গাজী মুনছুর আজিজ
তিনটি স্তরে পড়ছে ঝরনার পানি। তাই দূর থেকে এ তিন স্তর দেখলে মনে হবে অনেকটা হাতির শুঁড়ের মতো বাঁকানো। হয়তো সে জন্যই এ ঝরনার নাম এলিফ্যান্ট ফলস বা হাতি ঝরনা। ঝরনাটি মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে বেশ কিছুটা দূরে। এ ঝরনাসহ আরও কিছু স্থান দেখার উদ্দেশ্যে দুটি ট্যাক্সিতে শিলংয়ের পুলিশবাজার থেকে সকালে রওনা হই। সঙ্গে আছেন আরও পাঁচ ভ্রমণসঙ্গী।
হাতি ঝরনায় আসার পথে দেখে নিই বিসপ অ্যান্ড ব্যাডন নামক আরেকটি ঝরনা ও উমিয়াম বরাপানি লেক। আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ, সেই সঙ্গে পথের দুপাশে পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখতে দেখতে হাতি ঝরনায় যখন পৌঁছাই তখন দুপুর। এ দুপুরেও ঝরনা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের ভিড় ব্যাপক। দর্শনার্থীদের অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা। আছেন বিদেশিরাও। ঝরনার প্রবেশ মূল্য ১০ রুপি। আর ক্যামেরার জন্য আরও ২০ রুপি।
ঝরনার প্রবেশপথেই একটি দোকান আছে। এ দোকানে স্থানীয় নারী-পুরুষের ঐতিহ্যবাহী আদি পোশাক, গহনা ও ঢাল-তলোয়ার ভাড়া পাওয়া যায়। মূলত এগুলো নমুনা। ঝরনা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা এসব নমুনা পোশাক ও গহনা পরে কিংবা হাতে ঢাল-তলোয়ার নিয়ে ছবি তোলেন এবং অল্প সময়ের জন্য তারা হয়ে যান স্থানীয় আদিবাসী।
আমরা প্রথমে আসি ঝরনার প্রথম স্তরে। ঝরনাটির দুপাশে বন। আর সেই বনের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে আসছে পানি। হয়তো অন্য কোনো উঁচু পাহাড়ি ঝরনা থেকে এ পানি আসছে। কারণ পুরো মেঘালয় রাজ্যটি পাহাড়ি চূড়ায় অবস্থিত। তাই এক পাহাড়ের ঝরনার পানি গড়িয়ে গড়িয়ে মেশে আরেক পাহাড়ের ঝরনায়। এভাবে হয়তো মেঘালয়ের অধিকাংশ ঝরনারই একটার সঙ্গে আরেকটার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে।
প্রথম স্তর থেকে সিঁড়ি বেয়ে কিছুটা নিচে নামলে দ্বিতীয় স্তর। এ স্তরটি মূলত একটি সেতু। দুই পাহাড়ের মধ্যে তৈরি এ সেতুর নিচে দিয়েই ঝরনার পানি গড়িয়ে নামছে। এখানে দাঁড়িয়ে ঝরনার দ্বিতীয় স্তর যেমন দেখা যায় আবার তৃতীয় বা নিচের স্তরও দেখা যায়। অবশ্য ঝরনার প্রথম স্তর দেখার স্থানটি যে পাহাড় বেয়ে পানি পড়ছে সেই পাহাড়েরই ঢাল। দ্বিতীয় স্তরের সেতু পার হয়ে সিঁড়ি বেয়ে বেশ কিছুটা নিচে নামলে ঝরনার তৃতীয় স্তর বা পাদদেশ। পাহাড়ের গা ঘেঁষে রেলিং দেওয়া এ সিঁড়ি।
ঝরনার পানি নিচে পড়ে যেখানে জমা হচ্ছে, সেখানে পুকুরের মতো হয়েছে। আবার এ পুকুর থেকেও পানি উপচে গড়িয়ে যাচ্ছে আরও নিচে অন্য কোনোখানে। পুকুরের মতো স্থানটি দড়ি দিয়ে ঘেরা দেওয়া, যাতে কেউ সেখানে না নামে বা না পড়ে যায়। সে জন্য দর্শনার্থীরা দড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন, ঝরনার পানির স্পর্শ নেন। এখানেও একটি ছোট সেতু আছে। এ সেতুতে দাঁড়িয়ে পুরো হাতি ঝরনা একসঙ্গে দেখা যায়।
দুই পাহাড়ের মধ্য দিয়ে বয়ে আসা এ ঝরনার সৌন্দর্য মেঘালয়ের অন্য ঝরনার চাইতে সত্যিই আলাদা। মেঘালয়ের অন্য ঝরনার মতো এ ঝরনার উচ্চতাও খুব বেশি নয়, ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট হবে। তবু অবস্থান ও নামের জন্য এর রয়েছে ভিন্ন এক মুগ্ধতা।
বেশ কিছুটা সময় ঝরনার পাদদেশে থেকে আবার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে আসি। ঝরনা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য এখানে কিছু রেস্টুরেন্ট ও গিফটের দোকান আছে। আর ঝরনার পাশেই আছে অবকাশ যাপন কেন্দ্র। গিফটের দোকানগুলোয় একটু ঢুঁ মেরে গাড়িতে উঠি। চালক পুলক চলে পরের গন্তব্যে।
লক্ষ করি মেঘালয়ের সবত্রই পরিচ্ছন্নতা। রাস্তায় ময়লা-আবর্জনার দেখা খুব কমই মিলল। তবে মেঘের দেখা মিলল প্রায় সব সময়ই। আর মিলবেই বা না কেন, মেঘালয় মানেই তো মেঘের আলো বা মেঘের বাড়ি। অবশ্য মেঘের বাড়ি হলেও এ যাত্রায় বৃষ্টির দেখা একবারও পাইনি। তবে এখানকার যা-ই দেখি, তা-ই ভালো লাগে। উঁচু পাহাড়, পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ, পথের পাশের ঘোছানো ছোট-ছোট বাড়িঘর- সব যেন ছবির মতো। এ ছবি দেখতে দেখতেই ছুটতে থাকি পরের গন্তব্যে।
প্রয়োজনীয় তথ্য : শিলং যাওয়ার জন্য মেঘালয়ের ডাউকি বর্ডার সহজ মাধ্যম। সিলেটের তামাবিল বর্ডার পার হলেই ডাউকি বর্ডার। ডাউকি থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যায় শিলংয়ের। এ ট্যাক্সিতে শিলং বা আশপাশ যেতে পারবেন বা বেড়াতে পারবেন অথবা মেঘালয় ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের বাসেও ঘুরতে পারবেন মেঘলায়ের দর্শনীয় স্থান।
থাকার জন্য শিলং পুলিশবাজারে অনেক হোটেল আছে। ভাড়া ডাবল রুম ১ হাজার থেকে ৭ হাজার রুপি পর্যন্ত। এ ছাড়া কমবেশি মানের হোটেল আছে। খাওয়ার জন্য অনেক হোটেল আছে। বাঙালি হোটেলও পাবেন। ১০০ থেকে ৩০০ রুপিতে ভাত-মাছ-মাংস-রুটি সবই পাবেন।
শিলং যেতে চাইলে ভিসার আবেদনে ডাউকি বর্ডার উল্লেখ করুন। যাওয়ার আগে সোনালী ব্যাংকে ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর দিয়ে নিন। এ ছাড়া কমলাপুর থেকে শিলংয়ের উদ্দেশে বিআরটিসি-শ্যামলী বাস যায়। তাদের মাধ্যমেও যেতে পারেন।
ছবি : লেখক। সৌজন্যে : আমাদের সময়
Pingback: ঈদের বন্ধে শিলং-চেরাপুঞ্জি | Dhaka Tourist Club
Pingback: শিলং-চেরাপুঞ্জির ভ্রমণ খরচ কমলো স্পট বাড়লো | Dhaka Tourist Club
Pingback: ১৫ ডিসেম্বর শিলং-চেরাপুঞ্জি-গৌহাটি ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: ২ ফেব্রুয়ারি শিলং-চেরাপুঞ্জি-শ্নোনেংপেডেং ফেমিলি ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: শিলং-চেরাপুঞ্জি-জৈন্তা হিলস ঈদ ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: এবারের চেরাপুঞ্জি ট্যুর ভরা বর্ষায় | Dhaka Tourist Club
Pingback: চেরাপুঞ্জি-শিলং ঈদ ট্যুরে থাকছে নতুন ও আকর্ষণীয় অনেক কিছু | Dhaka Tourist Club
Pingback: ঈদে চলুন শিলং-চেরাপুঞ্জি ঢাকা ট্যুরিস্টের সাথে | Dhaka Tourist Club