Skip to content

হোটেল ম্যানেজমেন্টে ক্যারিয়ার

হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে শুধু হোটেলেই নয়, হাসপাতাল, এয়ারলাইন্স প্রভৃতি জায়গায় অসংখ্য চাকরির সুযোগ রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি রোজগেরে জীবন শুরু করতে এই ক্যারিয়ারের জুড়ি মেলা ভার।

সম্ভাবনাময় এই পেশার খোঁজখবর নিয়ে লিখেছেন রবি হাসান

‘আথিতেয়তা’ এই পেশার শেষ কথা। বর্তমান যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটেছে, পর্যটন শিল্প বেড়ে চলেছে, আর তার সঙ্গে হোটেল শিল্পও এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। কাজ জানা থাকলে, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, আগ্রহ ও সততা থাকলে, পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলে এই পেশায় চাকরি আসবে মুঠোর মধ্যে।

Hospitality

বিষয়টা ঠিক কী!
একটা হোটেল ঠিকভাবে চালানোর জন্য দরকার প্রচুর পেশাদার কর্মীর। কর্মীর সংখ্যা হোটেলের আয়তনের উপর নির্ভর করলেও পেশাদারিত্বের মাত্রা কিন্তু প্রত্যোকটি জায়গায় উপযুক্ত হওয়া চাই। হোটেল শিল্পের মূলমন্ত্র আতিথেয়তা হলেও একজন পেশাদার হোটেলকর্মীকে কিন্তু হোটেলের ‘এ-টু-জেড’ সবটাই জেনে রাখতে হয়। হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সের শিক্ষার্থীদের যেসব বিষয়ে প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তার মধ্যে রয়েছে—

মানুষের সঙ্গে খুব সহজেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষমতা
হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার
কর্মক্ষেত্রে বিভিন্নরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার উপায়
আত্মবিশ্বাস বাড়ানো
পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট
শৃঙ্খলাবোধ
সৃজনশীলতা

হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি
যে ইন্ডাস্ট্রি তার ক্লায়েন্টদের আতিথেয়তা পরিবেশন করে, তাকে বলে ‘হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি’। এ রকম অসংখ্য শিল্প রয়েছে যাদের মূল পরিষেবা আতিথেয়তা। এর মধ্যে রয়েছে হোটেল, হাসপাতাল, ট্র্যাভেল অ্যান্ড টুরিজম সংস্থা, এয়ারলাইন্স, কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস সেন্টার প্রভৃতি।

এই শিল্পগুলোর সঙ্গে আতিথেয়তা সরাসরি যুক্ত থাকলেও এমন অনেক শিল্প আছে, যেখানে পরোক্ষভাবে হলেও আতিথেয়তার অবশ্যই দরকার হয়।

পাঁচতারা হোটেল
সারা পৃথিবীতে অসংখ্য ফাইভ স্টার বা পাঁচতারা হোটেল রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে যদি একটি মাত্র হোটেলের আয়তনকে বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলেই বুঝা যাবে কী বিপুল পরিমাণ কর্মীর দরকার হয় এরকম একটি হোটেল পরিচালনা করতে।

ফাইভ স্টার হোটেলটি অবশ্যই শহরের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে হতে হবে।
হোটেলে কার পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা থাকবে।
ন্যূনতম ২৫টি ঘর থাকবে।
প্রত্যেকটি ঘরে সংলগ্ন বাথরুম থাকবে।
প্রত্যেকটি ঘরে ২৪ ঘণ্টা গরম-ঠাণ্ডা পানি ও টেলিফোনের ব্যবস্থা থাকবে।
হোটেলের ঘর, লবি, করিডর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হবে।
২৪ ঘণ্টা লিফটের ব্যবস্থা থাকবে।
সুইমিং পুল, কনফারেন্স রুম, ব্যাস্কোয়েট, বুক স্টল, বিউটি পার্লার বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা, লাগেজ রুম, কসমেটিক শপ, এটিএম বুথ এবং একাধিক রেস্তোঁরা ও বার থাকতে হবে।

পড়ার যোগ্যতা
হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়তে হলে একজন শিক্ষার্থীকে মাধ্যামিক, উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় পাস করতে হবে। বয়স হতে হবে ১৮ বছরের মধ্যে। কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সে ছাড় পাওয়া যায়। তবে এর সাথে প্রার্থীর আরও কিছু যোগ্যতা থাকা চাই। যেমন—ভালো ইংরেজি বলার ক্ষমতা থাকা চাই, স্মার্ট এবং চটপটে হওয়া খুব জরুরি।

