Skip to content

হবিটদের গুহাবাড়ি

:: নাবীল আল জাহান ::

জন রোনাল্ড রুয়েল টলকেইনের বিখ্যাত দুই ধারাবাহিক ক্লাসিক ফ্যান্টাসি উপন্যাস ‘দ্য হবিট’ ও ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস’। সর্বকালের সেরা বেস্ট সেলারের তালিকায় নাম তোলা এই দুই উপন্যাস থেকেই বিশ্ববিখ্যাত সিনেমাগুলো বানানো হয়েছে; কিন্তু হবিটদের অমন অদ্ভুত জগতের ধারণা তিনি কোথা থেকে পেলেন?

এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কিন্তু টলকেইন বরাবরই রহস্যের হাসি হাসতেন।
শুধু এটুকু স্বীকার করেছিলেন, দ্য হবিটের কল্পনাগুলোর একটা বড় অংশই তাঁর উঠতি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। উঠতি বয়সে তিনি বাস করতেন ইংল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলে, বার্মিংহামে। বার্মিংহামের কাছে কিন্তু সত্যিই এমন একটা জায়গা আছে, যেটাকে হবিটদের জগত্ বলে চালিয়ে দিলেও কেউ অবিশ্বাস করবে না। বার্মিংহাম থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে অবস্থিত কিনভারে এমন কতগুলো গুহাবাড়ি আছে, যেগুলো একদম হুবহু হবিটদের বাড়িঘরের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়; এমনকি টলকেইন যখন দ্য হবিট লিখছেন, তখনো সেখানে কয়েক ঘর মানুষ বাস করত। জায়গাটা জনশূন্য হয়েছে তারও দুই দশক পরে, ষাটের দশকের শেষে।

১৭৭৭ সালে বার্মিংহামের বাসিন্দা জোসেফ হিলি একটি গাইড বইয়ে প্রথম এই গুহাবাড়িগুলোর কথা জানান। একবার নাকি তিনি ওখানে ঘুরছিলেন। এমন সময় একেবারে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। তখনই দূরে এক পাহাড়ের চূড়ায় ধোঁয়া উড়তে দেখে বুঝতে পারলেন, ওখানে মানুষের বসতি আছে। তড়িঘড়ি করে সেদিকে ছুটলেন। আর গিয়ে যা দেখলেন, তাতে তো তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! পাহাড়ের গায়ে গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে বানানো কতগুলো গুহাবাড়ি। সেখানকার মানুষরা তাঁকে সাদরে গ্রহণও করলেন। বাড়িগুলোও নাকি বেশ উষ্ণ ও আরামদায়ক। দুই সারিতে সাজানো বাড়িগুলোর প্রায় প্রতিটিতেই দুটি করে ঘর আছে। একটা থাকার জন্য, আরেকটা ঘুমানোর জন্য। প্রতিটি ঘরেই পাথর কেটে ফায়ারপ্লেস তৈরি করা। সেগুলো দিয়ে ধোঁয়া বাইরের দিকে বের করে দেওয়া হয়। বাড়িগুলোর পেছনের দিকে একটি করে স্টোররুমও আছে। পরে বিদ্যুত্, এমনকি পাইপ টেনে গ্যাস ও পানির সংযোগও দেওয়া হয়েছিল। আর এসব কিছুই বানানো হতো পাহাড়ের গায়ের পাথর কেটে। ওখানকার পাহাড়গুলো ট্রাইয়াসিক যুগের নরম পাথরে তৈরি। সহজেই কাটা যায়। সে জন্যই গর্তগুলো কেটে কেটে সুবিধামতো বড় করে নেওয়া যেত। সে পদ্ধতিতেই বাড়িগুলো তৈরি করা হয়েছে।

ধারণা করা হয়, কিনভারের এই গুহাবাড়িগুলো বানানো হয়েছিল ৭০০ সালের দিকে। তখনো অবশ্য কিনভার খুব বড় বা গুরুত্বপূর্ণ বসতি ছিল না। পরে ১১ শতকের দিকে কিনভার গুরুত্বপূর্ণ বসতি হয়ে উঠতে থাকে। এর একটি বড় কারণ ব্রিস্টল থেকে চেস্টারে যাওয়ার মূল সড়কটাও গিয়েছিল এর ওপর দিয়েই। সতেরো শতকের দিকে এই কিনভারের লোকদের নিয়োগ করা হয়েছিল পাহাড় থেকে পাথর কেটে আনার জন্য। সম্ভবত এই লোকেরাই পরে ওই গুহাবাড়িগুলোতে স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করে। গুহাবাড়িগুলোর সবচেয়ে জমজমাট সময়ে ওখানে মোট ১১ ঘর লোক বাস করত। ১৮৩০ সালের আদমশুমারিতে জানা যায়, তখনো ওখানে ছয়টি পরিবার ছিল।

টলকেইন যখন দ্য হবিট লিখতে শুরু করেছেন, তখনো অবশ্য এই গুহাবাড়িগুলো আস্তই ছিল। ওখানে তখনো কয়েকটি পরিবার বসবাস করত। টলকেইনেরও অভ্যাস ছিল, সুযোগ পেলেই বার্মিংহাম থেকে বেরিয়ে পড়তেন। আশপাশের গ্রাম-পাহাড়-বন ঘুরে বেড়াতেন। কাজেই তিনি যে কিনভারের এই গুহাবাড়িগুলো দেখেননি, তা বিশ্বাস করা মুশকিল। তার ওপর শুধু এই বাড়িগুলোর সঙ্গেই যে হবিটদের বাড়ির মিল আছে তা-ই নয়, এখানকার অনেক কিংবদন্তিকেও টলকেইন তাঁর উপন্যাসের কাহিনিতে স্থান করে দিয়েছেন। আর এসব মিলিয়ে কেউ যদি দাবি করে কিনভারের গুহাগুলো থেকেই টলকেইন হবিটদের বাড়ির কল্পনা করেছিলেন কিংবা এই কিনভারকে কেন্দ্র করেই টলকেইন দ্য হবিটের কল্পনার রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, তবে তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যায় না।

১৯৬০ সালের আগেই গুহাবাড়িগুলো থেকে শেষ পরিবারটিও চলে যায়। জনশূন্য হওয়ার পর এখানকার জিনিসপত্রের প্রতি নজর পড়ে চোর-ছ্যাঁচরদের। দ্রুতই তারা সব জিনিসপত্র, এমনকি দরজা-জানালা পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়। নব্বইয়ের দশকে এসে জায়গাটা নিয়ে নেয় ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল ট্রাস্ট। পরে তারা বেশ কয়েকটি গুহাবাড়ি আবার ঠিকঠাক করে সাজিয়ে-গুছিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এখন পর্যটকদের বেশ পছন্দের জায়গা এটি। সৌজন্য : কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *