Skip to content

হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি…

Horipurনাসিরনগর উপজেলার হরিপুর গ্রামে তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে হরিপুর (জমিদার বাড়ি) কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিতাস নদীর তীরে এ ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি (জমিদার বাড়ি) বড়বাড়ি। এ বাড়িটিকে কেউ বলে রাজবাড়ি, বড়বাড়ি আবার কেউ বলে জমিদার বাড়ি। বর্তমানে এটা অর্পিত সম্পত্তি।

প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক পর্যটক আসে বাড়িটি দেখতে। নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে অবস্থিত এই বড়বাড়িটি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বাড়িটির অবস্থান। নাসিরনগর থেকে মাধবপুর যাওয়ার পথে উপজেলার শেষ সীমান্তে হরিপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পাশে তিতাস নদীর পাড়ে চোখে পড়ার মত দুই গম্বুজের তিনতলা সুবিশাল বাড়িটি। বাড়িটির পূর্ব পাশে নাসিরনগর-মাধবপুর সড়ক। বাকি দিকে তিতাস নদীর ফাঁকা জায়গা। বাড়ির বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। অনেক বড় বারান্দা ডিঙিয়ে মূল বাড়ি।

নান্দনিক স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত বাড়িটি সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির বাইরের অবয়বটি অবিকল রযে গেছে। কারুকাজ খচিত দেয়াল,স্তম্ভ ও কার্নিশ। সব কয়টি কক্ষেরই পুরানো সেই দরজা নেই। বর্তমানে বসবাসকারীরা সাধারণ মানের দরজা লাগিয়ে বসবাস করছে। সব মিলিয়ে ৩০টি পরিবার রয়েছে এখানে। ১০ থেকে ৭০ বছর ধরে তাদের বসবাস। বাড়ির ভিতরের অংশে অনেকটা গোছালো পরিবেশ।

জানা যায়, প্রায় ১৭৫ বছর পূর্বে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী বাড়িটি নিমার্ণ করেন। বৃটিশ আমলে নির্মিত বাড়িটির নির্মাণ শৈলী বড়ই মনোরম। ১৩৪৩ বাংলার ১২ চৈত্র (দোল পূর্নিমা) তারিখে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মূত্যুর পর পর্যায়ক্রমে বাড়িটির উত্তরাধিকার হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী। তাদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি আসে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী। কালক্রমে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওযার পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হরে তারা বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যায়। জমিদাররা বাড়িটি ফেরে যাওয়ার সময় পুরোহিতদের রেখে যায়। এখনও জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে পুরোহিতদের বংশধরেরা বসবাস করছে। বাড়িটির দেয়ালের অধিকাংশ পলেস্তারা খসে পড়ছে, আর সেখানে জমেছে শেওলার আবরণ। দৃষ্টি নন্দন কারুকাজের খুব অল্পকিছু অংশই বিলীন হতে বাকি আছে। জনশ্রুতি আছে, মেঘনা তথা তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই। প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ৬০টি কক্ষ, রং মহল, দরবার হল, ধানের গোলা, গোয়ালঘর, রান্নার ঘর, নাচ ঘর, মল পুকুর,খেলার মাঠ, মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে। বিশাল আয়তনের বাড়িটির পুরো ভবনের কোথাও কোন রডের গাঁথুনি নেই। লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দুপাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ সগর্বে মাথা তুলে দাড়িঁয়ে ঘোষনা করছে, জমিদার বংশের ঐতিহ্যের কথা। দু’তলায় উঠার ৬ দিকে ৬টি সিড়িঁ ও তিন তলায় উঠার ২ দিকে ২টি সিড়িঁ রয়েছে। বাড়তি পশ্চিম-উত্তর কোণে ৬টি বেড রুম এবং মল পুকুরের পূর্বপাড়ে ৪টি ও পশ্চিম পাড়ে ৪টি বেড রুম রয়েছে। বাড়ির পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড়ে পাকা ঘাটলার উত্তর দিকে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও দক্ষিণ দিকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর সমাধি মঠ রয়েছে। বাড়িটি দেখার জন্য এখনও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন বনভোজনে আসেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তিতাসে যখন পানি থৈ থৈ করে তখন বাড়িটির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়।

বাড়িটিতে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি কখনো। দিনকে দিন বাড়িটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এক সময়ে ঐতিহ্যবাহি নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হরিপুর জমিদার বাড়ির নদীর ঘাট থেকেই শুরু হত। এ বাড়িতে ‘‘দি লাস্ট ঠাকুর’’, ‘‘মধুমালতি’’, ‘‘ঘেটু পুত্র কমলা’’ নাইওরীসহ অনেক ছবি চিত্রায়িত হয়েছে।

অবস্থান : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে অবস্থিত

যেভাবে যাবেন : নাসিরনগর সদর হইতে প্রায় ১৪/১৫ কি: দক্ষিণ পূর্বে মাধবপুর যাওয়ার পথে হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড়ে অবস্থিত। সড়ক পথে যে কোন যানবাহনে যাওয়া যায়। আপনি চাইলে নদী পথেও যেতে পারেন। নৌকাভ্রমণ ও হলো, সাথে বাংলার ইতিহাসের দর্শনও করলেন। সূত্র : সময় টিভি

https://www.youtube.com/watch?t=14&v=MuXoPPHQdjI

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *