Skip to content

স্মৃতিতে অম্লান রণতরী আইএনএস ভিক্রান্ত

জুলকার নাইন
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুঃস্বপ্ন হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ভারতীয় বিমানবাহিনীর নৌজাহাজ ‘আইএনএস ভিক্রান্ত’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য ইতিহাস।

সময়ের পরিক্রমায় ভেঙে ফেলতে হয়েছে এই যুদ্ধজাহাজকে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য সেই স্মৃতি সংরক্ষণ অপরিহার্য। সেই বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে আইএনএস ভিক্রান্তর স্মৃতি স্মারক বাংলাদেশের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত।

INS-Vicrantoগত ১৭ আগস্ট ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ এই রণতরীর একটি ছবিসহ ব্রিজ উনডো ফ্রেম ও জাহাজে থাকা একসেট লাইফবয়া স্মারক হিসেবে তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিবের হাতে।

এর আগে এই জাহাজের স্টিয়ারিং হুইল বা মাস্তুলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

জানা যায়, ভারতের প্রথম এয়ারক্রাফট কেরিয়ার আইএনএস ভিক্রান্ত। সামরিক বিশ্ব এই যুদ্ধজাহাজের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়। সে সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিশাল জলসীমায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আইএনএস ভিক্রান্ত। জলসীমায় যৌথবাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করে পিছু হটতে বাধ্য করে পাক বাহিনীকে। পাকিস্তান নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে দাপটের সঙ্গে টহল দিয়েছে মুক্ত জলসীমায়।

ভারতের নৌবাহিনীতে এই বিমানবাহী রণতরীটি ‘আইএনএস ভিক্রান্ত’ নামে পরিচিত হলেও তৈরির সময় এর নাম ছিল ‘এইচএমএস হারকিউলিস’। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি তৈরি করে ব্রিটিশ সরকার। ১৯৪৫ সালে যুক্ত হয় ব্রিটিশ রয়েল নৌবাহিনীতে। পরে ১৯৬১ সালে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে এই জাহাজ কিনে নেয় ভারত। যুক্ত হয় ভারতীয় নৌবাহিনীতে। ‘এইচএমএস হারকিউলিস’ থেকে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘আইএনএস ভিক্রান্ত’।

সংস্কৃত শব্দ ভিক্রান্ত অর্থ শক্তিশালী, ভয়হীন ও বিজয়ী। অত্যাধুনিক ওয়েস্টল্যান্ড সি কিং হেলিকপ্টার, সি হ্যারিয়ার জেট ফাইটার, বিমান বিধ্বংসী কামান সজ্জিত রণতরীটির ওজন ছিল প্রায় ২০ হাজার টন। এটি দৈর্ঘ্যে ছিল ৭০০ ফুট, প্রস্থে ১২৮ ফুট এবং গভীরতায় ২৪ ফুট। ঘণ্টায় গতিবেগ ছিল ৪৩ কিলোমিটার। ১৯৬৫ সালের বিশ্বযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল ভিক্রান্ত। তবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ১৯৭১ সালে। এজন্য আইএনএস ভিক্রান্তের ১৪ সেনা ভারতীয় সর্বোচ্চ সামরিক উপাধিও পেয়েছেন।

নানা জটিলতা শেষে গত বছর যুদ্ধজাহাজটি ভেঙে ফেলা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকার সেই স্মৃতি রক্ষার জন্যই এখন স্মারক তুলে দেওয়া হলো বাংলাদেশের হাতে।

হাইকমিশন জানায়, ভিক্রান্তের স্মারক হস্তান্তর উপলক্ষে গত সোমবার ঢাকার নৌবাহিনী সদর দফতরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নৌবাহিনী প্রধানের হাতে স্মারকগুলো তুলে দেন হাইকমিশনার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে এজন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। এর আগে গত ৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইএনএস ভিক্রান্তের মাস্তুল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *