সিলেটের ‘মিনি কক্সবাজার’ বিভাগঃ পপুলার ডেস্টিনেশন, বাছাইকৃত, বাংলাদেশ July 20, 2015 808 বার দেখা হয়েছে প্রায় সাগরের মতো উত্তাল ঢেউ আঁছড়ে পড়ছে তীরে। ঢেউয়ের সাথে মিতালি করে মাছ ধরতে ব্যস্ত জেলেরা। ঢেউ কাটিয়ে নৌকা নিয়ে ছুঁটছেন মাঝি-মাল্লা। বর্ষায় এমন রূপ দেখা যায় হাকালুকি হাওরে। বর্ষা আর হেমন্ত এ দুই মৌসুমে প্রকৃতির বুকে দুই ধরনের চিত্র ধারণ করে হাকালুকি হাওর। ভরা যৌবনে হাকালুকির স্বচ্ছ জলরাশির শান্তভাব যেন প্রকৃতির বুকে শীতলপাটি বিছিয়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখে বিমোহিত হন পর্যটকরা। স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটেন অনেকে। সবুজ পাহাড় বেষ্টিত স্বচ্ছ জলধারা বিছানাকান্দি, জলার বন রাতারগুল, প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্য ভরা জাফলং-লালাখাল আর সবুজ গালিচায় মোড়ানো চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগের আরেক অনুষঙ্গ হতে পারে ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি হাওর। সিলেটে পর্যটন সম্ভাবনার স্থান ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার তীরবর্তী ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট। এখান থেকে সাগরের ন্যায় বিস্তৃত হাকালুকি হাওরকে এক পলকে দেখা যায়। বর্ষায় হাকালুকির উত্তাল ঢেউয়ের তরঙ্গের গর্জণ যেন আরেক সমুদ্র। সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে এখানে ছুঁটে আসেন পর্যটকরা। হাকালুকির এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ অংশে অবস্থান করতে হয়। এই উপজেলার ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট থেকে উপভোগ করা যায় হাকালুকির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে প্রতিদিন ভীড় জমান পর্যটকরা। এক-দুশ’ টাকায় স্থানীয়রা ছোট ট্রলারে করে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখান হাকালুকির তীরবর্তী এলাকা। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ছয় উপজেলা জুড়ে হাকালুকি হাওরের অবস্থান। প্রায় ১৮ হাজার ১শ’ ১৫ হেক্টর গড় আয়তনের মধ্যে ৩৮ ভাগ মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায়, দুই ভাগ জুড়িতে, ৩০ ভাগ কুলাউড়ায়, ১৫ ভাগ ফেঞ্চুগঞ্জে, ১০ ভাগ গোলাপগঞ্জে ও ৫ ভাগ বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত। উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাঁচটি পাহাড়ি নদী জুড়ি, কন্টিনালা, ফানাই, আন ফানাই ও বরুদল মিলেছে হাকালুকি হাওরে। হেমন্তে এই হাওরের পানি শুকিয়ে চারণ ভূমিতে পরিণত হয়। ওই সময়ে হাকালুকির জলাশয়গুলো থেকে মাছ আহরণ শুরু হয়। সেইসাথে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসে এই হাওরে। আর অভয়ারণ্য গড়তে লাগানো হয়েছে হিজল-করচ গাছের বাগান। যা মুগ্ধ করে পর্যটকদের। হাকালুকির হাওর পাড়ের বাসিন্দা আব্দুল হক জানান, ভরা মৌসুমে হাকালুকি সাগরে পরিণত হয়। এই সময়ে হাকালুকির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরাও এখানে আসেন। পাশাপাশি শীত মৌসুমেও অনেকে আসেন পায়ে হেঁটে হাওরের নিম্নাঞ্চল ঘুরে দেখতে। যাতায়াত : ঢাকার কমলাপুর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩টি ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশে। ট্রেনের ভাড়া প্রকারভেদে ১২০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। ট্রেনে গেলে রাত ৯টা ৫০ মিনিটের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়াই ভালো। সিলেটের আগের স্টেশন মাইজগাঁও নেমে সেখান থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্ট। সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ভাড়া নেবে ১শ’ টাকা। এছাড়া বাসে যেতে চাইলে অনেক বাস আছে। এর মধ্যে শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, ইউনিক উল্লেখযোগ্য। ভোর থেকে শুরু করে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এসব বাস পাবেন। বাসে যেতে সময় লাগবে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা। ননএসি ৩০০/৩৫০ টাকা। এসি ৯০০ টাকা পর্যন্ত। সিলেট কোর্ট পয়েন্ট থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরের দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। যাত্রীবাহী বাসে ভাড়া নেয় ২৫ টাকা, সিএনজি অটোরিকশায় ৩০ টাকা। আর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ১শ’ টাকা রিজার্ভ ভাড়ায় যেতে পারেন ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে। যেখানে মিশে গেছে হাকালুকি হাওরের পশ্চিম তীরের গন্তব্য। থাকবেন কোথায় : সিলেটে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল, মোটেল, কটেজ। পর্যটকরা তাদের পছন্দের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করতে পারেন। সব মিলিয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিলেট ভ্রমণে আসলে ভ্রমণের আনন্দ আরও অনেকগুণ বেড়ে যাবে। 2015-07-20 Dhaka Tourist Club tweet