সাগরসৈকতের বালুর রং যদি কালো হয়, তাহলে কেমন হয় বলুন তো? গালগপ্পো নয়, আসলেই আছে এমন সৈকত। কালো রঙের সাগরসৈকত দেখে প্রথমেই আপনার যে কথাটি মনে আসবে তা হলো, আঁধারেরও রূপ আছে। নারিকেলগাছে ঘেরা এই কালো সৈকত তাই সব দিক দিয়েই ব্যতিক্রম। লিখেছেন আনিকা জীনাত
পাথুরে এই কালো সৈকত দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপে। আগ্নেয়গিরির উদ্গিরণ সৈকতের স্বাভাবিক রং কেড়ে নিয়েছিল বহুকাল আগে। তবে রং হারালেও নিজ বৈশিষ্ট্যগুণেই পৃথিবীর বাকি সব সাগরসৈকতের চেয়ে আলাদা হয়ে উঠেছে এই পুনালু বিচ পার্ক। হাওয়াই দ্বীপের বিগ আইল্যান্ডের পুনালু বিচ পার্কটিতে তাই পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে।
বহুকাল আগে হাওয়াই দ্বীপের একটি সক্রিয় আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরই সেখান থেকে লাভা বের হয়ে সাগরে গিয়ে পড়ে তবেই শীতল হয়। ঠাণ্ডা হওয়া সেই লাভা থেকে সৃষ্টি হয় পাথুরে শিলা। আর ব্যাসাল্ট নামের এই কালো পাথুরে আগ্নেয়শিলার কারণে সৈকতের বালুর রং কালো।
নিরিবিলি হওয়ায় প্রায়ই এখানে রোদ পোহাতে আসে হকসবিল (ডোরাকাটা কচ্ছপ) ও সবুজ রঙের কচ্ছপ। শুধু খাওয়াদাওয়াই নয়, এই দ্বীপে তারা ডিম পাড়ে ও বাচ্চা ফোটায়। বিপন্ন এই কচ্ছপগুলোর পেছনে দৌড়ানো বা তাদের সঙ্গে খেলা অথবা বিরক্ত করা একেবারেই মানা। এদের ধরাও দণ্ডনীয় অপরাধ। শুধু তা-ই নয়, এই সৈকতের বালু বা পাথর সরানোতেও আছে নিষেধাজ্ঞা।
সৈকত আরেকটি কারণে বিখ্যাত। এর তলদেশে আছে বিশুদ্ধ মিষ্টি পানির প্রবাহ। কথিত আছে, খরার সময় প্রাচীনকালের হাওয়াই দ্বীপের বাসিন্দারা কলসি নিয়ে সাগরের নিচে চলে যেত সেই বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে। তখন এই সৈকত ছিল একটি গ্রামের অংশ। একসময় সুনামিতে গোটা গ্রামই চলে যায় সাগরের নিচে।
পাহাড়ে চড়া, সাগরে সাঁতার কাটা-নানা কারণেই এখানে পর্যটক আসে। তবে সাঁতরানোটা আবার খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ডুবো সব ধারালো পাথরে এখানকার সাগর ভর্তি। অবশ্য হাওয়াইয়ের এই সৈকত সবচেয়ে বেশি পর্যটক টানে তার কালো বালুর জন্য। তাই কালো হলেও অন্য সব সৈকতের চেয়ে এর আকর্ষণ কোনো অংশে কম নয়। সূত্র : কালের কণ্ঠ