এ রিয়াজ
পাহাড়-পর্বত আর হিমবাহের দেশ আইসল্যান্ড। প্রকৃতির নানা খেলা চলে চলে সেখানে। এবার সেখানে একটি হিমবাহের ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে উন্মোচন করা হয়েছে এক বিস্ময়কর জগত। আইসল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিমবাহ লাংইয়োকুলের ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনাকে প্রথমে চরম অবাস্তব মনে হতো।
প্রকল্পের প্রধান কিয়ারটান টর টরবিয়র্নসসন বলেন, ‘আর্থিক সংকটের পর এখানে অর্থনীতি যখন আবার মাথা তুলে দাঁড়াল তখন তেমন কাজ ছিল না। তখন এই আইডিয়াটা আসে। এখন সেটা বাস্তব হয়ে উঠেছে।’
ইউরোপের সবচেয়ে বড় হিমবাহ সুড়ঙ্গের কাজ শেষ। শ্রমিকরা বরফের ৫০০ মিটার নিচে খোঁড়াখুড়ি করেছেন। এমনই একজন শ্রমিক টোমাস আরনাসন। উপার্জনের তাগিদে টোমাসকে রোজ সকালে দু’ঘণ্টার জন্যে বরফের গভীরে নামতে হয়েছে। ১,৩০০ মিটার উচ্চতার হিমবাহের ভেতরে তার কাজের জায়গা। সেখানে পৌঁছনোই একটা অ্যাডভেঞ্চার। প্রায় ৭৫০ মিটার পুরু হিমবাহের উপর দিয়ে সামরিক বাহিনীর এক রূপান্তরিত গাড়িতে সেখানে পৌঁছতে হয়। টোমাসকে গোটা শীতকাল এখানে কাটাতে হয়েছে। শুধু তুষার ঝড়ের সময় প্রবেশপথ রুদ্ধ হলে সুড়ঙ্গের কাজ বন্ধ রাখতে হতো।
টোমাস আরনাসন বলেন, ‘খুবই কঠিন কাজ ছিল। কখনও দিনে মাত্র কয়েক মিটার এগোতে পারতাম। ফলে অনেক মাস সময় লেগেছে।’ হিমবাহের ভেতরে ঢুকে দর্শকদের মনে বিস্ময় জাগে। এই সুড়ঙ্গ না থাকলে বিজ্ঞানীদের কাছেও অনেক কিছু গোপন থেকে যেত। ৩০ মিটার উপরে বরফের প্রাচীন স্তরের নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে।
আবহাওয়া ইনস্টিটিউটের টরস্টাইন টরস্টাইন্সসন বলেন, ‘মনে হচ্ছে, ভেতরে আগ্নেয়গিরির ছাই রয়েছে। সম্ভবত ২০১০ সালে এইয়াফিয়াদলাইয়োকুল পাহাড় থেকে। সেটি ইউরোপে বিমান চলাচল বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল।’ উপরে বরফের খোলস প্রায় দিগন্ত পর্যন্ত ছেয়ে রয়েছে। আইসল্যান্ডে ইউরোপের সবচেয়ে বড় হিমবাহগুলি দেখা যায়। গভীরে নেমে দর্শকরা অবাক হয়ে যান। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসে বাঁধা থাকে বলে নয়- তাদের মনে গভীর সম্ভ্রম জাগে বরফ সুড়ঙ্গের অভিনব রূপ দেখে। সূত্র : যুগান্তর