ক্যারিয়ার হিসেবে কেমন
বিশ্বব্যাপী এখন হোটেল শিল্প খুব দ্রুত উন্নতি করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে যে গ্লোবালাইজেশনের জোয়ার এসেছে, তার ফলেই ফুলে-ফেঁপে উঠছে হোটেল ব্যবসা। গত কয়েক বছরে অর্থনীতির উদারীকরণের ফলে বাংলাদেশেও হোটেল ব্যবসা এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। একটা সময় পর্যন্ত ঢাকাতে দুইটি পাঁচতারকা মানের হোটেল থাকলেও গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার বাইরেও এখন পাঁচতারকা মানের হোটেল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেটের মতো শহরগুলো এদিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। কেবল পাঁচতারকা হোটেলই নয়, এখন বৈশ্বিক অনেক ফাস্ট-ফুড বা রেস্টুরেন্টের চেইন তৈরি হতেও শুরু করেছে। আর এমন সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন মেটাতে দরকার হচ্ছে অনেক পেশাদার এবং দক্ষ কর্মীর। এর জন্য দরকার উপযুক্ত প্রশিক্ষণের। সবচেয়ে বড় কথা, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর মাত্র তিন বছর প্রশিক্ষণ নিয়েই এই খাতে চাকরি পাওয়া যায়। এ ছাড়া কেউ নিজস্ব ব্যবসাও শুরু করতে পারেন। হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাস করে শুধু হোটেলেই নয় বিভিন্ন হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছে প্রচুর চাকরির সুযোগ।

Malaysia-Thailand

কী ধরনের চাকরি পাওয়া যায়
হোটেল এবং অ্যালায়েড ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি
হসপিটালিটি এক্সিকিউটিভ
শেফ
ক্যাটারিং ম্যানেজার/সুপারভাইজার
হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং ফুড ক্র্যাফট ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি
ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে কেবিন ক্রু
বিভিন্ন হোটেল এবং বহুজাতিক সংস্থায় মার্কেটিং এবং সেলস এক্সিকিউটিভ
টুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের ম্যানেজার বা সুপারভাইজার।

ছুটির দিনেও কাজ
হোটেলগুলোতে যখন কেউ খেতে বা থাকতে যান, তখন কিছুক্ষণের জন্য মনে হয় জায়গাটা কী সুন্দর! কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, হোটেলে ছুটি কাটাতে যাওয়া আর সেখানে কাজ করতে যাওয়া কিন্তু এক নয়। হোটেলগুলো যত ‘গ্ল্যামারাস’ জায়গা বলে মনে হয় তার পেছনে হোটেলের কর্মচারীদের কিন্তু প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়। ‘কাজ করতে যাচ্ছি’ এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে। গ্ল্যামার দেখে ছুটে আসার কোনো মানেই হয় না। আর-একটা কথা, হোটেলের কাজ কিন্তু প্রচণ্ড পরিশ্রমের কাজ। একজন কর্মীর কর্তব্যে সামান্য অবহেলাই কিন্তু হোটেলের সুনাম খারাপ করে দিতে পারে। সেদিকটাও ভাবতে হবে। বাঁধাধরা সময় থাকলেও অনেক সময় ওভারটাইম করতে হবে এবং ছুটির দিনগুলোতে সবাই যখন ছুটি কাটাবে তখন একজন হোটেলকর্মীকে সবচেয়ে বেশি কাজ করতে হবে। কারণ, ছুটির সময়েই হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়।

কোথায় পড়বেন?
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, ডিএফও ভবন, ৮৩-৮৮ মহাখালি, ঢাকা।
ইনস্টিটিউট অফ ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট, বাড়ি-৩২০, রোড-১৫ (পুরাতন), ধানমন্ডি, ঢাকা।
বাংলাদেশ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ১৪৭/ডি, গ্রিন রোড, ঢাকা।
ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হসপিটালিটি, হোসাইন প্লাজা, ৩য় তলা, হাউজ -১, রোড-২৮ (পুরাতন), ধানমন্ডি, ঢাকা। সৌজন্যে : ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *