Skip to content

নীলচে পাহাড়ের দেশে

:: মোছাব্বের হোসেন ::

বাসে টিকিট নেই। হোটেলে রুম নেই। নেই নেই শুনতে শুনতে কীভাবে যেন সব জোগাড় হয়ে গেল। আমরা যাব সাজেকে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বারবার বৃষ্টির আভাস দিচ্ছিল। কিন্তু দিন–তারিখ তো আগেই ঠিক করা। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়িতে রওনা দিলাম রাতের বাসে।

গত মাসের ২২ তারিখ। থেকে থেকে বৃষ্টি। বাসও আস্তে আস্তে চলতে থাকল। সকাল সাতটায় আমরা খাগড়াছড়ি বাজারে। টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে নাশতা সেরে নিয়ে আগে থেকে ঠিক করা চান্দের গাড়িতে চেপে বসলাম সাজেকের উদ্দেশে। বাজার পেরিয়ে আসতে আসতে দুই পাশে ছোট–বড় পাহাড় দেখা যেতে লাগল। বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ে কেমন রোমাঞ্চকর এক যাত্রা! বৃষ্টি কখনো বাড়ে, কখনো কমে। বৃষ্টির মধ্যে চান্দের গাড়ির জট লেগে যায়। আরেকবার গাড়ি থামলে চাকার নিচে কাঠ দিতে হয়। কারণ, পাহাড়ে ওঠার সময় গাড়ির ব্রেক গাড়ি থামার জন্য যথেষ্ট নয়। গাড়ি একবার থামলে অন্তত ১০ মিনিট।

এই যাত্রাবিরতির সময় আশপাশের বাসা থেকে ছোট শিশুরা বিক্রি করতে আসে পাহাড়ি পেঁপে, মাল্টা ও কলা। এত সতেজ দেখে না খেয়ে থাকা যায় না। যখন আবার গাড়ি ছুটে চলে, তখন রাস্তার দুই পাশে থাকা স্থানীয় শিশুরা হাত নাড়িয়ে পাহাড়ে স্বাগত জানাতে থাকে। তাদের এই সরলতা মন কাড়ে। যেখানে ১২টার দিকে সাজেকে পৌঁছে যাওয়ার কথা, সেখানে দেড়টাতেও আমরা পথে। মাঝেমধ্যে চা-বিস্কুট খেয়ে নিচ্ছি আর পাহাড়ের বৃষ্টি উপভোগ করছি।

ঠিক দুইটার দিকে আমরা সাজেকের হোটেলে না গিয়ে আগে খাবার রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামাতে বললাম। ক্ষুধার চোটে পেটের ভেতর তখন ইঁদুর বা ছুঁচো ঘুরে বেড়াচ্ছে! প্যাদা টিং টিংয়ে খাবারের কথা আগেই বলা ছিল। পাহাড়ি দেশি মুরগি ভুনা এত অমৃত লাগল যে আগে এত ভালো মুরগির মাংস কবে খেয়েছি মনে পড়ে না!

খাবার শেষ করে হোটেলে যেতেই মন খারাপ হয়ে গেল। কেননা রুম থেকে পাহাড় দেখা যায় না। যেতে হবে ছাদে। ছাদে যেতেই টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে দেখতে থাকলাম পাহাড়। বৃষ্টির সময় অদ্ভুত এক সৌন্দর্য এ সময় না এলে দেখতে পারতাম না। আকাশ মেঘলা বলে কখন যে টুপ করে সূর্যটা ডুবে গেল টেরই পেলাম না। সন্ধ্যায় বৃষ্টি কমে এলে আমরা গেলাম সাজেক হেলিপ্যাডে। ঝালমুড়ি, বাঁশের চোঙে চা খেয়ে নিলাম যে যার মতো। রাতের খাবারে অর্ডার করেছিলাম ব্যাম্বু চিকেন বিরিয়ানি। বাসের ভেতর সবকিছু ঢুকিয়ে দিয়ে রান্না হয় এই খাবার। খেতে মন্দ না। ভিন্নতা আছে।

হোটেলে যেতেই হোটেলের কর্মীরা বললেন, খুব ভোরে উঠতে হবে মেঘ দেখতে গেলে। কিন্তু ভোরে উঠে চোখ কপালে। কোথায় মেঘ! এদিক–সেদিক কত দিকেই গেলাম, মেঘ নেই। স্থানীয় ব্যক্তিরা বললেন, রাতে বাতাস থাকার কারণে মেঘ জমেনি। তবে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোদ উঠলে দেখলাম পরিষ্কার পাহাড়। এটাও সহজে দেখা যায় না মেঘের কারণে। যাক, তাহলে একটা হারিয়ে আরেকটা পেলাম—মনকে এই সান্ত্বনা দিলাম। দুপুরে ব্যাম্বু চিকেনের সঙ্গে ভর্তা–ভাজি খেলাম। বিকেলে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম। পথে যেতে যেতে মনের কোণে ভেসে উঠতে থাকল সাজেকের আরেক সৌন্দর্য। সৌজন্যে: প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *