আশিস সৈকত
অনেকদিন ধরে জাতীয় সংসদ ভবনে যাবার পরও মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকার পর অনেকের পথ চিনতে কষ্ট হয়। অনেক এলাকা খুঁজে পেতে অনেক সময় কারো সহায়তা নিতে হয়। প্রত্যাশিত কক্ষ খুঁজতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। হয়তো আবার উল্টো দিকে ঘুরে গিয়ে প্রত্যাশিত সেই অফিস খুঁজে পান। তবে এটা ঠিক যে নির্মাণশৈলীর নাটকীয়তার কারণে অনেক সময় এ ভ্রম হলেও বিরক্ত হন না কেউ। কারণ এত প্রশস্ত এবং আলোকিত করিডোরে হাঁটতে খারাপ লাগে না। বরং অনেকেই মুগ্ধ চোখে মনোরম নির্মাণশৈলী অবলোকন করেন।
জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণশৈলীর নাটকীয়তা এতই মজার যে প্রায় সব দিকই একই রকম মনে হয়। পুরো ঢালাইয়ে করা এ ভবনে কোথাও রং দেওয়া হয়নি। একটু ভিন্ন ধরনের ঢালাইয়ে করা এ ভবনটির চেহারাই ভিন্ন। বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যায়—শুধু দৃষ্টিনন্দনই নয়, এটি অনেক টেকসই ও মজবুত।
শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ভবনের একটি। এত সুন্দর নকশার সংসদ ভবন গোটা দুনিয়াতেই বিরল। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মার্কিন স্থপতি অধ্যাপক লুই আই কান দৃষ্টিনন্দন এ ভবনটির নকশা করেন। ১৯৬১ সালে জাতীয় সংসদ ভবনের জন্য বর্তমান শেরে বাংলা নগরে ২০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৬৪ সালে শুরু হয় এ ভবন নির্মাণের কাজ। শুধু দৃষ্টিনন্দনই নয়, ভবনটি সব সময়ই থাকে আলোয় ভরা। কিন্তু এর মধ্যে এর অদ্ভুত নির্মাণশৈলী অনেক সময়ই নতুন আগন্তুকদের জন্য বিভ্রান্তি তৈরি করে। কারণ রংহীন এ আরসিসি ভবনটির সব পথই দেখে একই রকম মনে হয়। অনেকটা ধাঁধা সৃষ্টি করে অনেকের মধ্যে।
মজার তথ্য হলো, সংসদ ভবনের দরজাই রয়েছে ১ হাজার ৬৩৫টি। ছোট বড় মিলিয়ে এত দরজাবিশিষ্ট একটি ভবন উত্সুক মানুষের সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। ভবনের বিশালত্ব বুঝিয়ে দেয় জাতীয় সংসদের তথা সংসদীয় গণতন্ত্রের বিশালত্বের কথা।
শুরু ১৯৫৯ সালে
পশ্চিম পাকিস্তানের নাথিয়াগলিতে ১৯৫৯ সালের ১২ ও ১৩ জুনে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক গভর্নরদের সম্মেলনে ঢাকায় দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৬১ সালে বর্তমান শেরে বাংলা নগরে ২০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়, বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণের জন্য। এই লক্ষ্যে ১৯৬৪-৬৫ অর্থবছরে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি অধ্যাপক লুই আই কান বর্তমান জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের প্রধান স্থপতি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হেনরি এন উইলকেটস এই কমপ্লেক্সের ডিজাইন সম্পন্ন করেন। হেনরি এন পামবাম এই ভবনের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেন।
২১৫ একর জমির ওপর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেক্স স্থাপিত। এতে সংসদ ভবন, সংসদ সদস্যদের জন্য হোস্টেল, আবাসিক ব্যবস্থা, ক্রিসেন্টলেক, বাগান এবং রাস্তা রয়েছে।
মূল অবকাঠামোর কাজ ১৯৭৫ সালে শেষ হয়। দক্ষিণ প্লাজার কাজ হয় ১৯৮১ সালে। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সংসদ ভবনের বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারিতে বর্তমান সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন।
সংসদ ভবনের ৩টি অংশ
সংসদ ভবনের ৩টি অংশ রয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবন নির্মিত এরিয়া—১ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট আর প্লিন্থ এরিয়া—৮ লাখ ২৩ হাজার বর্গফুট।
সংসদ ভবনে রয়েছে মোট নয়টি ব্লক : ক. সংসদ ব্লক, খ. পশ্চিম ব্লক, গ. উত্তর-পশ্চিম ব্লক, ঘ, উত্তর ব্লক, ঙ. উত্তর-পূর্ব ব্লক, চ. পূর্ব ব্লক, ছ. দক্ষিণ-পূর্ব ব্লক, জ. দক্ষিণ ব্লক, ঝ. দক্ষিণ-পশ্চিম ব্লক।
দক্ষিণ প্লাজায় নির্মিত এরিয়া—৬৫ হাজার বর্গফুট আর প্লিন্থ এরিয়া—২ লাখ ২৩ হাজার বর্গফুট।
এ প্লাজায় আছে—নিয়ন্ত্রণ গেট, ড্রাইভওয়ে, প্রধান যন্ত্রপাতির কক্ষ, গাড়ি রাখার জায়গা, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, গণপূর্ত বিভাগের রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রকৌশলীদের অফিস, যন্ত্রসামগ্রীর গুদাম, খোলা চত্বর, সিঁড়ি এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি যা প্রধান সংসদ ভবনের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে।
প্রেসিডেন্সিয়াল স্কয়ারে নির্মিত এরিয়া—৬৫ হাজার বর্গফুট আর প্লিন্থ এরিয়া—৬৫ হাজার বর্গফুট।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৮৪ সালের জুনে। এতে রাষ্ট্রপতি, স্পীকার, সংসদ নেতা, উপনেতা, ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রীবর্গ, বিরোধীদলীয় নেতা, চীফ হুইপ, হুইপগণ, বিরোধীদলীয় উপনেতা, সংসদ সচিব এবং সচিবালয়ের অফিসের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও তিনটি পার্টির জন্য নিজস্ব অফিসকক্ষ, বাণিজ্যিক ব্যাংক, ডাকঘর, নামাজ ঘর, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং হল, সংসদ গ্রন্থাগার ও বিমান অফিসের ব্যবস্থা রয়েছে। ভবনে রয়েছে ২৪টি লিফ্ট। পুরো ভবনটি কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। সংসদ কক্ষে অধিবেশনের ব্যবস্থা, পর্যায়ক্রমে ইন্টারপ্রিটেশান সিস্টেম (SIS) এবং স্বয়ংক্রিয় ভোট গণনার ব্যবস্থা রয়েছে।
অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদেও জন্য আসন রয়েছে ৩৫৪টি। এর বাইরে ভিআইপি গ্যালারিতে ৫৬, কর্মকর্তাদের জন্য ৪১, সাংবাদিকদের জন্য ৮০ এবং দর্শকদের জন্য ৪৩০টি আসন রয়েছে।
সংসদ ভবনের উচ্চতা ১৫৫ ফুট ৮ ইঞ্চি আর সংসদ কক্ষের উচ্চতা (যেখানে অধিবেশন বসে) ১১২ ফুট। ভবনে মোট সিঁড়ি রয়েছে ৫০টি। এর বাইরে টয়লেট ৩৪০, দরজা ১,৬৩৫টি, জানালা ৩৩৫টি, পার্টিশন ২৮৮টি, গ্লাস শার্টার রয়েছে ৩৫ হাজার ৮৫০ বর্গফুট ও উডেন শার্টার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট
সংসদ ভবনের প্রথম প্রস্তাবিত খরচ ছিল ৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা (১৯৬৫)। তিন দফা সংশোধনের পর তা দাঁড়ায় ১২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
১৯৮৪ সালে এ সংসদ ভবন নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে তেজগাঁও সংসদ ভবনে অধিবেশন বসত। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল এখানেই গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়।
গণপরিষদ থেকে জাতীয় সংসদ
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ১৬৯ জন সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের ৩০০ জন সদস্য অর্থাত্ সর্বমোট ৪৬৯ জন সদস্যের সমন্বয়ে প্রভিশনাল কন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ অর্ডার, ১৯৭২-এর অধীনে বাংলাদেশ গণপরিষদ গঠিত হয়। গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকায় তেজগাঁওস্থ সংসদ ভবনে শুরু হয়। গণপরিষদের প্রথম স্পীকার নির্বাচিত হন শাহ আব্দুল হামিদ এবং ডেপুটি স্পীকার জনাব মুহম্মদুল্লাহ। স্পীকার শাহ আব্দুল হামিদ মৃত্যুবরণ করায় ডেপুটি স্পীকার মুহম্মদুল্লাহ পরবর্তী সময়ে স্পীকার এবং মো. বয়তুল্লাহ ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি। অর্থাত্ প্রথম জাতীয় সংসদে সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১৫ জন। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ঢাকার তেজগাঁওস্থ জাতীয় সংসদ ভবনে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। প্রথম জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন মুহম্মদুল্লাহ এবং ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন মো. বয়তুল্লাহ। পরবর্তী সময়ে জনাব মুহম্মদদুল্লাহ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে আবুদল মালেক উকিল স্পীকার নির্বাচিত হন।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ১৫টি থেকে ৩০টিতে উন্নীত করা হয়। এতে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩০ জনে। ১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন মির্জা গোলাম হাফিজ এবং ডেপুটি স্পীকার ব্যারিস্টার সুলতান আহম্মেদ চৌধুরী। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সাধারণ আসন থেকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত প্রথম মহিলা সদস্য ছিলেন সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ।
১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসনসহ সংসদের সদস্য সংখ্যা ছিল মোট ৩৩০ জন। প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ১০ জুলাই। স্পীকার নির্বাচিত হন সামসুল হুদা চৌধুরী এবং এম কোরবান আলী ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন।
চতুর্থ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। ২৫ এপ্রিল ১৯৮৮ তারিখ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। চতুর্থ জাতীয় সংসদে সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০ জন। সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় চতুর্থ জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল না। চতুর্থ জাতীয় সংসদে সামসুল হুদা চৌধুরী স্পীকার এবং এবং রিয়াজ উদ্দীন আহম্মেদ ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন।
২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ৫ এপ্রিল ১৯৯১ তারিখে সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। পঞ্চম জাতীয় সংসদে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৩০ জন। কারণ মহিলাদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসন সংক্রান্ত আইন প্রণীত হওয়ায় পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পুনরায় ৩০ জন মহিলা সদস্য নির্বাচিত হন। পঞ্চম জাতীয় সংসদের প্রথম স্পীকার নির্বাচিত হন আব্দুর রহমান বিশ্বাস এবং ডেপুটি স্পীকার শেখ রাজ্জাক আলী। পরবর্তীকালে আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় শেখ রাজ্জাক আলী স্পীকার এবং হুমায়ুন খান পন্নী ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯ মার্চ ১৯৯৬। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩৩০টি। শেখ রাজ্জাক আলী ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং এল কে সিদ্দিকী ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন।
সপ্তম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন । সপ্তম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৪ জুলাই ১৯৯৬। সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৩০ জন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্পীকার এবং মো. আবদুল হামিদ এডভোকেট ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন। জনাব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করায় পরবর্তীতে মো. আব্দুল হামিদ এডভোকেট স্পীকার এবং অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন।
অষ্টম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর। অষ্টম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২৮ অক্টোবর। অষ্টম জাতীয় সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০টি। কারণ সংরক্ষিত ৩০টি মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সংসদের শুরুতে কোনো সংরক্ষিত মহিলা আসন ছিল না।
ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমির উদ্দিন সরকার অষ্টম জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং আখতার হামিদ সিদ্দিকী ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন।
তবে অষ্টম সংসদ সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪ পাশের মাধ্যমে সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৩০টি থেকে ৪৫টিতে উন্নীতকরণ করা হয়। এতে সংসদে মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪৫ জন। এই আইন প্রবর্তনকালে অষ্টম সংসদের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এবং অষ্টম সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে শুরু করে ১০ বছর কাল অতিবাহিত হওয়ার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত ৪৫টি আসন কেবল মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তর যোগ্য ভোটের মাধ্যমে সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। নবম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে নবম সংসদে সংবিধান (পঞ্চম সংশোধন) আইন ২০১১ পাশ হয়েছে। এই আইন দ্বারা সংরক্ষিত মহিলা আসন সংখ্যা ৪৫টি থেকে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ৩৫০টি।
জনাব মো. আবদুল হামিদ এডভোকেট নবম জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং শওকত আলী ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে মো. আবদুল হামিদ এডভোকেট রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পীকার নির্বাচিত হন।
দশম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। দশম জাতীয় সংসদের ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পীকার এবং মো. ফজলে রাব্বী মিয়া ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন। সৌজন্যে : ইত্তেফাক