মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান
মালয়েশিয়া ঘুরতে গিয়েছেন কিন্তু মসজিদ নেগারায় যাননি বাংলাদেশে এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। বিমান থেকে মসজিদটিকে দেখলে মনে হয় বিশাল আকারের একটি ছাতা। আবার সড়ক পথ দিয়ে দেখলে মনে হবে একটি বাগানবাড়ি। আর ভেতরে ঢুকলে মনে হবে ইসলামি জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত এই মসজিদটি সে দেশের জাতীয় মসজিদ।
দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি প্রায় ১৩ একর বাগানযুক্ত জায়গায় অবস্থিত। এখানে এক সাথে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদটির বিশেষত্ব হচ্ছে এর ছাদ ১৬ কোণাবিশিষ্ট তারকার আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। এর কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে অনেকটা ছাতার মতো করে। ফলে বিমান থেকে দেখলে এটিকে বিশাল আকারের একটি ছাতা মনে হতে পারে।
মসজিদটির রয়েছে একটিমাত্র মিনার। এর উচ্চতা ৭৩ মিটার বা প্রায় সোয়া ২০০ ফুট।
নির্মাণের প্রথম দিকে মসজিদটির ছাদের রঙ ছিল গোলাপি। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কারের সময় এর ছাদে নীল রঙয়ের টাইলস যুক্ত করা হয়।
মসজিদটির এক পাশে সাত কোণার তারকাসদৃশ স্থাপত্যকর্ম রয়েছে। এটি মূলত মালয়েশিয়ার কিছু বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতার কবর।
মসজিদটির নকশা তৈরি করেছিল মালয়েশিয়ার পাবলিক ওয়ার্কস বিভাগের তিন সদস্যের একটি দল। এই তিন সদস্য হলেন মার্কিন স্থপতি হোয়ার্ড আশলে, মালয়েশিয়ার স্থপতি হাসিম আলবক্রি ও স্থপতি বাহারুদ্দিন কাসিম।
মসজিদটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল মালয়েশিয়ান এক কোটি রিঙ্গিত।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুলাই ব্রিটিশ শাসনাধীন মালয়েশিয়ার ফেডারেল এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল একটি জাতীয় মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এর এক মাস পরে অর্থাৎ ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ আগস্ট ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয় মালয়েশিয়া। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মার্চ এক সভায় মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আব্দুর রহমানের নামানুসারে মসজিদটির নাম ‘মসজিদ টুঙ্কু আব্দুর রহমান পুত্র আলহাজ’ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু টুঙ্কু আব্দুর রহমান এই প্রস্তাব নাকচ করে ‘মসজিদ নেগারা’ নাম দেয়ার প্রস্তাব দেন। পরে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। নেগারা শব্দের অর্থ হচ্ছে জাতীয় বা কেন্দ্রীয়।
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। একই বছর আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদটির উদ্বোধন করা হয়। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটির সংস্কার করা হয়।
মসজিদটি মালয়েশিয়ার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ও ইসলাম চর্চা কেন্দ্র।