Skip to content

বান্দুরা ভাঙ্গা মসজিদ গায়েবীভাবে নির্মিত হয়নি

Bandura-Vanga-Mosque

মসজিদের প্রবেশ পথ।

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নতুন বান্দুরা শাহী মসজিদ বা ভাঙ্গা মসজিদের। ৫০ শতাংশ জমির উপর তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি এবং দুই শতাংশ জমির উপর রয়েছে মূল ভবনটি। প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য লোক লোক আসে মসজিদটিতে নামাজ পড়তে। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে নবাবগঞ্জসহ এর পার্শ্ববর্তী দোহার, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ আশেপাশের কয়েকটি থানার নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে মসজিদটিতে।

পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের নামাজের জন্য রয়েছে আলাদা সুব্যবস্থা।

Bandura-Vanga-Mosque2

অল্প কয়েক দিন হলো শেষ হয়েছে মসজিদের মিনার নির্মাণের কাজ।

ভাঙ্গা মসজিদটি নিয়ে কল্পকাহিনী রয়েছে। অনেকে প্রচার করেন ভাঙ্গা মসজিদটি গায়েবী মসজিদ। এর মূল ভবনটি মাটির নিচ থেকে উঠেছে।

তবে এ প্রচারের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ধারনা করা হচ্ছে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে নির্মিত। সেই হিসেবে প্রায় ৪শ’ বছরের পুরোনো মসজিদটি নবাবগঞ্জের কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১৬৫ ফুট উঁচু একটি মিনার। মিনারটি ঢাকা দক্ষিণের সবচেয়ে বড় মিনার বলে জানা যায়।

স্থানীয়দের ধারনা, ১৬১০ সালে ভারত বর্ষের মোঘল বংশের দিল্লীর সম্রাট জাহাঙ্গীরের সুবেদার ছিলেন ইসলাম খান চিশতি। তিনি বিভিন্ন প্রয়োজনে দিল্লী হতে যমুনা নদী দিয়ে নৌবিহার নিয়ে পাবনা জেলা হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে মানিকগঞ্জ হয়ে ইছামতি নদী দিয়ে ঢাকা যাতায়াত করতেন। সেই সময় রাত যাপন ও ইবাদত করার জন্য আনুমানিক ১৬১৫ সালে নদীর পাশেই মসজিদটি নির্মাণ করেন তিনি।

কালের পরিবর্তনে ইছামতি নদী ভাঙতে ভাঙতে উত্তর দিকে চলে যায়। তখন মসজিদের পাশ্ববর্তী কোনো বসতি ছিলো না। পুরো এলাকাই ছিলো বনাঞ্চল।

১৮৮০ সালে হিন্দু জমিদারেরা এসব বনাঞ্চলের দখল নেন। তখন ওইখানে হিন্দুরা বসতি স্থাপনের জন্য বনাঞ্চল কাটা শুরু করেন। বন কাটার সময় হঠাৎ এই মসজিদটি দেখতে পান তারা। যার উপরের কিছু অংশ ভাঙা ছিল। তখন থেকেই মসজিদটির নাম হয় ভাঙা মসজিদ। ওই সময়ে সেখানে মসজিদ নির্মাণে বিভিন্ন সরঞ্জমাও পাওয়া গিয়েছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে সেগুলো হারিয়ে গেছে।

পরবর্তীতে মসজিদের দেখাশুনার জন্য দায়িত্ব পালন করেন স্থানীয় আলফু ফকির, দুদু মীর, আবেদালী মীর, গোপাল মাদবর, মৈজদ্দিন সিকদার, গহের আলী খন্দকারসহ স্থানীয়রা।

সেই সময় আবু মোল্লাকে মসজিদের মোতোয়াল্লি নিযুক্ত করা হয়। সিএস রেকর্ডে মসজিদের পক্ষে তার নামই রয়েছে।

১৯৪৫ সালে স্থানীয় আবেদ আলী নিজ অর্থায়নে মসজিদটির কিছু অংশ সংস্কার করেন। তখন মসজিদের সেবায়াত হিসেবে দুখাই বেপারীকে নিয়োগ দেয়া হয়।

১৯৬০ সালে নতুন বান্দুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন আবজাল হোসেন নামে এক ধর্মপ্রাণ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি গ্রামবাসীকে নিয়ে ভাঙা মসজিদটির কিছু মেরামত এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করেন। কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয় ডা. আলমাছ উদ্দিনকে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মকবুল বেপারী ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে কদম আলীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

Bandura-Vanga-Mosque3

মসজিদের সামনে ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজুর রহমান ও ট্রাভেলার আব্দুল মাজেদ।

২০০১ সালে মীর সফিউদ্দিন ও জনাবালী সিকদারকে উপদেষ্টা হিসেবে রেখে খন্দকার ফুরহাদ হোসেনকে সভাপতি, মতিয়ার রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ও ফজলুর রহমানকে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটি মসজিদ প্রাঙ্গনে একটি মিনার নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়। প্রাথমিকভাবে ১৪টি পিলার নির্মাণ করা হয়। তখন ব্যয় হয়েছিলো প্রায় সাত লাখ টাকা। কিছুদিন কাজ করার পর মিস্ত্রী ও আনুসাঙ্গিক অসুবিধার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১১ সালের ৪ মার্চ আবার মিনারের কাজ শুরু হয়। ১৬৫ ফুট উঁচু মিনারটির কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে। নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। তবে একাজে সরকারি কোনো সহায়তা নেয়া হয়নি। মসজিদে আগত অতিথিদের অনুদানেই মিনারটি নির্মিত হয়েছে। মসজিদ কমিটির সদস্যদের দাবি, একাজে এলাকাবাসীর কাছ থেকেও কোনো চাঁদা উঠানো হয়নি।

এ ব্যাপারে মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা জানান, মসজিদে আগত মুসল্লিদের দানে মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। সেই টাকা দিয়েই মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতি শুক্রবার নামাজ শেষে উপস্থিত সবাইকে জানানো হয়।

মসজিদের ইমাম বলেন, প্রতি শুক্রবার কয়েক হাজার মুসুল্লি আসেন এই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে। আমরা তাদের যথাসাধ্য সহযোগিতার চেষ্টা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *