Skip to content

হরিণ আর বাদুড়ের গুহা

ভিয়েতনামের সন ডুং গুহা আবিষ্কারের আগে একেই বিবেচনা করা হতো পৃথিবীর বৃহত্তম গুহা হিসেবে। তবে সবচেয়ে বড় গুহার খেতাব হারালেও বিশালত্ব, সৌন্দর্য আর প্রাণবৈচিত্র্যে ডিয়ার কেভের জুড়ি মেলা ভার। লিখেছেন ফাহমিদা হক

Deer_Park

১৯৭৮ সাল। রয়েল জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির একদল সদস্য ঘুরে আসেন মালয়েশিয়ার একটি গুহা। তাঁদের মন্তব্য, নিঃসন্দেহে এটি গুহার দুনিয়ার অন্যতম এক আশ্চর্য। কেননা জরিপে দেখা গেছে, গুহার দৈত্যাকার পথটি এক জায়গায় ১৭৪ মিটার চওড়া আর ১২২ মিটার উঁচু। কোনোখানেই এর প্রস্থ আর উচ্চতা ৯০ মিটারের কম নয়, এটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সোজা এক কিলোমিটার চলে গেছে।

নিজের বিশালতা দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়া এ গুহার নাম ডিয়ার কেভ, বাংলায় বললে হরিণ গুহা। মালয়েশিয়ার সারাওয়াকের মিরিতে অবস্থিত এ গুহা সেখানকার গুনুঙ্গ মুলু ন্যাশনাল পার্কের একটি অংশ। স্থানীয়দের কাছে ‘গুয়া পাইয়াও’ বা ‘গুয়া রুসা’ নামে পরিচিত। ‘হরিণ গুহা’ নামকরণের কারণ, এর ভেতরে নানা জাতের হরিণের আনাগোনা। গুহার গায়ে লেগে থাকা লবণাক্ত পাথর চাটতেই আসে ওগুলো।

১৯৬১ সালে জি. ই. উইলফোর্ড নামের এক ব্যক্তি গুহাটি প্রথম খুঁজে বের করেন। পরে ১৯৭৮ সালে জরিপের সময় আরো ভালো করে আন্দাজ করা যায় এর বিশালতা। ২০০৯ সালে হফম্যান ইনস্টিটিউট অব ওয়েস্টার্ন কেনটাকি ইউনিভার্সিটির চালানো এক জরিপে গুহার ভেতরকার বিভিন্ন জায়গার মাপজোক পাওয়া যায় আরো নিখুঁতভাবে। এ জরিপ অনুসারে গুহার ভেতরকার জানা পথের দৈর্ঘ্য বেড়ে দাঁড়ায় ৪.১ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে পার্কের আরেকটি গুহা ‘ল্যাংস কেভ’কেও অন্তর্ভুক্ত করা হয় ডিয়ার কেভের মূল ব্যবস্থার সঙ্গে। দক্ষিণ পাশের বড় প্যাসেজ ধরে এগোনোর পর মেলে ১৬৯ মিটার চওড়া একটি জায়গা, যার ছাদ ১২৫ মিটার উঁচুতে। উত্তর পাশের প্যাসেজের এক জায়গার ছাদ তো আরো উঁচু, ১৪৮ মিটার! আর সেখানকার প্রস্থ ১৪২ মিটার। গুহার মূল হাঁটা পথের মধ্যে ছাদের সবচেয়ে বেশি উচ্চতা মিলেছে ২২৬ মিটার।

Deer-Cave

অন্য অনেক গুহার মতো ডিয়ার কেভে ঢোকার বেলায় নেই কোনো বাধা। গুনুঙ্গ মুলু ন্যাশনাল পার্কের যেকোনো দর্শনার্থী চাইলেই এটি ঘুরে দেখতে পারেন। পার্কের মূল অংশ থেকে খানিকটা ভেতরে স্যাঁতসেঁতে বনের ভেতর দিয়ে গেলে তবে চোখে পড়বে গুহাটি। ঢোকার সময় ১৪৬ মিটার উঁচু প্রবেশমুখ দেখে ধাক্কা খাবেন যে কেউই।

বিশাল এ গুহার প্রধান বাসিন্দা লাখ লাখ বাদুড়। বাদুড়ের বিষ্ঠা আর মরা বাদুড়ের স্তূপে আবার বাসা বেঁধেছে লাখো তেলাপোকা, গুবরে পোকা, মাকড়সাসহ অজস্র পোকামাকড়ের দল। যখন সন্ধ্যা নামে, গুহার ভেতরে তৈরি হয় এক অসাধারণ পরিবেশ। লাখখানেক বাদুড় ঝাঁকে ঝাঁকে খাবারের খোঁজে বাইরে বেরোতে থাকে।

কংক্রিটের এক রাস্তা দর্শনার্থীদের নিয়ে যায় গুহার গভীরে। এ রাস্তা বানানো হয়েছে এমনভাবে, যাতে বাদুড়ের বিষ্ঠা কিংবা পোকামাকড়ের ওপর কারো পা না পড়ে যায়। সেই সঙ্গে ওপরের ছাদ থেকে বেয়ে পড়া পানিতেও পা পিছলানোর ভয় থাকে না। মূল পথ ধরে খানিকটা গেলে সামনে পড়বে কাঠের এক পাটাতন, যার ওপর দাঁড়িয়ে চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করা যাবে। সেই সঙ্গে কানে ভেসে আসবে নদীর মৃদু কলতান, যার পানি গুহার ভেতরের ফাটল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ছোট এক খালে জমা হচ্ছে। অবশ্য এ নদীর স্রোত বলতে গেলে তেমন কিছুই না, এককালের রীতিমতো প্রমত্ত এক নদীর এক বিন্দু অংশ যেন এ পানি।

All-Tour

কাঠের পাটাতনে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকালে গুহার বিশালতা দেখে নিজেকে যেন ভীষণ ক্ষুদ্র বলে মনে হয়। সবুজ বনের মধ্যে গুহার দেয়ালের গাঢ় রং যেন বিধাতার রং-তুলির এক অপূর্ব মিশেল। গুহার ভেতর থেকে গুহামুখের দিকে তাকালে চোখে পড়বে অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। বাইরে থেকে সূর্যের আলো গুহামুখের মধ্য দিয়ে ভেতরে এসে পড়ছে পানির ওপর, আর তাতে গুহার অন্দরমহলের আলো-আঁধারি পাচ্ছে নতুন এক মাত্রা। আরো গভীরে যাওয়ার পর একসময় চোখে পড়বে খোলা এক জায়গা। ‘গার্ডেন অব ইডেন’ নামে এ জায়গায় গিয়ে মূলত শেষ হয় গুহা ভ্রমণের মোহনীয় যাত্রা। অবশ্য কপাল ভালো হলে, আর আবহাওয়া ভালো থাকলে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দর্শনার্থীরা চাইলে এ গুহার অন্যতম এক আকর্ষণ উপভোগ করতে পারেন-লাখো বাদুড়ের একসঙ্গে সান্ধ্যভ্রমণের দৃশ্য। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *