জল-জঙ্গলের অপরূপ রাতারগুল বিভাগঃ পপুলার ডেস্টিনেশন, বাছাইকৃত, বাংলাদেশ October 30, 2015 179 বার দেখা হয়েছে শাহ দিদার আলম নবেল মাথার ওপর সবুজ ছাউনি, নিচে শান্ত জলরাশি। স্বচ্ছ জলে গাছের ছায়া পড়ে পানির নিচে ফুটে ওঠে আরেক বনের প্রতিচ্ছবি। নৌকা থেকে হাত বাড়ালেই নাগাল পাওয়া যায় হিজল-কড়চের মগডাল। গাছের ডালে ডালে পাখিদের কলতান। কোনোটিতে একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে কানাবগি, আবার কোনোটিতে ধ্যানমগ্ন পানকৌড়ি। বনের নীরবতা ভেঙে হঠাৎ এগাছ থেকে ওগাছ লাফিয়ে বেড়ায় কাঠবিড়ালি। আর জলের মাঝে ডুবোখেলায় ব্যস্ত বালিহাঁস, সরালিসহ নানা জাতের পাখি। পাঠক ভাবছেন এটা হয়তো সুন্দরবনের সৌন্দর্যের বর্ণনা করছি। হ্যাঁ, বলছিলাম সুন্দরবনেরই কথা। তবে এ সুন্দরবন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবন নয়, এটি সুন্দরবনখ্যাত সিলেটের রাতারগুল। এশিয়া মহাদেশের ২২টি জলাবনের (সোয়াম্প ফরেস্ট) মধ্যে অন্যতম এটি। ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রকৃতিই যাদের বেশি টানে তারা ইচ্ছা করলে একবার ঘুরে আসতে পারেন জল-জঙ্গলের অপরূপ রাতারগুল। কী আছে রাতারগুল : সাধারণত বর্ষা মৌসুমে রাতারগুল তার রূপ-লাবণ্য মেলে ধরে। জল আর জঙ্গলের অপূর্ব মিশেলে আলাদা সৌন্দর্য তৈরি হয় এ বনে। নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায় পুরো জঙ্গলে। ঘন বনে বিরাজ করে নিস্তব্দতা। মাঝে মধ্যে সেই নিস্তব্দতা ভাঙার চেষ্টা করে ঝিঁঝিঁ পোকা বা গাছের ডালে ঝুলে থাকা দুষ্টু বানর। শরতের বিকালে এই বন ঘুরতে গেলে রাতারগুলের বর্ষার সেই রূপ যৌবনের দেখা হয়তো মিলবে না, তবে হতাশও হতে হবে না পর্যটকদের। এ সময় রাতারগুল তার রূপ বদলায়। প্রস্তুতি নিতে থাকে শীতের। ধীরে ধীরে জেগে উঠতে থাকে পানিতে নিমজ্জিত বন। পানি নামতে শুরু করে বনের ভিতরের লেকগুলোতে। বর্ষায় যে ঘন বন নৌকা নিয়ে ঘুরতে হতো শরতে সেই বন দেখা যাবে পায়ে হেঁটে। ইচ্ছা করলে নৌকা নিয়ে লেক ধরে ভিতরে যাওয়া যাবে বনের। ঘুরতে ঘুরতে গভীর বনে ঢুকতে পারলে দেখা যেতে পারে নানা জাতের পশু-পাখি। তবে শীত পড়তে শুরু করায় এখন অতিথি পাখিদেরও দেখা মিলে রাতারগুলের লেকে। বনের ভিতর দাপিয়ে বেড়ায় মেছোবাঘ, কাঠবিড়ালি, বানর, ভোদড়, বনবিড়াল, বেজি, শেয়ালসহ নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী। ভাগ্য ভালো হলে দেখা মিলতে পারে এগুলোরও। তবে কোনোভাবেই এসব প্রাণীকে বিরক্ত করা যাবে না। আর প্রকৃতি যেসব বৃক্ষরাজি দিয়ে এই বন সাজিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে জারুল, করচ, কদম, বরুণ, পিটালি, হিজল, অর্জুন, জালি বেত ও মূর্তাসহ জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। রাতারগুলের অবস্থান ও আয়তন : সিলেট নগরী থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে রাতারগুলের অবস্থান। অনিন্দ্যসুন্দর বিশাল এই বনের গাছ-গাছালির বেশির ভাগ অংশই বছরের সাত মাস থাকে পানির নিচে। বড় গাছের প্রায় ৮০ শতাংশ ডুবে যায় পানির নিচে। ১৯৭৩ সালে রাতারগুলকে বন্যপ্রাণীদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাতারগুল ‘জলার বন’র আয়তন প্রায় ৩৩১ একর। যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে সিলেট আসতে পারেন। সিলেট থেকে মাইক্রোবাস বা সিএনজি অটোরিকশায় যেতে হবে গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নের রাতারগুল গ্রাম অথবা চৌরাঙ্গি এলাকায়। এ ছাড়া সিলেট সদর উপজেলাধীন খাদিমনগর ইউনিয়নের মোটরঘাট এলাকা পর্যন্তও যাওয়া যাবে সড়কপথে। সেসব স্থান থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে যেতে হবে রাতারগুল বনে। সিলেট নগরী থেকে রাতারগুল গ্রাম, চৌরাঙ্গি বা মোটরঘাট পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া পড়বে ২৭০০-৩০০০ টাকা। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া পাওয়া যাবে ১৬০০-২০০০ টাকায়। আর বন ঘুরে দেখতে নৌকা ভাড়া পড়বে ৮০০-১০০০ টাকা। কোথায় থাকবেন ও খাবেন : রাতারগুলে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। খাবারের জন্যও ভালো মানের কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। তাই থাকার ব্যবস্থা করে নিতে হবে সিলেট শহরের হোটেলে। আর যাওয়ার সময় প্যাকেট খাবার নিয়ে যেতে হবে। তবে পরিবেশ রক্ষায় সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিকের বোতল বা পলিথিনের প্যাকেট বনের ভিতর বা লেকে ফেলা যাবে না। বনের ভিতর থেকে বের হয়ে উপযুক্ত স্থানেই এগুলো ফেলা উচিত। তবে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় এ দুই দিন সিলেটে ভালোমানের হোটেলগুলোতে রুম সংকট দেখা দেয়। তাই সিলেটে আসার আগে অনলাইনে হোটেল বুকিং দিয়ে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আশপাশের দর্শনীয় স্থান : সিলেট-তামাবিল সড়ক দিয়ে হরিপুর হয়ে রাতারগুল গেলে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ঢু মারলে দেখা যাবে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, খাদিম চা বাগান, হজরত শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজার, সিলেট গ্যাস ফিল্ড। আর সিলেট-সালুটিকর রাস্তা দিয়ে রাতারগুল গেলে পথে দেখা যাবে বাংলাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া, সিলেট ক্যাডেট কলেজ, পর্যটন মোটেল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেজৈন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন 2015-10-30 Dhaka Tourist Club tweet