ্যালি, হিমালয়ের সবচেয়ে সুন্দর ভিউ কুফরি ও মাশোবার। সারা দিন এগুলো ঘুরে বিকেলে চলে আসুন শিমলা মালরুডে। এটাকেই বলা হয় শিমলার প্রাণকেন্দ্র। এখানকার সুন্দর উপভোগ করতে করতে হয়ে যাবে সব ধরনের কেনাকাটাও। আর যেহেতু শীতের দেশ, তাই শীতের পোশাক কিনতে কিছুতেই ভুল করা যাবে না।

দিল্লি থেকে যেভাবে যাবেন শিমলা
দিল্লি থেকে অনেক বাসই শিমলার উদ্দেশে সকাল সকাল রওনা হয়। আপনি চাইলে আগে থেকে কেটে নিতে পারেন সেগুলোর টিকেট। বাসের টিকেট কিনতে খরচ হবে জনপ্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ রুপির মধ্যে। অথবা প্রাইভেটকার বা জিপ ভাড়া করেও রওনা দিতে পারেন শিমলার উদ্দেশে। খরচ হবে চার হাজার থেকে ছয় হাজার রুপির মধ্যে। প্রাইভেটকারে যেতে পারবেন চারজন আর জিপে যাওয়া যাবে আটজন। শিমলা পৌঁছে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরতে আপনাকে ভাড়া করতে হবে নতুন গাড়ি অথবা আপনি চাইলে দিল্লি থেকে ভাড়া করা গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেও চুক্তি করে নিতে পারেন।

https://www.youtube.com/watch?v=7e0eVDVHlGI

থাকা-খাওয়া
যেহেতু ভারত বেড়াতে যাওয়া দর্শনার্থীদের কাছে শিমলা অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র, ফলে সারা বছরই এখানে লেগে থাকে পর্যটকের ভিড়। তাই থাকা-খাওয়ার জন্য এখানে গড়ে উঠেছে পাঁচতারকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল। হাত বাড়ালে আপনি শিমলা শহরের যেকোনো বাঁকেই পেয়ে যাবেন হোটেল, যা আপনার সাধ এবং সাধ্যের মধ্যেই। শিমলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মালরুডের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বেছে নিতে হবে হোটেল ড্রিমল্যান্ড। তবে অন্যান্য হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল স্নো-ভ্যালি রিসোর্ট, হোটেল ইস্ট এন্ড, হিলক্রেস্ট রিসোর্টসহ অনেক হোটেল। এসব হোটেলে অবস্থানের জন্য আপনাকে প্রতিদিন ব্যয় করতে হবে এক হাজার ৫০০ রুপি থেকে চার হাজার রুপির মধ্যে। তবে অফপিক সিজনে একটু কমের মধ্যেও পেয়ে যেতে পারেন, যদি ভাগ্য সহায় হয়। মনে রাখবেন, শিমলা বেড়াতে গিয়ে এসি হোটেল খুঁজলে কিন্তু আপনি বোকা বনে যাবেন।

সতর্কতা
• শিমলা বেড়াতে যেতে অবশ্যই সঙ্গে শীতের কাপড় রাখুন, সে আপনি যত গরমের মাঝেই যান না কেন।
• পাহাড়ি পথে শান্ত থাকুন, ড্রাইভারকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকুন।
• নির্দিষ্ট সময় পরপর যাত্রাবিরতি নিন। প্রয়োজনে চা-কফি পান করে চাঙ্গা হয়ে নিন।
• আঁকাবাঁকা পথ হওয়ায় দিনের শেষে ক্লান্তি শরীরে ভর করতে পারে, সঙ্গে শরীর ব্যথা হতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে রাখুন।
• দূরের পাহাড়গুলোকে আরো উপভোগ্য করতে বাইনোকুলার সঙ্গে নিন। সৌজন্যে: এনটিভি

Cherrapunji-Shillong-Regular-Tour

বিস্তারিত জানতে ছবিতে ক্লিক করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *