মেক্সিকোর পিরামিড শহরে বিভাগঃ অ্যাডভেনচার ট্রাভেল, বাছাইকৃত August 29, 2015 249 বার দেখা হয়েছে নুরুন্নবী চৌধুরী গেট দিয়ে ঢুকতেই হঠাৎ পিলে চমকে ওঠার মতো তীব্র গর্জন! আতঙ্কে আমরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি। দিনেদুপুরে এ রকম গর্জন শুনলে কার না পিলে চমকে যায়। আশপাশে যে জঙ্গল, সেটাও বলা যাবে না। একটু পরেই একজন বলে উঠলেন, এ তো জাগুয়ারের গর্জন! এবার আরও অবাক হওয়ার পালা। বাঘ ও সিংহের পর তৃতীয় বৃহত্তম বিড়াল-জাতীয় এ প্রাণীটি বিলুপ্তপ্রায়। আর এই মেক্সিকো এসে কিনা তার ডাক শুনলাম। তবে ভুলটা বুঝতে বেশি সময় লাগল না। গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল আসল ঘটনা। জাগুয়ারসদৃশ ছোট ছোট মূর্তির এক পাশে মুখ লাগিয়ে হাতের বিশেষ সহায়তায় এ ধরনের শব্দ করছেন দোকানিরা। উদ্দেশ্য ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। মেক্সিকো সিটি থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে ‘পিরামিড অব দ্য সান’। পিরামিড দর্শন মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মেক্সিকো সিটিতে আমরা একত্র হই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একদল স্বেচ্ছাসেবক। এর ফাঁকেই একদিন মেক্সিকো সিটি থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে ‘পিরামিড অব দ্য সান’ এবং ‘পিরামিড অব দ্য মুন’ দেখার উদ্দেশ্যে বের হলাম। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে আমি এবং নাহিদ সুলতান যোগ দিয়েছিলাম। হোটেল থেকেই আমরা একটি পর্যটন সংস্থার সহায়তায় দুটি গাড়িতে করে ২০ জনের দুটি দল রওনা হই। আমাদের দুই গাইড পথে পথে নানা বিষয় যেমন দেখাচ্ছেন, তেমনি তার বিস্তারিত বর্ণনাও জানিয়ে দিচ্ছেন। পিরামিড অব মুন সান এবং মুন পিরামিড দুটির অবস্থান প্রায় কাছাকাছি। বিশাল এলাকা নিয়ে একটি অবস্থানের এক প্রান্তে সান অন্য প্রান্তে মুন। আনুমানিক ১০০ থেকে ২০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পিরামিড অব সান ও পিরামিড অব মুন তৈরি হয়। সে সময়ে ‘আজটেক’দের তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় বিশাল এ পিরামিডগুলো। পিরামিডগুলো গড়ে উঠেছে সমাধির ওপরে। দুই পিরামিডের আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিরামিড এবং স্থাপনা। পিরামিড অব সানের উচ্চতা ২১৬ ফুট। পিরামিড অব মুনের পূর্ব-পশ্চিম অংশের দৈর্ঘ্য ৫০০ ফুট, উত্তর-দক্ষিণ অংশের দৈর্ঘ্য ৪৩৩ ফুট এবং উচ্চতা প্রায় ১৪০ ফুট। মিসর পিরামিডের দেশ হলেও বিশ্বের পিরামিডগুলোর মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ মেক্সিকোর ‘পিরামিড অব সান’ এবং ‘পিরামিড অব মুন।’ দুটিই বর্তমানে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির তত্ত্বাবধানে আছে। চাঁদ ও সূর্য পিরামিড দুটি দল দুই দিক দিয়ে প্রবেশ করে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখি আর এগিয়ে যাই পিরামিডগুলোর দিকে। প্রথমে আমাদের দলসহ আমরা যাই পিরামিড অব মুন দেখতে। হেঁটে হেঁটে যখন সানের কাছে পৌঁছাই, তখন সূর্য একেবারে মাথার ওপরে। এবার পিরামিডের শীর্ষে ওঠার পালা। সিঁড়ির মাঝখানে একটি শক্ত পাইপ দেওয়া আছে, যার সাহায্যে ওপরে ওঠা যায়। দলের অনেকেই ততক্ষণে দেরি না করে পাইপের সাহায্য ছাড়াই উঠতে লাগলেন। বাকিরাও ধীরে ধীরে ওঠা শুরু করলাম। প্রায় ২০০ সিঁড়ি শেষ করে আমরা যখন শীর্ষস্থানের এক ধাপ নিচে তখন আর ওপরে ওঠার শক্তি নেই। আর তাই যাত্রাবিরতি এবং ছবি তোলা শুরু। দলের বাকি সদস্যরা ততক্ষণে হাঁফিয়ে বিশ্রাম নিতে ব্যস্ত। চারপাশ দেখে আবার নামা শুরু হলো। ওঠার চেয়ে নামার বিষয়টা তুলনামূলক সহজ হলেও ভয় লাগছিল। কোনোভাবে পা পিছলে গেলেই ঘটে যাবে বড় দুর্ঘটনা। নিচে নেমে আসার পর আবার শোনা গেল জাগুয়ারের গর্জন। ততক্ষণে চারপাশ থেকে গর্জন শুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা। দল বেঁধে এবার আমাদের গন্তব্য ‘পিরামিড অব সান’। সানের সামনে গিয়ে দলের অনেক সদস্যের মতো আমার চক্ষু চড়কগাছ! বিশাল উঁচু এ পিরামিডের শীর্ষে কীভাবে উঠব, সেটাই তখন একমাত্র চিন্তা। তবে বেশি চিন্তা না করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যতটুকু ওপরে ওঠা যায় উঠব। শুরু হলো যাত্রা। এখানেও মুনের মতো ব্যবস্থা আছে ওপরে ওঠার। সূর্যের তাপ ততক্ষণে আরও অনেক বেড়েছে। সান যেহেতু অনেক লম্বা তাই সিঁড়ির বিভিন্ন ধাপ শেষে বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে। মোটামুটি ২৫০টি ধাপে উঠে ক্লান্ত-শ্রান্ত আমি এবং আরও কয়েকজন সঙ্গী মিলে বসে পড়লাম পাথরের ওপর। ঘাস আর পাথরের একধরনের বিছানাই বলা চলে। সঙ্গী নাহিদ বলে উঠল, ‘এত দূর যেহেতু চলে এসেছি, একেবারে শীর্ষে উঠতেই হবে।’ অন্যরাও মাথা নাড়িয়ে একমত হলো। আশপাশে চোখে পড়বে এমন ছোট–বড় আরও অনেক পিরামিড পাঁচ শতাধিক সিঁড়ি বেয়ে একেবারে পিরামিডের শীর্ষে ওঠার পর চারপাশে তাকিয়ে মনটা ভরে গেল। মেক্সিকোর চারপাশ ঘিরে বড় বড় পাহাড়। হোটেলের ২০ তলা থেকেই অবশ্য পাহাড় চোখে পড়ছিল। তবে এবার পিরামিড অব সানের শীর্ষ থেকে চারপাশের সবকিছু দেখতে দারুণ লাগছিল। সানের শীর্ষে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় পাথর বসিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ওপরে ওঠার পর সেখানেই কেউ বসে বসে বিশ্রামে ব্যস্ত তো কেউ ছবি তোলায় ব্যস্ত। সেলফি তোলাতেও ব্যস্ত তরুণ-তরুণীর দল। পিরামিডের পিঠে বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় পাথর আছে, যাতে পা দিয়ে দিয়েও ওপরে ওঠার ব্যবস্থা আছে। তবে সেটা বেশ বিপজ্জনক। প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি ছিলাম সানের শীর্ষে। তারপর আবার নিচে নামার পালা। যদি যাওয়ার সুযোগ আসে বাংলাদেশে মেক্সিকোর দূতাবাস নেই। তাই মেক্সিকো যেতে চাইলে ভারত থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে অথবা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা লাগবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা থাকলে মেক্সিকোর ভিসার প্রয়োজন নেই। মেক্সিকো সিটি থেকে একটু দূরে পিরামিডগুলোর অবস্থান। শহর থেকে ট্যাক্সিক্যাব কিংবা হোটেল থেকে টুর বাসে পিরামিড দেখে আসা যাবে। ভালো হয় পর্যটন সংস্থার সহায়তা নিলে। ৪৫ মেক্সিকান ডলারে এই দুটি পিরামিডসহ আশপাশে একাধিক স্থাপনা দেখা যাবে। দীর্ঘ এলাকাজুড়ে পিরামিড অব সান ও পিরামিড অব মুন ছাড়াও নানা ধরনের ছোট ছোট স্থাপনা রয়েছে। ভোরে বের হলে বিকেল নাগাদ পুরো এলাকা ঘুরে দেখা সম্ভব। সূত্র: দ্য মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, ব্রিটানিকা। সৌজন্যে : প্রথম আলো 2015-08-29 Dhaka Tourist Club tweet