সুষম খাবারের তালিকায় দুধের পরেই আছে ডিম। তাই সবার বাসার খাবারের তালিকায়ই মুরগির ডিম থাকে। কিন্তু যদি কাউকে কালো কুচকুচে ডিম খেতে দেওয়া হয়, সেটি খাওয়া কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? লিখেছেন নাবীল অনুসূর্য
এই কালো ডিমটা যদি জাপানের হাকোনের হয়, তাহলে বোধ হয় না খাওয়াটাই হবে বোকামি। হাকোনের লোকদের মতে, এই কালো ডিম খেলে নাকি মানুষের আয়ু বেড়ে যায় সাত বছর।
কানাগাওয়া জেলার হাকোনে শহরটির সীমানায় পড়েছে হাকোনে পর্বত। এই পর্বত আবার একটা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। আগ্নেয়গিরিটা যে জীবন্ত, তার প্রমাণ ওয়াকুদানি নামের উপত্যকা। তিন হাজার বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাতের ফলে হাকোনের এই উপত্যকাটির সৃষ্টি হয়। উপত্যকাটি এখনো রীতিমতো ফুটছে। সেখানকার যত ঝরনা আর জলাশয় আছে, সব জায়গায় পানি ফুটছে, আর ধোঁয়া উঠছে। পর্যটনের জন্য মোটেও আদর্শ জায়গা নয়। তবুও সেখানে প্রতিদিনই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ওখানে পর্যটকরা ভিড় করেন মূলত দুই কারণে। প্রথমত, পাশেই আছে আরেক আগ্নেয় পর্বত ফুজি। ওয়াকুদানি থেকে পরিষ্কার ফুজি পর্বত দেখা যায়। তবে মূল কারণ অন্যটি—কুচকুচে কালো ডিম। ওয়াকুদানিতে পাওয়া যায় কালো ডিম। সিদ্ধ করা হয় ওই ফুটন্ত পানির ঝরনা-জলাশয়গুলোতেই, প্রাকৃতিকভাবে।
এই ডিমগুলো বিশেষ কোনো ধরনের ডিম নয়। সাধারণ মুরগির ডিম। সিদ্ধ করার আগে এগুলোর রং সাদাই থাকে। কিন্তু ওয়াকুদানি উপত্যকার ওই ফুটন্ত ঝরনাগুলোয় ফোটালেই ডিমগুলো কুচকুচে কালো হয়ে যায়। কারণ, ওই আগ্নেয় উপত্যকার পানিতে খনিজ পদার্থের আধিক্য। ওয়াকুদানিতে গেলেই সবার চোখে পড়ে চারপাশের পানি থেকে উঠতে থাকা ধোঁয়া। আর নাকে এসে লাগে পচা ডিমের ঝাঁজালো গন্ধ। না, ওটা আসলে ডিমের গন্ধ না। সালফারের গন্ধ। সেখানকার আগ্নেয় বাতাসে প্রচুর পরিমাণে থাকে হাইড্রোজেন সালফাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইড। আর ওখানকার আগ্নেয় পানিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে সালফার। এই সালফারের কারণেই বাতাসে ঝাঁজালো পচা ডিমের গন্ধ পাওয়া যায়। আর এই সালফারের কারণেই ওখানকার পানিতে সিদ্ধ করা ডিমগুলোর রং হয় কুচকুচে কালো। সঙ্গে অবশ্য একটা অদ্ভুত গন্ধও হয়।
এই ডিমগুলোকে বলা হয় কুরো-তামাগো। আর যে ওয়াকুদানিতে ডিমগুলো সিদ্ধ করা হয়, সেটি হাকোনে পর্বতের একটা চূড়ায় অবস্থিত। সেখানে যেতে হলে হাকোনে পর্বত বেয়ে পাড়ি দিতে হয় এক কিলোমিটার পথ। এখন অবশ্য একটা রোপওয়েও বানানো হয়েছে। যে ঝরনায় ডিম সিদ্ধ করা হয়, তার পাশেই ডিম খাওয়ার বন্দোবস্ত। ডিমের খোসা ছাড়ানোর জন্য আছে কাঠের কতগুলো টেবিল।
সালফার-সমৃদ্ধ এই ডিম খেতে যে ওয়াকুদানিতেই যেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এই কালো ডিম পুরো হাকোনেতেই জনপ্রিয়। পাওয়া যায় হাকোনের বেশ কিছু দোকানেই। আধা ডজন কালো ডিম বিক্রি হয় ৫০০ ইয়েনে। মানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সোয়া ৩০০ টাকা। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